সিলেটে জোড়া খুন : অন্ধকারে পুলিশ, প্রধান আসামি হাসপাতালে
কাইয়ুম উল্লাস: সিলেটের আলোচিত বনফুলের দুই কর্মী খুনের প্রকৃত কারণ এখনও জানতে পারেনি পুলিশ। এর মধ্যে এক মাস পার হয়ে গেলেও তদন্তে তেমন কোন অগ্রগতি নেই। এমনকি কোন ক্লুও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সন্দেহের উপর ভর করে অন্ধকারে হাতড়াচ্ছে পুলিশ। ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত ৭ জন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কেউই দায় স্বীকার করেনি। একারণে জোড়া খুনের কারণ অজ্ঞাতে থাকার পাশাপাশি মূল হোতারা রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এমনকি, প্রধান আসামি হিসেবে র্যাব যাকে আটক করেছে, সেই আফজাল হোসেন রাজিব এখন এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আদালতে উল্টো র্যাবের বিরুদ্ধেই এই আসামি নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন। আদালত র্যাব-৯ এর সিও এবং ওসমানী হাসপাতালের পরিচালকের কাছে এই আসামির ব্যাপারে রিপোর্ট চেয়েছেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, বনফুলের দুই কর্মী রাজু মিয়া ও তপু মিয়া খুনের ঘটনার ভিডিও ফুটেজ, মোবাইল কললিস্টসহ অনেক আলামত সংগ্রহ করেছে পুলিশ। কিন্তু এখনো সন্দেহভাজন আসামিই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে একের পর এক। এ পর্যন্ত পুলিশ এ ঘটনায় পংকি, রকি, জামাল, সানি, আলমগীর ও ইপুকে নামের মোট ৬ জনকে আটক করেছে। কিন্তু এরাই এই হত্যাকান্ডে ছিল-এমন সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। আবার ঘটনার তিন অনুমেয় কারণের কোনটি সঠিক, তা-ও খোলাসা করা হচ্ছে না। শুরুতে বলা হয়েছিল, বনফুলের কর্মী রাসেলের ফুটবল খেলার বিরোধকে কেন্দ্র করে ঘটনাটি ঘটেছে। পরে বেরিয়ে আসলো বনফুলের কর্মী রাসেলের প্রেম এবং পরে নিহত রাজুর মুঠোফোনের বিরোধ। প্রকৃত কারণ কী ছিল, তা এখনো জানে না পুলিশ। সন্দেহের উপর আসামি ধরা হচ্ছে, রিমা-ে নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু ফলাফল থেকে যাচ্ছে শূন্য।
এ ঘটনার পর র্যাব-৯ জৈন্তাপুর থেকে আফজাল হোসেন রাজিব নামের একজনকে আটক করে। র্যাবের দাবি, রাজিবই এ ঘটনার প্রধান আসামি। পরে রাজিবকে আদালতে পাঠায় র্যাব। আদালতে হাজির হয়ে ১৬৪ ধারা মোতাবেক রাজিব র্যাবের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলে। গত ১৭ জানুয়ারি সিলেট মহানগর হাকিম মামুনুর রহমান সিদ্দীকী বিষয়টি আমলে নিয়ে র্যাব-৯ এর সিও কে অভিযোগের কারণ ব্যাখা করতে এবং সিলেট ওসমানী হাসপাতালের পরিচালকে আসামির চিকিৎসা রিপোর্ট দিতে আদেশ করেন। সে অনুযায়ী, কোর্ট থেকে পুলিশ (স্মারক নম্বর ৩৩৪) র্যাব ও ওসমানী হাসপাতাল বরাবরে আদালতের আদেশ কপি পাঠায়। রাজিব এখনো হাসপাতালে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে, এখনো রাজিবের অভিযোগের বিষয়ে কোনো কাগজপত্র আদালাতে আসেনি। আগামি ১৭ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছে আদালত।
জানতে চাইলে বনফুল এন্ড কোম্পানির এজিএম মাসুদ আহমদ সবুজ সিলেটকে বলেন,‘এতদিন হয়ে গেল, কিন্তু এখনো পরিষ্কার হলাম না, ঠিক কী কারণে খুন হল ওরা দুজন এবং কারা তাদের মূল খুনি। আমরা ঘটনার মূল কারণ ও প্রকৃত খুনিদের উদঘাটনে পুলিশকে সব ধরণের সহযোগীতা করে আসছি।’
মামলার বাদি নিহত রাজুর ভাই মাসুদ পারভেজ বলেন,‘ আমি শুরু থেকেই বলে আসছি আমি মূল খুনির বিচার চাই। এতদিন হয়ে গেল পুলিশ এখনো স্পষ্ট করে ঘটনার কারণ বলতে পারছে না।
জানতে চাইলে শাহপরাণ থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মুনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আসলে প্রকৃত কারণ সম্পর্কে এখনো কিছুই বলা যাচ্ছে না। র্যাব-পুলিশ একই সঙ্গেই তদন্ত করছি এবং আসামি ধরছি। আশা করছি, শিগগিরই আপনাদের জানানো হবে ঘটনার মূল কারণ।
প্রসঙ্গত, ৮ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৭টায় খাদিমপাড়ার রুস্তুমপুরে বিসিক শিল্প এলাকায় দুর্বৃত্তরা বনফুলের কর্মচারী রাজু মিয়া (১৯), আবু মিয়া (২৫) ও রাসেল আহমদকে (২২) কুপিয়ে আহত করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তারা রাজু ও আবুকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত রাজু চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ দরদাহের হারুনুর রশীদের ছেলে এবং আবু মিয়া শরিয়তপুরের ধামড়া ধনই গ্রামের মৃত হাসু ডাক্তারের ছেলে।