কিছু মানুষের কাছে দেশের গণতন্ত্র সীমাবদ্ধ : সিনহা
অবসরের পর রায় লেখা বা দ্রুত রায় লেখা নিয়ে যারা টকশো করেন তারা এর পক্ষে না বলে উল্টো প্রধান বিচারপতিকে হেয় করার চিন্তা করেন। সিলেটে এক অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা এসব কথা বলেছেন।
বুধবার দুপুরে সিলেটের আদালতে হাতে লেখা সাক্ষ্যগ্রহণ পদ্ধতির বদলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও কম্পিউটারে রেকর্ডিং লিপিবদ্ধকরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, সুবিধাভোগী কিছু মানুষের কাছে দেশের গণতন্ত্র সীমাবদ্ধ। আজকে আমাদের দেশে মিডিয়া যথেষ্ট স্বাধীনতা ভোগ করছে। মিডিয়াতে অনেক কিছু দেখি। টকশোতে রাত হলেই আলোচনা হয়। কিছু কিছু প্রিন্ট মিডিয়াতে বিচার বিভাগ নিয়ে আলোচনা হয়। আমি এ অনুষ্ঠানের সবাইকে বলতে চাই, আমাদের মিডিয়া বা লিবার্টি আছে। কিন্তু এটা সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী। তবে এখানে আইনের বাধা নিষেধ সাপেক্ষে। বেশি লিবার্টি কিন্তু জনগণের মঙ্গল নিয়ে আসে না। এটার সীমাবদ্ধতা থাকা উচিত।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, কোনো কোনো বিচারক অবসরে গেছেন। অথচ তাদের কাছে ৬/৭ বছরের পুরোনো রায় পড়ে আছে। আমি যখন এ কথাগুলো (দ্রুত রায় দেয়া/অবসরের পর রায় না লেখা) বলি পক্ষান্তরে, যারা সমাজের ভালো কথা বলেন এবং বিভিন্ন টকশোতে কথা বলেন এ কথাগুলো তাদের কাছে প্রশংসিত হয় না। উল্টো তারা প্রধান বিচারপতিকে কীভাবে হেয় করা যায় এটা চিন্তা করেন।
দেশে মামলাজট প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, আজকে ৩০ লাখ মামলার জটের কথা বলা হয়। এটা ওভারকাম করতে পারতাম, যদি পুরনো আইনগুলোকে বাদ দিয়ে যুগোপযোগী করা যেত। ডিজিটাল সাক্ষ্য ব্যবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, এ ব্যবস্থা পর্যায়ক্রমে দেশের সব জেলায় চালু করা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালের পর দেশে বিদ্যুতের কোনো সঙ্কট থাকবে না। এই সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ সঙ্কটের সমাধান করা হবে।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ই-জুডিশিয়ালির জন্য ১০/১৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে না। আগামী বছর থেকে পর্যায়ক্রমে সব জেলায় এ পদ্ধতি চালু করা হবে।
তিনি বলেন, অনেকে ডিজিটালের সঙ্গে বিদ্যুতের কথা বলেছেন। আমি আশা করি, ২০১৮ সালের পর বিদ্যুতের সমস্যা থাকবে না।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আজ সিলেটের মানুষের জন্য দিনটি আনন্দের। কারণ সিলেট থেকে আধুনিক বিচার ব্যবস্থা যাত্রা শুরু করলো। এর ফলে বিচারপ্রার্থীরা নির্ভুল বিচার দ্রুত সময়ের মধ্যে পাবেন। ক্রমান্বয়ে এই কার্যক্রম সারা দেশে বিস্তৃত করা হবে।
এসময় সিলেটের আইনজীবীদের ১০ দফা দাবির প্রেক্ষিতে আদালতে লিফট, বার বিল্ডিং ও আদালতের সংযোগের জন্য ব্রিজ এবং লাইব্রেরির জন্য পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেন আইনমন্ত্রী।
সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ মনির আহমদ পাটোয়ারির সভাপতিত্বে আদালত চত্বরে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, জাতিসংঘ উন্নয়ন প্রকল্পের (ইউএনডিপি) আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট ওয়ার্টকিন্স, সিলেট জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সরকারি কৌসুলি (জিপি) খাদেমুল মিল্লাত জালাল, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সমিউল আলম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, মহানগর দায়রা জজ আকবর হোসেন মৃধা, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মিজানুর রহমান, এসএমপি কমিশনার কামরুল আহসান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট জেলা বারের সভাপতি একেএম সমিউল আলম প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ডিজিটাল পদ্ধতির মধ্য দিয়ে নতুন যুগে পা রাখছে দেশের বিচার বিভাগ। সুপ্রিম কোর্টের সহযোগিতায় ইউএনডিপির অর্থায়নে জুডিসিয়াল স্ট্রেনথেনিং প্রকল্পের (জাস্ট) আওতায় সিলেটের ৪০টির মধ্যে ২০টি আদালত কক্ষে সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরায় এ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হলো।
এখন থেকে সিলেটের আদালতে আর কোনো সাক্ষীর সাক্ষ্য বা জেরা হাতে লেখা হবে না। বিচারক, রাষ্ট্রপক্ষ, আসামি এবং বাদী-বিবাদী পক্ষের আইনজীবীদের সামনেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক কম্পিউটার মনিটর থাকবে। আদালতের কম্পিউটার কম্পোজকারি সাক্ষীর সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করার সঙ্গে সঙ্গেই সকল পক্ষ তাদের সামনে থাকা কম্পিউটারের মনিটরে তা দেখতে পাবেন। নির্ভুলভাবে লিপিবদ্ধ হচ্ছে কি-না তাও তারা পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। এছাড়া সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষে আদালতের কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরিত কপি সব পক্ষকে সরবরাহ করা হবে।
শুধু তাই নয়, টাইপিংয়ের পাশাপাশি পুরো সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি বিদুুৎ সমস্যার কথা মাথায় রেখে এক ঘণ্টা ব্যাকআপ রাখার মতো যন্ত্রপাতি যুক্ত করা হয়েছে।