ভাষা সংগ্রামী, মুক্তিযোদ্ধা, মন্ত্রী- মোস্তফা শহীদের বর্ণাঢ্য জীবন
ডেস্ক রিপোর্টঃ ভাষা আন্দোলন কিংবা মুক্তিযুদ্ধ অথবা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন- বাঙালির প্রায় সকল অধিকার আদায়ের সংগ্রামেই এনামুল হক মোস্তফা শহীদ ছিলেন অগ্রনী সৈনিক। ছিলেন সাধারণ মানুষের রাজনীতিবীদ।
শেষ বয়সে, বিগত মহাজোট সরকারের আমলে সমাজ কল্যান মন্ত্রীর মন্ত্রীত্ব দিয়ে যাকে সম্মানিত করা হয়। পেয়েছেন রাষ্ট্রিয় সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদকও।
বৃহস্পতিবার না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী এই রাজনীতিবিদ।
এনামুল হক মোস্তফা শহীদ ১৯৩৮ সালের ২৮ মার্চ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার উবাহাটা ইউনিয়নের কুটিরগাঁও গ্রামে মরহুম ডা. আব্দুল হক ও মরহুমা খুদেজা খাতুনের ঔরসে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি স্থানীয় কুদ্রতিয়া মাদ্রাসায় বাল্যশিক্ষার পাঠ চুকিয়ে ১৯৫২ ইংরেজি সনে হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাস করেন।
১৯৫৬ সালে হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৬ সালে হাইকোর্টে এনরোলমেন্ট লাভ করেন।
১৯৭৪ সালের ৪ মার্চ সিলেটের জালালপুর রাইমাট গ্রামের মিনু মমতাজকে বিয়ে করেন। তিনি ২ ছেলে সন্তানের জনক।
সাবেক এ মন্ত্রী একাধারে সফল রাজনীতিক, শিক্ষক, লেখক, সংস্কৃতিকর্মী ও সাংবাদিক ছিলেন।
৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬৬’র ৬ দফা, ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধে ছিল তার অসামান্য অবদান। এজন্য তাকে কয়েকবার জেলেও যেতে হয়েছে।
তিনি ৫২’র ভাষা আন্দোলনের সময় হবিগঞ্জ ভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মোস্তফা শহীদ ৭১’র মুক্তিযুদ্ধের সময় হবিগঞ্জ মহকুমা সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের নির্বাহী সদস্য ছিলেন।
তিনি ভারতে সিএনসি বিশেষ ট্রেনিংয়ে ইয়ুথ ক্যাম্পের পরিচালক এবং বিভিন্ন সেক্টরে সিভিল এয়ারফোর্স উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৪ সালের ৪ এপ্রিল হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া ডাকবাংলোয় বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করার সময় আলোচনায় অন্যরকম দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ১৯৬০ থেকে ৬৮ সাল পর্যন্ত হবিগঞ্জ জে কে অ্যান্ড এইচ কে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। সাংস্কৃতিক অঙ্গণে ছিলেন দুর্দান্ত অভিনেতা। তখনকার হবিগঞ্জ আর্ট কাউন্সিলের (জেলা শিল্পকলা একাডেমী) সেক্রেটারি ছিলেন।
তিনি ১৯৭০ এর প্রাদেশিক নির্বাচন, ১৯৭৩, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ এর জাতীয় নির্বাচনে হবিগঞ্জ-চুনারুঘাট আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
তিনি ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
লেখক এনামুল হক মোস্তফা শহীদের লেখা ‘খোয়াই নদীর বাঁকে’ বইটি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। এ ছাড়াও তিনি ছিলেন মাসিক অভিযাত্রীর সম্পাদক।
ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৩ সালের এনামুল হক মোস্তফা শহীদ একুশে পদকে ভূষিত হন।
জাতীয় সংসদে ছয়বার হবিগঞ্জের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করা এই আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যকালে বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।