যুদ্ধাপরাধের মামলা সঠিকভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে না, প্রধান বিচারপতির অসন্তোষ
ডেস্ক রিপোর্টঃ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এসকে সিনহা)।
মঙ্গলবার জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর শুনানি শেষে সাংবাদিকদের সামনে এ অসন্তোষের কথা জানান অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম।
অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের কাছে বলেন, ‘মীর কাসেমের শুনানির সময় প্রধান বিচারপতির কাছে বেশ কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়ে। এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, মামলা পরিচালনায় সরকার যথেষ্ট টাকা খরচ করছে, কিন্তু সঠিকভাবে মামলা পরিচালনা করা হচ্ছে না বলে মনে হচ্ছে।’
প্রধান বিচারপতি মীর কাসেম আলীর মামলাসহ অন্যান্য মামলা পরিচালনায় থাকা দায়িত্বশীলদের প্রতি গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘সাঈদীর মামলার শুনানির সময়ও এ রকম অসঙ্গতি ধরা পড়েছিলো।’
মীর কাসেমের মামলায় এরকম দুর্বলতার কারণে রায়ের ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব পড়বে কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমার মনে হয় না কোনো প্রভাব পড়বে। আদালত সব সময় চান আরো দক্ষ লোক নিয়োগ দিতে, যেন তারা নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেন।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আদালত মামলার শুনানির সময় অনেক মন্তব্য করেন। এগুলো মিডিয়ায় আসা ঠিক না।’ এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘মীর কাসেম আলীর মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক আগামীকাল শেষ হবে।’
অ্যাটর্নি জেনারেল আরো বলেন, ‘চট্রগ্রামের ডালিম হোটেল ছিলো টর্চার ক্যাম্প। এর মূল হোতা ছিলেন মীর কাসেম আলী। এখানে জসিম, টুল্টু সেন ও রনজিত দাশকে হত্যা করা হয়। এ হত্যার বিষয়টি আসামি পক্ষ অস্বীকার করেনি। মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছিলো- এটাই আমরা প্রমাণ করবো। এ বিষয়ে আজকে আমি যুক্তি উপস্থাপন করবো।’
প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চে মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মঙ্গলবার যুক্তি উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এ বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান। আগামীকাল পর্যন্ত এ মামলার কার্যক্রম মুলতবি করা হয়।
বুধবার এ আপিল শুনানি শেষ হতে পারে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর মীর কাসেম আলীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মীর কাসেম আলী আপিল করেন। মীর কাসেম তার দেড়শ’ পৃষ্ঠার মূল আপিলসহ ১ হাজার ৭৫০ পৃষ্ঠার আপিলে মোট ১৬৮টি কারণ দেখিয়ে ফাঁসির আদেশ বাতিল করে খালাস চেয়েছেন।
আট জনকে নির্যাতনের পর হত্যা ও মরদেহ গুম এবং ২৪ জনকে অপহরণের পর চট্টগ্রামের বিভিন্ন নির্যাতনকেন্দ্রে আটকে রেখে নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী ১৪টি অভিযোগে অভিযুক্ত হন মুক্তিযুদ্ধকালে জামায়াতের কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনীর তৃতীয় শীর্ষ নেতা এবং সেই সময়ের ইসলামী ছাত্র সংঘের সাধারণ সম্পাদক মীর কাসেম আলী। তার বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ১০টি প্রমাণিত হয়। বাকি ৪টি অভিযোগ প্রসিকিউশন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারেনি।
এদিকে মীর কাসেম আলীর মামলাটির মাধ্যমে সর্বোচ্চ আদালতে ৭ম আপিল মামলার শুনানি করা হবে। এর আগে ঘোষিত ৬টি আপিল মামলার চূড়ান্ত রায়ের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত চারজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। বাকি দুটির মধ্যে একটির পূর্ণাঙ্গ ও অপরটির সংক্ষিপ্ত রায় প্রকাশ করেছেন আপিল বিভাগ।