যেভাবে বৃক্ষমানবের অপারেশন করা হলো

56129560ডেস্ক রিপোর্টঃ বিরল রোগে আক্রান্ত আবুল বাজদারের এক হাতে অস্ত্রোপচার করে ভারমুক্ত করা হয়েছে। সাড়ে তিন ঘণ্টার অপারেশনে তার হাতের পাঁচ আঙুলের ওপর বেড়ে ওঠা অংশ ফেলে দেয়া হয়েছে।

অস্ত্রোপচারের পর আবুল জানিয়েছেন আগে থেকে তার অবস্থা ভালো মনে হচ্ছে। জটিল অপারেশন নিয়ে চিকিৎসকরা সংশয়ে থাকলেও শেষতক তারাও স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান আবুল কালামের নেতৃত্বে চিকিৎসকদের একটি দল আবুল বাজনদারের ডান হাতে পাঁচটি আঙুলেই অস্ত্রোপচার করে।

সাড়ে তিন ঘণ্টার অপারেশনের বর্ণনা দিয়ে চিকিৎসক দলের প্রধান আবুল কালাম বলেন, ‘চারপাশ থেকে গাছের শেকড়ের বৃদ্ধির কারণে ওর আঙুলগুলো চিহ্নিত করা যাবে কি না তা নিয়ে সংশয় ছিল।

পাঁচটি আঙুলই আমরা খুঁজে পেয়েছি। আশার কথা, আঙুলগুলোয় স্বাভাবিক রক্ত চলাচল আছে। এটি একটি ভালো লক্ষণ। প্রথমে দুটি জটমুক্ত করার কথা থাকলেও, পরে পাঁচটি আঙুলেই অস্ত্রোপচার করা হয়।

বেশ দ্রুতই আমরা দুটি আঙুল খুঁজে পাই। পরে বোর্ডের সবার সম্মতিতে পাঁচটি আঙুলেই অস্ত্রোপচারের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিই। আপনি যদি সাত দিন হাতে কোনো কাজ না করেন, অষ্টম দিনে হাতটি ঠিকমতো কাজ করবে না। আবুল বাজেদারের হাতটি অনেক ভারী হয়েছিল। অকেজো হয়ে পড়েছিল। কিন্তু রক্ত সঞ্চালন থাকায় আমরা আশা করছি তিনি হয়তো সাধারণ কাজকর্ম করতে পারবেন।

চিকিৎসকরা জানান, অস্ত্রোপচারের জন্য আবুল বাজেদারকে পুরোপুরি অচেতন করা হয়নি। পুরোপুরি অচেতন করা হলে হৃদযন্ত্র, ফুসফুস ও মস্তিষ্কে বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা থাকে। তার বেলায় শুধু ডান হাতটি অবশ করা হয়েছে। ছুরি ব্যবহার না করে চিকিৎসকরা ইলেকট্রো সার্জারি করেন। এতে অস্ত্রোপচার হয়েছে দ্রুত, রক্তপাত হয়েছে খুবই কম। ছয় সদস্যের মেডিকেল বোর্ডে আরও তিনজনকে যুক্ত করা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের সার্জারির বিভাগীয় প্রধান এবিএম খুরশীদ আলম ও মাইক্রোবায়োলজির প্রধান শহীদুল ইসলাম ছাড়াও দেশের অন্যতম চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ এম ইউ কবীরকেও বোর্ডে যুক্ত করা হয়।

এম ইউ কবীর বলেন, ‘আজ সোমবার আবুল বাজেদারের হাতের ব্যান্ডেজটি খোলার কথা রয়েছে। এরপর আমরা লো লেভেল রাইট থেরাপি দেবো। এতে তার হাতে রক্ত চলাচল বাড়বে, ব্যাকটেরিয়া দমন করা সম্ভব হবে, স্নায়ুর কার্যকারিতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।

পরের অস্ত্রোপচারটির জন্য কমপক্ষে তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হতে পারে বলেও জানান মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা।