ডিজিটালাইজড হচ্ছে সিলেটের আদালত
ডেস্ক রিপোর্টঃ সিলেটের আদালতে লাগছে প্রযুক্তিরে ছোঁয়া। মার্চ মাস থেকে সিলেটের ২০টি আদালতে ডিজিটালাইজড পদ্ধতিতে সাক্ষীর সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করা হবে। ওইসব আদালতে হাতে আর কোন সাক্ষীর জবানবন্দি লেখা হবে না।
বিচারক, রাষ্ট্র, আসামি এবং বাদি-বিবাদী পক্ষের আইনজীবীদের সামনেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক কম্পিউটার থাকবে। আদালতের কম্পিউটার কম্পোজকারী সাক্ষীর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার সঙ্গে সঙ্গেই সকল পক্ষ তাদের সামনে থাকা কম্পিউটারের মনিটরে তা দেখতে পাবেন। নির্ভুলভাবে লিপিবদ্ধ হচ্ছে কিনা তাও তারা পরীক্ষা করতে পারবেন। এছাড়া সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালতের কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরিত কপি সকল পক্ষকে সরবরাহ করা হবে।
সিলেটের মহানগর দায়রা জজ, জেলা দায়রা জজ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, চিফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ২০টি কোর্টে এই পদ্ধতিতে সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন বিচারকরা। ইতমধ্যে আদালতগুলোতে কারিগরি সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। আগামী ২ মার্চ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এই পদ্ধতির উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।
বিচার প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলায় সাক্ষীর সাক্ষ্য সনাতন পদ্ধতি অর্থাৎ হাতে লিখে লিপিবদ্ধ করেন বিচারকরা। দিনের পর দিন এভাবে তারা সাক্ষ্য গ্রহণ করে থাকেন। সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের পর চলে জেরা। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা দীর্ঘ সময় ধরে সাক্ষীকে জেরা করেন। আর এই জেরাও বিচারকদেরকে হাতে লিখে লিপিবদ্ধ করতে হয়। ফলে সাক্ষ্য ও জেরা লিপিবদ্ধ করতে প্রচুর সময় ব্যয় হয়। এছাড়া বাদি বা আসামি পক্ষও নানা সময়ে অভিযোগ করে থাকেন যে যথাযথভাবে সাক্ষ্য গ্রহণ লিপিবদ্ধ হয়নি। দীর্ঘদন পর এই সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে সিলেটের আদালতগুলোতে চালু হচ্ছে ডিজিটালাইজড পদ্ধতিতে সাক্ষ্য গ্রহণ। এই পদ্ধতিতে ফৌজদারি বা দেওয়ানি মামলায় যখন কোন সাক্ষী সাক্ষ্য দেবেন তখন একজন স্টোনোগ্রাফার বা স্টোনোটাইপিস্ট তা কম্পিউটারে লিপিবদ্ধ করবেন। সাক্ষ্য গ্রহণের সময় যদি ভুল কিছু লিপিবদ্ধ হয় তাহলে সাক্ষী বা তার আইনজীবীর তাত্ক্ষণিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তা সংশোধনের সুযোগ থাকছে। ফলে কোনো তথ্য বাদ যাওয়া কিংবা ভুল লেখার আশংকা থাকবে না।
প্রায় অর্ধ কোটি টাকা খরচ করে কম্পিউটার ও মনিটরসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি স্থাপন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের সহযোগিতায় জাতিসংঘ উন্নয়ন প্রকল্পের (ইউএনডিপি) অর্থায়নে জুডিসিয়াল স্ট্রেনথেনিং প্রজেক্টের (জাস্ট) আওতায় বিচার বিভাগে এই ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম চালু হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে হাইকোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ বলেন, প্রাচীন বিচার ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে আধুনিক ও যুগপযোগী করার লক্ষ্যে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। এই পদ্ধতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়ায় সময়, শ্রম ও অর্থের খরচের পরিমাণ কমিয়ে বিচারপ্রার্থীদের কষ্ট লাঘব করা। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টে অনলাইন কজলিস্ট চালু করতে গিয়ে আমরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলাম। কিন্তু এখন সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠা গেছে। আশা করছি সিলেটের আদালতগুলোতে যে প্রজেক্ট নেয়া হয়েছে তা সফল হবে। পরবর্তীকালে দেশের অন্যান্য আদালতেও তা চালু করা হবে বলে জানান তিনি।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুরু থেকেই আধুনিক পদ্ধতিতে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রতিটি ট্রাইব্যুনালের বিচারকগণের সামনে তিনটি, প্রসিকিউটর ও আসামি পক্ষের আইনজীবীর সামনে দুটি মনিটর এবং স্টোনোগ্রাফারের সামনে মূল কম্পিউটার রক্ষিত থাকে। সাক্ষী জবানবন্দি বা জেরার কোন অংশ ভুলভাবে লিপিবদ্ধ হলে তা তাৎক্ষণিকভাবে সংশোধনের নির্দেশও দেন বিচারকরা।