আবারো ষড়যন্ত্রের কবলে বাংলাদেশের ক্রিকেট!
ডেস্ক রিপোর্ট :: নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৮ রানের স্বস্তির জয় দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু স্বস্তির জয়ের পরই নামে অস্বস্তি। দলের অন্যতম সেরা দুই বোলার তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানির বোলিং নিয়ে প্রশ্ন তোলেন দুই অনফিল্ড আম্পায়ার এস রবি এবং রড টাকার। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন এই সময়ই কেন তারা অভিযোগ তুললেন এ নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।
কয়েকদিন আগেই টাইগারদের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে স্থিতিশীল সময়ে অস্ট্রেলিয়া নিরাপত্তার অজুহাত দিয়ে আসেনি বাংলাদেশে। এবার ঠিক বিশ্বকাপের আগেই ছন্দে থাকা বাংলাদেশের সেরা দুই বোলার তাসকিন-সানির বোলিং অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ হলো।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আইসিসি তাসকিন ও সানির বোলিং নিয়ে সন্দেহের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়। ‘প্রত্যেকের ক্ষেত্রে আইসিসির আলাদা আলাদা পর্যবেক্ষণ থাকবে এবং ম্যাচ অফিসিয়ালের রিপোর্ট প্রাপ্তির এক সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যেকের সেই পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট পূর্ণ রূপ পাবে। সবকিছু বিবেচনা করেই এটি দেখা হবে।’
এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে অনেকেই অনেক রকম মতবাদ দিচ্ছেন। বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার থেকে শুরু করে কোচ হাতুরুসিংহে পর্যন্ত আইসিসির এ রিপোর্টের ‘সময়’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশি কোচ বলেন, ‘আমি তাদের বোলিংয়ে তেমন কিছু দেখছি না। তবে বড় প্রশ্ন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার সময় নিয়ে। গত ১২ মাস ধরেই তারা এভাবে বোলিং করে আসছে।’
বাংলাদেশের দলের সাবেক ক্রিকেট তারকা জাভেদ ওমর বেলিম গুল্লুও আইসিসির এমন সিদ্ধান্তে বিস্মিত। এ বিষয়ে জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি এটাকে সরাসরি ষড়যন্ত্র বলবো না। তবে এ ধরণের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। বিসিবিকে এগিয়ে আসতে হবে আইনি প্রক্রিয়ায়। আর দেখতে হবে ক্রিকেটের আইনে কি আছে।’ গুল্লুর মত আরও অনেক সাবেক তারকাই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
দুই দিন আগেই এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। এর আগে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে বিশ্বকাপ খেলেছে টাইগাররা। সেখানে ধারাবাহিকভাবেই দুর্দান্ত বোলিং করেছেন তাসকিন। বিশেষ করে ভারতের বিপক্ষে তাসকিন যেন একটু বেশি জ্বলে ওঠেন। অভিষেকেই ভারতের বিপক্ষে পেয়েছেন পাঁচ উইকেট। এরপর বিশ্বকাপের সেই বিতর্কিত ম্যাচেও পেয়েছিলেন তিনটি উইকেট। ঘরের মাঠে ভারত বধের নায়ক মুস্তাফিজ হলেও সেখানেও তাসকিন ছিলেন উজ্জ্বল।
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে তাদের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন আইসিসির দুই অনফিল্ড আম্পায়ার এস রবি এবং রড টাকার। অথচ এই সর্বশেষ ভারত-বাংলাদেশ সিরিজে অনফিল্ড আম্পায়ার ছিলেন রড টাকার। এমনকি গতকালের ম্যাচ রেফারি এন্ডি পেক্র্যাফটও ছিলেন তখন ম্যাচ রেফারির ভূমিকায়। তখন এই বোলারদের কিছুই বলেননি, তবে এখন কেন?
বোলারদের বোলিং নিয়ে সন্দেহ প্রকাশের ক্ষেত্রে আইসিসির নিয়মটা একটু বিচিত্রই। কোন সিরিজে কোন খেলোয়াড়ের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হলে তা ১৪ দিনের মধ্যে বোলিং পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়। কিন্তু যদি কোন টুর্নামেন্টে প্রশ্নবিদ্ধ হয় তবে তাকে ৭ দিনের মধ্যেই পরীক্ষায় নামতে হয়।
বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ তাসকিনদের বোলিং নিয়ে সন্দেহ করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী ৭ দিন অর্থাৎ ১৬ মার্চের মধ্যেই চেন্নাইয়ের ল্যাবে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে তাদের। এর ফলাফল প্রকাশ হবে পরের ৭ দিনের মধ্যেই। অর্থাৎ ২৩ মার্চের মধ্যে। আর গ্রুপ পর্ব পার হলে সেদিনই ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ।
অর্থাৎ যদি তাসকিন নিষিদ্ধ হন তাহলে সেই ম্যাচে তিনি খেলতে পারছেন না। আর যদিও পার হন তাহলেও তার মানসিক অবস্থা কতটা খেলার উপযোগী থাকবে তা প্রশ্ন থেকেই যায়। যতই পেশাদার খেলোয়াড় হোক না কেন বয়সটা যে মাত্র ২০। অনেকেই এর মধ্যে বিশেষ একটা মহলের ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজে পাচ্ছেন। সবার মনেই প্রশ্ন, সাম্প্রতিক সময়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করা বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের ধারাবাহিক উন্নতিকেই কি হুমকি মানছেন তারা?
এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে চলছে জোড় গুঞ্জন। কোন বিশেষ মহলের হাত নেই তো? অনেকেই বলেছেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের ঠিক আগেই বোলিং প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল তখনকার সময়ের ভয়ংকর বোলার সাঈদ আজমল, মোহাম্মদ হাফিজদের বোলিং।