জগৎজ্যোতি হত্যা: তিন বছরেও শেষ হয়নি বিচার
ডেস্ক রিপোর্টঃ যুবলীগ নেতা ও সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক জগৎজ্যোতি তালুকদার হত্যার তিন বছর পূর্ণ হয়েছে মঙ্গলবার। ২০১৩ সালের ২ মার্চ খুন হন জগৎজ্যোতি।
তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো শেষ হয়নি এই মামলার বিচার কাজ। প্রায় আসামীরাই রয়েছে জামিনে। দীর্ঘ অচলাবস্থার কারণে এই মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন তাঁর স্বজন ও সহযোদ্ধারা।
২০১৩ সালের ২ মার্চ রাতে নগরীর তপোবন এলাকায় সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক জগৎজ্যোতি তালুকদার খুন হন। আহত হন আরেক যুবলীগ নেতা জুয়েল আহমদ। এ সময় তাদের ব্যবহৃত প্রাইভেট কারটিও আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়।
এ ঘটনায় ওই বছরের ৫ মার্চ সিলেট জামায়াতের শীর্ষ তিন নেতা হাফিজ আব্দুল হাই হারুন, ফখরুল ইসলাম ও সিরাজুল ইসলাম শাহীনকে হুকুমের আসামী ও সাবেক শিবির নেতা গাজি নাছিরকে প্রধান আসামী করে কোতোয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
এরপর ২০১৪ সালের ২৪ এপ্রিল ৩৩ জামায়াত-শিবির নেতাকে অভিযুক্ত করে জগৎজ্যোতি হত্যা মামলার অভিযোগপত্র প্রদান করা হয়।
‘জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের পতাকা মিছিলে অংশ নেয়ায় রোষানলে পড়েছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক জগৎজ্যোতি তালুকদার। এর জের ধরেই এলোপাথাড়ি কুপিয়ে তাকে খুন করা হয়।’ জগৎজ্যোতি হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে এমনটিই উল্লেখ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহীন উদ্দিন।
অভিযোগপত্রে নগর জামায়াতের আমীর এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, নায়েবে আমীর হাফেজ আব্দুল হাই হারুন, সেক্রেটারি সিরাজুল ইসলাম শাহীন, এ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি ফখরুল ইসলামসহ ৩৩ জনকে আসামী করা হয়েছে।
এছাড়াও যাদেরকে আসামী করা হয়েছে তারা হলেন, ইউসুফ বিন নূরী চৌধুরী সানী, পারভেজ মিয়া, তানভীর আহমদ, ফয়েজ আহমদ, উবায়দুল হক শাহীন, ফয়জুল হক, রিয়াজ মিয়া, রাজিব, মারুফ রহমান, সাঈদ আব্দুল্লাহ, হুসেন আহমদ, এহসানুল করিম, মো. ফখরুল ইসলাম, হাফেজ আব্দুল হাই হারুন, সিরাজুল ইসলাম শাহীন, আনোয়ারুল ওয়াদুদ টিপু, জুবায়ের, গিয়াস উদ্দিন মোল্লা, খলিল খান, মুফতি আলী হায়দার, আতিকুর রহমান, আব্দুল্লাহ, বাশিক উদ্দিন, দুলাল আহমদ, সাফায়েত রহমান, আব্দুল মালেক, নজরুল ইসলাম, ওমর ফারুক বাপ্পী, সাদিকুর রহমান, ফখরুল আলম সেলিম ও মুজাহিদুল ইসলাম।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ‘যুদ্ধাপরাধী বিচার সংক্রান্ত একটি রায়কে কেন্দ্র করে সারা দেশব্যাপী গণজাগরণ মঞ্চ নামে একটি অরাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে উঠলে, সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সম্মুখে সিলেটের গণজাগরণ মঞ্চ প্রতিষ্ঠিত হয়। ভিকটিম জগৎজ্যোতি তালুকদার এ মঞ্চের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।
২০১৩ সালের ১ মার্চ গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে সিলেটের একটি বিশাল পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। জগৎজ্যোতি এ পতাকা মিছিলে বিরাট জাতীয় পতাকা হাতে মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন। এর ফলে সে জামায়াত ও ছাত্র শিবিরের রোষানলে পড়ে’। ১০ পৃষ্টায় অভিযোগপত্রে হত্যাকাণ্ডের কারণ ও হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তর বর্ণনা দেয়া হয়েছে।
জগত জ্যোতি হত্যার পর নিহতের রাজনৈতিক সহকর্মীবৃন্দসহ সংস্কৃতি কর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জাতীয় সংসদে ৭১ বিধিতে দীর্ঘ বক্তব্য দেন আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত। জগৎজ্যোতি হত্যা মামলাসহ সিলেটের ৫ আলোচিত মামলার ব্যাপারে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি জানতে চায়। তবে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও আজও শেষ হয়নি চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার বিচার কাজ।