সিলেট সার্কিট হাউসে আনঅফিসিয়াল মেস-সন্দেহের তির বাইরের কেউ
ডেস্ক রির্পোট :: যেদিন আগুন লাগে, সেদিন দুপুরে সিলেট সার্কিট হাউসে প্রধান বিচারপতি ও চারজন মন্ত্রীর সফরসঙ্গী এক শ জনের রান্না করা হয়েছিল। সার্কিট হাউসে কয়েকজন কর্মকর্তার জন্য আনঅফিসিয়াল একটি মেস চালু রয়েছে। বাইরের কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বা কারো গাফিলতিতে ভিভিআইপি দুটি কক্ষে আগুন লেগেছিল কিনা তা নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সার্কিট হাউসে অঘোষিত মেসে নিয়মিত ২০ জন লোকের খাবার রান্না করা হয়। ভিআইপি অতিথি ছাড়া, মূল বাবুর্চির বাইরে এই মেস ঘিরে নিয়মিত রান্নাবান্না ও পার্টি চলে আসছে। ভিভিআইপি কক্ষে আগুনের নেপথ্যে মেসে যাতায়াতকারী কোনো আগুন্তুক অথবা ওই দিন আগত ১০০ জনের কেউ কিনা সেদিকেই সন্দেহের তির তদন্ত সংশ্লিষ্টদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট সার্কিট হাউসের মূল বাবুর্চি মতিন মিয়া। কিন্তু তিনি ভিআইপি অতিথি এলে রান্নার নির্দেশ পান। নিয়ম হচ্ছে, যে সংস্থা বা বিভাগের অতিথি আসবেন, সেই সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা কাঁচাবাজার করে দেন। বাবুর্চি মতিন শুধু রান্না করেন। মতিন মিয়া র্দীর্ঘদিন ধরেই সে দায়িত্বই পালন করে আসছেন। কিন্তু তার বাইরেও একজন অঘোষিত বাবুর্চি আছেন। তিনি হারুন মিয়া; মতিন মিয়ার সহকারী। সার্কিট হাউসের ভিভিআইপি ভবনের পাশেই কর্মকর্তা ভবন। সেই ভবনের নিচের রান্নাঘরে এখন নিয়মিত ২০ জনের রান্না করেন এই হারুন মিয়া। এদের মধ্যে হয়তো ৭-৮ জন কর্মকর্তা, অন্যরা কারা-এই প্রশ্ন তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ।
নাম না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বন্দরবাজার এলাকার একাধিক দোকান থেকে নিয়মিত বাজার করেন বাবুর্চি হারুন। যারা থাকেন, তারাই হারুনকে টাকা দিয়ে বাজারে পাঠান। হারুন বকশিশ পেয়ে বাজার থেকে শুরু করে রান্না করে দেন। সার্কিট হাউসের কর্মকর্তা ভবনের ৩য় তলার রুমগুলোতে প্রায়ই হারুনের রান্না করা খাবারে নিয়মিত পার্টি হয়ে থাকে। সূত্র জানায়, জন্মদিন পালন, কমকর্তাদের স্বজন, বন্ধুবান্ধব মিলে পার্টি দেওয়া হয়ে থাকে।
রান্নাঘরের একটি সূত্র জানিয়েছে, সার্কিট হাউসে দুটি রান্নাঘর। ভিভিআইপি কক্ষে একটি ও কমকর্তা ভবনে একটি। টুকটাক রান্না করার জন্য ভিভিআইপি রান্নাঘর ব্যবহৃত হয়। মূল রান্নাঘরই হচ্ছে কর্মকর্তা ভবনের রান্নাঘর। যে-দিন বিচারপতি সিলেটে এসেছিলেন, সে-দিন আগের রাতেই কর্মকর্তা ভবনের ওই রান্নাঘরে এক শ জনের রান্না করেন মতিন মিয়া। কাঁচাবাজার করে দেওয়া হয়েছিল সিলেট জজ কোর্টের পক্ষ থেকে। কিন্তু ওই দিন সিলেটে চার মন্ত্রীও সফরে ছিলেন। তাই দুপুরে অনেকে খেতে এসেছিলেন সার্কিট হাউসে। ঘটনার দিন যেহেতু অসংখ্য মানুষ এসেছিলেন, এদের কারো সিগারেটের টুকরো, ম্যাচের কাঠি থেকে আগুন লাগল কিনা? লেগে থাকলে তা ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত ? ঘটনার পেছনে বিচারপতিকে ভয় দেখানো কাজ করেছে কিনা ? এসব প্রশ্ন আর সন্দেহ নিয়েই তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে তদন্ত কমিটি।
সার্কিট হাউসের প্রধান বাবুর্চি মতিন মিয়া বলেন, কেবল ভিভিআইপি গেস্ট এলেই আমি রান্না করি। এসময় আমাকে হেল্প করে হারুন মিয়া। আমি বেতনভুক্ত, সে কোনো বেতন পায় না।
জানতে চাইলে বাবুর্চি হারুন মিয়া বলেন, কর্মকর্তা ভবনে ৬-৭ জন কর্মকর্তা থাকেন, তাদের রান্না আমি করি। তারা সামান্য বকশিশ দেন।
নিয়মিত রান্না ও পার্টির বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসনের নাজির ফজলুল হক বলেন, আসলে ওই ভবনে (কর্মকর্তা ভবন) কয়েকজন কর্মকর্তা থাকেন, তাই আনঅফিসিয়ালি হারুন রান্না করে খাওয়ায়। আমি ব্যস্ত আছি, পরে কথা বলব।
সার্কিট হাউস সূত্র জানায়, গত দুদিন ধরে তদন্ত কমিটি সার্কিট হাউসেই অবস্থান করছেন। তারা সার্কিট হাউসের সংশ্লিষ্ট লোকজনের ওপর নজরদারি করছেন। ইতোমধ্যে, আগুন লাগা ভিভিআইপি দুটি কক্ষের সব কিছুর তালিকা তৈরি করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সবাই মনে করছেন বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন লেগেছে। তবে, তদন্ত কর্মকর্তারা ব্যাপারটি অধিক গুরুত্ব দিয়ে সন্দেহের হিসেব মেলাতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। তারা সার্কিট হাউসের অব্যবস্থাপনাও চিহ্নিত করছেন। পাশাপাশি ওই দুটি কক্ষ মেরামতের জন্য একটি বাজেটসহ আসবাব সামগ্রীর তালিকা গণপূর্তের কাছে চাওয়া হয়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, পুরো ঘটনাটির তদন্ত চলছে। কাজ করতে দেন। তারপর বলি।
উল্লেখ্য, গত ২ মার্চ বুধবার সকালে হঠাৎ করে সার্কিট হাউসের নতুন ভবনের ভিভিআইপি ২০১ ও ২০২ নম্বর কক্ষে রহস্যজনক আগুন লাগে। ওই দুটি কক্ষ ব্যবহার করেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি। ঘটনার দিন প্রধান বিচারপতি কক্ষটি ব্যবহার করার কথা ছিল।