সিরিয়ায় যৌনদাসী বাংলাদেশি নারী
ডেস্ক রিপোর্টঃ ভালো চাকরির প্রলোভনে বাংলাদেশের বহু নারীকে শুধু যে ভারতে পাচার করা হয়েছে তা-ই নয়। তাদেরকে প্রলোভন দেয়া হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে একই রকম কাজের। তারপর সেখান থেকে তাদেরকে পাচার করা হয় যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায়। একবার সিরিয়ায় পৌঁছার পর তাদেরকে জোর করে গৃহকর্মে নিয়োজিত করা হয় অথবা দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হয়। এভাবেই তাদেরকে বানানো হয় যৌনদাসী। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে বলা হয়, র্যাব-এর এক কর্মকর্তা বলেছেন, গত বছর তারা এমন ৪৫ জন নারীর মামলা পেয়েছেন। ওইসব নারীকে সিরিয়ায় বিপথে পরিচালিত করা হয়েছে, প্রহার করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে না হয় তাদেরকে ধর্ষণ করা হয়েছে। র্যাব-৩ এর কমান্ডার খন্দকার গোলাম সারোয়ার সোমবার বলেছেন, শাহিনুর নামের এক নারীকে নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। তাকে সিরিয়ায় যারা আটকে রেখেছিল তাদের কবল থেকে তিনি পালান। এরপরই তিনি তার মাকে ফোন করেন। তার মা বিষয়টি র্যাবকে অবহিত করেন। গোলাম সারোয়ার আরও বলেন, শাহিনুরকে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল লেবাবনে। কিন্তু তার পরিবর্তে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় অন্য ৫ জন নারীর সঙ্গে দুবাইয়ে। দুবাই থেকে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় সিরিয়ায়। সেখানে বিভিন্ন জনের কাছে তাদের বিক্রি করে দেয়া হয়। কখনো তারা গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। কখনো যৌনদাসী হিসেবে কাজ করেন। শাহিনুরের বয়স ৩৪ বছর। তিনি ভীষণ অসুস্থ। এমনকি তিনি নড়াচড়া করতে পারেন না। সিরিয়ায় অবস্থানকারী বাংলাদেশীরা তাকে নিয়ে আসেন ঢাকায়। এখন তাকে কিডনির অসুস্থতার চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের হিসাব মতে, বর্তমানে ৮০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন। তার মধ্যে বেশির ভাগই রয়েছেন আরব দেশগুলোতে, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ায়। নারীরা বিশেষত গৃহকর্ম নিয়ে এসব দেশে যান। তবে অনেক ক্ষেত্রেই তারা নির্যাতনের শিকার হন। তাদের থাকে না স্বাধীনতা। খন্দকার গোলাম সারোয়ার বলেন, যেহেতু ৫ বছর ধরে সিরিয়ায় যুদ্ধ চলছে তাই পাচারকারীদের গন্তব্য হয়ে উঠেছে দেশটি। তারা বাংলাদেশী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে ব্যবহার করে জর্ডান ও লেবাননে মানুষ আনা-নেয়া করে। এসব দেশ থেকে পরে নারীদের নিয়ে যাওয়া হয় সিরিয়ায়। সেখানে তাদেরকে বিক্রি করে দেয়া হয়। এসব নারীর পালানোর সুযোগও থাকে না বললেই চলে। এ ঘটনায় বাংলাদেশে আটক করা হয়েছে ৮ জনকে। এর বেশির ভাগই রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক, স্টাফ। তারা সজ্ঞানে অথবা অসচেতনভাবে আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। তবে এখনও সিরিয়া, লেবানন ও জর্ডানের পাচারকারীদের শনাক্ত করা যায়নি। তাদেরকে গ্রেপ্তারও করা যায়নি। গোলাম সারোয়ার বলেন, পাচারের শিকার যারা হচ্ছেন তারা গ্রামের দরিদ্র নারী। তাদেরকে মাসে ২০০ ডলার বেতন দেয়ার শর্তে প্রলুব্ধ করা হয়। এরপর গড়ে প্রতিজনের কাছ থেকে রিক্রুটিং ফি বাবদ আদায় করে ৩০ হাজার টাকা। এসন নারী গ্রামের। তারা শিক্ষিত নন। তারা নিরপরাধ। সিরিয়ায় কি ঘটছে সে সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। তারা মনে করেন, তাদেরকে লেবানন অথবা জর্ডানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতে তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরবে।