নয়ন সম্মুখে তুমি নেই : ইসমত পারভীন রুনু

২৭ সেপ্টেম্বর- যেদিন আশার প্রদীপ জ্বেলে, সারা ঘর আলো করে, সব অন্ধকারকে বিদীর্ণ করে, খুশীর বার্তা হয়ে, সবাইকে আনন্দের বন্যায় ভাসিয়ে তোমার আবির্ভাব এ ধরণীতে। সেদিনটি আজও তেমনি আছে অ¤ান, সোনালী চাঁদের আলোয় আলোকময়। কিন্তু আজকের প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। তোমার জন্মদিনে তুমিই নেই! আর থাকবেও না কোনদিন।
ঘুম থেকে উঠেই প্রিয় মুখ দেখা হবে না আর। মুঠোফোনে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে চাইলেও পারবোনা। শিশির ফোঁটার মালা, সেই সাথে শিউলি ফুলে ফুলে ভরে গেছে বনের আঙ্গিনা। কান্না-হাসি, আলো-ছায়ায় যে মুখটি নয়নের মাঝখানে, হৃদয়ে স্থায়ীভাবে আসন করে নিয়েছে সেতো তুমি। শুধু তুমিই আমাদের আদরের সোনামণি।
নয়নের জলে, এ শূন্য হিয়াতলে তোমারই একচ্ছত্র আনাগোনা নীরবে, নিভৃতে। শুভ জন্মদিন তোমার! হয়তোবা সশরীরে আমাদের মাঝে তুমি নেই। কিন্তু তোমার মতই আলোকিত ভুবন সর্বত্রই ছায়া হয়ে আছে আমাদের চারপাশে, থাকবে চিরকাল। তুমি যেখানেই থাকো, ভালো থেকো। তোমার সাথে যে বাঁধন তা প্রাণের, আবেগের, আদরের। তাইতো তোমার এবারের “জন্মদিন” শুধুই স্মৃতির রোমন্থন। বেদনার স্রোতে বয়ে চলা অশ্রুজল। এ বেদনার সুর বয়ে বেড়াবো প্রত্যেকে জীবনভর। স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা, তোমাকে যেন শান্তিতে রাখেন।
কোথাও বেড়াতে যাওয়া ছিল তোমার ভাললাগার বিষয়। আর তা যদি হয় জন্মদিন উপলক্ষে, তাহলে তো কথাই নেই! সবাইকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার আনন্দই যেন তোমার স্বভাবজাত।
ঘরের কোণে সবুজ ছায়া তোমাকে আকৃষ্ট করতো সবসময়। তাইতো সমস্ত ঘরময় তোমার হাতের ছোঁয়া জড়ানো পাতাবাহার, অর্কিড, লতাগুল্ম বার বার তোমার কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। চুড়ির রিনিঝিনি শব্দ তোমার ভীষণ পছন্দ। তোমার ঘরে চুড়ির আলনায় সেগুলো সাজানো আছে তেমনি। নিজের হাতে বানানো বিভিন্ন রকম ঝাড়বাতিগুলো সেভাবেই শোভা পাচ্ছে তোমার ঘরে। অভাব শুধু তোমার। হৃদয়ের প্রতিটি ¯পন্দনে, আনন্দ-বেদনায় শুধুই তোমার নিঃশব্দ পদচারণা।
জন্মদিনে বন্ধুদের নিয়ে ভার্সিটিতে কাসের ফাঁকে ছোট্ট চা-আড্ডার মধ্যেই তুমি জন্মদিনের আনন্দকে খুঁজে নিতে। আদর-¯েœহের অফুরন্ত ভা-ার বাবা-মা। তোমার জন্মদিনে বাবা-মায়ের ইচ্ছে-অনিচ্ছাগুলো হয়তোবা আজ আর আলাদা করা যাবে না। কতদিন বাবা “শাওন”কে ডাকেন না। বাবা আদর করে ডাকতেন “শাওন” বলে। আজ তোমার জন্মদিনে সবাই খু-উ-ব মিস করছি তোমাকে। বাবা বড্ড একা হয়ে গেছেন তোমাকে হারিয়ে। তোমার দুষ্টু-মিষ্টি শাসন নেই, কোন বায়না নেই, ঘুমাতেও পারেন না ঠিকমতো। তাঁর সব গল্পই আজ তোমাকে ঘিরে। মায়ের কাছে তোমার জন্মদিন হচ্ছে হৃদয় গহীন থেকে উঠে আসা এক দীর্ঘশ্বাসের নাম! তাই সব সুন্দরের মাঝে তোমার অস্তিত্বকে খুঁজে বেড়ান।
আবেগ আর আকুলতার পরশ মাখানো হুমায়ূন আহমেদ স্যারের বিখ্যাত গানটির কথাই আজ মনে পড়ছে-
“যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো, চলে এসো এক বরষায়…”
শূন্যতার ভিড়ে চোখ বেদনায় হয়ে ওঠে নীল। সময়ের কাছে হার মানছি, সবখানে তুমি আছো, থাকবে অনাবিল। জীবন সংগ্রামের ব্যস্ততায় কান্ত মন, বিষণè হৃদয়ে দুঃখকে আলিঙ্গনে, সময়ের সাথে নিজেকে সমর্পন। ভালো থেকো মামণি।
(সড়ক দূর্ঘটনায় অকাল প্রয়াত একমাত্র ভাতিজীর স্মরণে রচিত)
লেখিকাঃ সংস্কৃতিকর্মী ও সংগঠক, সিলেট।
ঠিকানাঃ ফয়জুন ভিলা (৩য় তলা), এ-১৪ অনামিকা আ/এ, পূর্ব শাহী ঈদগাহ, টিবি গেইট, সিলেট-৩১০০।