বিচার বিভাগীয় তদন্তে দোষী এসআই রতন
ডেস্ক রিপোর্টঃ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে লাঞ্ছনার ঘটনায় রাজধানীর আদাবর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রতন কুমার হালদারের জড়িত থাকার সত্যতা পেয়েছে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি। ঢাকা মহানগর হাকিম এমদাদুল হকের তদন্ত প্রতিবেদনে এ বিষয়টি উঠে আসে। গতকাল মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়।
এর আগে একই ঘটনায় তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) হাবিবুন নবী আনিসুর রশিদকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি গত রোববার বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারের কাছে রতনের অব্যাহতির সুপারিশ করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, যে দোকানে ওই ছাত্রী হেনস্থার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, সেই দোকান মালিক নিজেই জানিয়েছেন, তার দোকানে এমন কিছু ঘটেনি। আশপাশের লোকজনও এমন ঘটনা ঘটেছে বলে প্রমাণ দিতে পারেননি। তাই হেনস্থার অভিযোগ থেকে রতন কুমারকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হলো।
তবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এসআই রতনের আচরণ ছিল অপেশাদার । উল্লেখ্য, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে লাঞ্ছনার ঘটনায় রাজধানীর আদাবর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রতন কুমার হালদারের বিরুদ্ধে গত ১ ফেব্রুয়ারি মামলা দায়ের করা হয়। ছাত্রী নিজেই বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন।
মামলার এজহারে অভিযোগ করা হয়, গত রোববার বিকেল ৩টায় মামলার বাদী ইউনিভার্সিটি থেকে বেরিয়ে বই কেনার উদ্দেশ্যে শিয়া মসজিদের দিকে রিকশাযোগে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে জাপান সিটি গার্ডেন ইলেকট্রনিকসের উল্টো পাশে আদাবর থানার এসআই রতন কুমার ও পুলিশের দুই কনস্টেবল রিকশাটির গতিরোধ করে। তিনি রিকশা থেকে নামতে না চাইলেও তাকে জোর করে নামানো হয়। কোনো কিছু বলার আগেই তার কাছে ইয়াবা আছে কি না, জানতে চান এসআই। এতে তিনি চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন।
এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা তাকে জোর করে শিয়া মসজিদের বিপরীতে একটি ইলেকট্রিকের দোকানে নিয়ে যান। সেখানে নেওয়ার পর এসআই রতন দোকানের সবাইকে বের করে দরজা জানালা লাগিয়ে দেন। ওই ছাত্রীর কাছে ২০০ পিস ইয়াবা আছে বলে দাবি করেন এসআই রতন। বাদী সেটি অস্বীকার করলে রতন তাকে তার সোয়েটার খুলতে বলেন। তিনি তাতে অস্বীকার জানালে এসআই রতন তাকে নিয়ে টানাহেছঁড়া করেন। এ সময় তিনি রতনকে ভার্সিটির পরিচয়পত্র দেখান। তারপরও তাকে ইয়াবা ব্যবসায়ী বানানোর অপচেষ্টা করা হয়।
তিনি এসআইকে স্থানীয় লোকদের সামনে ব্যাগ তল্লাশি করতে বলেন। তা না হলে থানায় নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু এতে রাজি হননি রতন। এক পর্যায়ে রতন ওই ছাত্রীর সোয়েটার এবং ওড়না খুলে ফেলে তার স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন।
এরপর এসআই রতন ওই ছাত্রীকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমার কাছে ওসি-ডিসি কিছুই না। কারো কাছে নালিশ করেও কোনো লাভ নেই।’প্রসঙ্গত, ঘটনার পরদিন ছাত্রীকে হয়রানি ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে এসআই রতন কুমার সাহাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ২০ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অবনি শংকরসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন এক নারী। ওই মামলাটিও বিচার বিভাগীয় তদন্তের আদেশ হয়ে তদন্তাধীন আছে।