ছুটি নিয়ে চিকিৎসার জন্য ১ বছর ধরে শিক্ষক বিদেশে
কমলগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষার বেহাল দশা: অফিসে বসেই দায়িত্ব পালন করছেন কর্মকর্তারা
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষার বেহাল দশা ধারন করেছে। ছুটি নিয়ে দীর্ঘ এক বছর ধরে চিকিৎসার জন্য বিদেশে অবস্থান করছেন শিক্ষিকা। বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট, যথাসময়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষক উপস্থিত না হওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠক্রম। এক বছরেরও বেশী সময় ধরে বিদ্যালয় পরিদর্শন না করে অফিসে বসেই দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তারা। নিয়মিত বিদ্যালয় পরিদর্শন না করায় শিক্ষকদেরও রয়েছে নানা ক্ষোভ। সরেজমিন কমলগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি বিদ্যালয় ঘুরে ও শিক্ষক অভিভাবকদের সাথে কথা বলে এচিত্র পাওয়া গেছে।
গতকাল বুধবার উপজেলার সতিঝিরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল ১০ টায় সরেজমিনে দেখা যায়, একজন শিক্ষিকা অফিসে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শমশেরনগর কাস্টারের সভায় চলে গেছেন। অপর দুই শিক্ষিকা থাকলেও সকাল ১০টা ২০ মিনিট পর্যন্ত কাউকে বিদ্যালয়ে আসতে দেখা যায়নি। এ সময়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাইরে খেলাধুলা করছে। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সালমা বেগম বিগত বছরের ৩০ মার্চ থেকে চিকিৎসার ছুটি নিয়ে এখন পর্যন্ত স্পেনে অবস্থান করছেন। আরেকজন শিক্ষিকা দীর্ঘ চার বছর ধরে ডেপুটেশনে অন্য একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। বিগত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যালয়ে দায়িত্বরত সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কিংবা শিক্ষা কর্মকর্তা কেউই পরিদর্শনে আসেননি। কেছুলোটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত ছয় মাসেও কেউ পরিদর্শনে আসেননি। চৈতন্যগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩জন শিক্ষক থাকলেও প্রধান শিক্ষক তাঁর বাবার শ্রাদ্ধ আর অন্য দু’জন ছুটিতে থাকায় প্রশিক্ষক একজন শিক্ষক দিয়েই চলছে পাঠদান। দীর্ঘদিন ধরে এই বিদ্যালয়েও কেউ পরিদর্শন করতে আসেননি। এছাড়াও ভেড়াছড়া, ভরতপুর, আদমপুরসহ বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায় এসব বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে কেউ পরিদর্শন করেননি। ৩য় দফায় সরকারিকৃত ধূপাটিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষা কর্মকর্তা পরিদর্শনে যাননি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে কিছু জানানো হয় না, যতটুকু সম্ভব নিজেদেরই খোঁজ নিয়ে জেনে নিতে হয়। শ্রীসূর্য্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে দু’শিক্ষিকার পরস্পর বিরোধী অভিযোগ নিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার সরেজমিনে আসলেও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে ওই বিদ্যালয়ে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন, অধিকাংশ বিদ্যালয়ের পরিদর্শণ খাতা অফিসে নিয়েই স্বাক্ষর করে দিয়ে দেয়া হয়। তাছাড়া অনেক শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসেন দুপুরে। কেউ কেউ উপজেলা শিক্ষা অফিসে আসা যাওয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ফলে শিক্ষার্থীদের যথারীতি পাঠদান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
অভিভাবকরা জানান, শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান, পানীয় জলের সমস্যা, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনুপস্থিতি এসব বিষয়ে দেখভালের দায়িত্ব থাকলেও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা হঠাৎ কোন প্রয়োজন ছাড়া নিয়মিত কোন বিদ্যালয় পরিদর্শণ করেন না।
বিদ্যালয় পরিদর্শণ বিষয়ে জানতে চেয়ে উপজেলার রানীর বাজার ও শমশেরনগর কাস্টারের দায়িত্¦রত সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা নাফিউর নূর এর মোবাইল ফোনে কয়েক দফা চেষ্টা করেও ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত) মনোরমা দেবী বলেন, এখন খেলাধূলাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম থাকায় শিক্ষকদের কিছুটা অনুপস্থিতি থাকতে পারে। তাছাড়া শিক্ষিকা সালমা বেগম মেডিকেল ছুটি নিয়ে বাইরে থাকায় তার বেতন বন্ধ রয়েছে এবং রিপোর্টও করা হয়েছে। তবে নিয়মিত বিদ্যালয় পরিদর্শন করা হয় বলে তিনি জানান।