প্রকৃত বন্ধুত্বের খুঁজে -জাহিদ উদ্দিন
বন্ধু শব্দটা অতি ক্ষুদ্র কিন্তু এর মর্ম বিশাল।বন্ধুত্ব জীবনের অমর বন্ধন, যা কখনও নষ্ট হয় না।ছাত্রজীবনে অনেক বন্ধু পেয়েছি, কিন্তু শৈশবের বন্ধুদের তুলনা হয় না।শৈশবের বন্ধুত্বকে আমি মনে করি জীবনের সবচেয়ে বড় ও শ্রেষ্ঠ বন্ধুত্ব।ঐ সময়টা মানুষ তার স্বার্থের উর্ধ্বে থাকে।কৈশোরে ও তারপরে বন্ধু অনেকেই হয় তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে কিছুনা কিছু স্বার্থের গন্ধ সম্পর্কের সাথে লেগে থাকে।ছোটবেলায় (স্কুল জীবন শুরুর আগে)যারা বন্ধু ছিল তারা আজও আছে মনের নীড়ে, তাদের সাথে নিয়মিত না হলেও মাঝে মধ্যেই যোগাযোগ হয়।প্রাইমারি স্কুলের অনেক বন্ধুকে হারিয়ে ফেলেছি যাদের আজও খুঁজে ফিরি।মাধ্যমিকে এসে আআমার কিছু বন্ধুর সাথে পরিচিত হয়,এদের মধ্যে কয়েকজন এখনো সাথে রয়েছে,আবার অনেককে হারিয়েও ফেলেছি।হারিয়ে ফেলা বন্ধুদের সাথে জড়িত স্মৃতি এখনো মনে পড়লে দুচোখ দিয়ে জল প্রবাহিত হয়।কেনইবা বন্ধুরা জীবনে আসে, স্মৃতির যন্ত্রণা উপহার দিয়ে কাঁদিয়ে অনেক দূরে চলে যায়।আমি বন্ধুত্বের গভীরতা স্পর্শ করি মাধ্যমিকের শেষ বেলায়।বন্ধুদের হারালে মনে কি যে রক্তক্ষরণ হয়,যারা প্রকৃত বন্ধু তারাই তা উপলব্ধি করতে পারে।আমরা অনেকেই বন্ধুত্বের মর্ম উপলব্ধি করতে পারিনা।হাসি-কান্না আনন্দ-বেদনা কিংবা সুখ-দুঃখে ভরা আমাদের জীবন। কিন্তু এসবের কোনটাই কখনও স্থায়ী হয় না। তাই কান্না বা দুঃখের পর সুখের দিন আসে। সুখময় দিনগুলো যখন আমরা শুধু নিজে ভোগ করতে পারে কিংবা সবাইকে নিয়ে উপভোগ করে ঠিক তেমনি দুঃখের দিনেও আমরা অন্যকে কাছে চাই বা তার সাহায্য কামনা করে। আমারা এ বিচিত্র জীবনে অন্যের সঙ্গে আনন্দের অংশীদার হতে চাই কিন্তু দুঃখের বা কষ্টের সময় সঙ্গ ত্যাগ করি। তাই এই পৃথিবীর অধিকাংশ বন্ধুই স্বার্থপর ও সুযোগ সন্ধানী। স্বার্থ সিদ্ধির আশায় বন্ধুর মুখোশ এঁটে সুসময়ের সঙ্গী হয়। কিন্তু দুঃসময় আসলেই এই বন্ধুই আবার দূরে চলে যায়। প্রকৃতিতে যখন ফুলের মেলা বসে, গাছে গাছে যখন সবুজ পাতার ছড়াছড়ি তখনই কোকিল আসে। শীতের মাঝে এই কোকিলকে আর পাওয়া যায় না। এদেরকে বলে বসন্তের কোকিল। ঠিক এমন সুসময়ের বন্ধু যারা তারাও বসন্তের কোকিলের মতোই সুযোগ সন্ধানী। স্বার্থপর বন্ধুরা তাই আনন্দময় দিনের ভাগ নিতে আসে কিন্তু দুঃখের দিনে বিদায় নেয়। এ শ্রেণীর বন্ধুরা প্রকৃত বন্ধু নয়। কেননা প্রকৃত বন্ধুরা কখনো সুসময়ে যার সাথে ছিলো বিপদকালে তাকে ত্যাগ করে না। বরং বিপদেই বন্ধুর সাহায্যার্থে পাশে এসে দাঁড়ায়। সত্যিকার বন্ধুর সুসময় বলে কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। সে সব সময়ই বন্ধুর পাশে বন্ধুত্বের মহিমায় চির অম্লান। ভ্রমরের মতো ফুলের মধু শেষ হলেই এর কাজ শেষ হয়ে যায় না। কৃত্রিম বন্ধুত্বের বন্ধনে নিজেকে শুধু স্বার্থ উদ্ধারের আশায় জড়িয়ে রাখে না। বন্ধুর বিপদে নিজের বিপদ মনে করেই তার পাশে থাকে সবসময় এবং সব ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। এরাই প্রকৃত বন্ধু অসময়ে বা অভাবের সময় বন্ধুর কাছে থাকে। সুসময়ে বা প্রাচুর্যের সময় যারা ভীড় জমায় তারা কেউ প্রকৃত বন্ধু নয়।এরকম সম্পর্ক বন্ধুত্ব নয়,হতেও পারেনা।প্রকৃত বন্ধু যে,সে তার বন্ধুর পাশে নি:স্বার্থ ভাবে আজীবন থাকবে।আমরা নিজেরাই চাইলে হতে পারি আরেক বন্ধুর প্রকৃত বন্ধু।আজো আমি প্রকৃত বন্ধুত্বের খুঁজে।