বিশ্বনাথে এবার গ্রেফতার আতঙ্ক!
ডেস্ক রিপোর্টঃ বিশ্বনাথে চলতি (জানুয়ারি) মাসের প্রথমদিকে চুরি-ডাকাতি, খুন-সংঘর্ষ, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ সংঘটিত হওয়ায় আইনশৃংখলার চরম অবনতি দেখা দেয়। প্রতি রাতে কোন না কোন বাড়িতেই ডাকাতি কিংবা চুরির ঘটনাও ঘটে। পাশাপাশি সংঘর্ষ ও খুনের মতো গুরুতর অপরাধের ঘটনাও ঘটেছে।
এতে একদিকে যেমন উপজেলাজুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয় অন্যদিকে আইনশৃংখলারও চরম অবনতি ঘটে। আতঙ্কগ্রস্থ জনসাধারণের পক্ষ থেকে আইনশৃংখলার উন্নতি চেয়ে প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের বরাবরে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডককম-এ আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে।
গত ২৪ জানুয়ারি রোববার উপজেলা পরিষদের আইনশৃংখলার সভায়ও এনিয়ে আলোচনা হয়। ওইদিন আইনশৃংখলার উন্নতির জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আসাদুল হকের নিকট স্মরকলিপি দেন ‘দৌলতপুর যুব-সংঘের’ নেতৃবৃন্দ।
গত দু’সপ্তাহে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চুর, ডাকাত, মাদক বিক্রেতা, জুয়াড়িসহ প্রায় ১১৩জনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশি গ্রেফতার এড়াতে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে অপরাধীরা। ফলে বিশ্বনাথের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি এখন অনেকটাই উন্নতির দিকে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আসাদুল হক ‘এই প্রতিনিধিকে বলেন, ২৪ জানুয়ারি আইনশৃংখলার উন্নতি চেয়ে দেওয়া স্মারকলিপি তিনি পেয়েছেন। গত দু’সপ্তাহের তুলনায় বর্তমানে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে (চুরি-ডাকাতি) বন্ধে পুলিশের পাশাপাশি সচেতন মহলকেও এগিয়ে আসার আহবানও জানিয়েছেন নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুল হক।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ জানুয়ারি থেকে ২৮ জানুয়ারি রাত পর্যন্ত গত দু’সপ্তাহে ১৪জন মাদক ব্যবসায়ী, ৫৫জন জুয়াড়ি, ২৪জন চুর ও ডাকাত ৬জন এবং ৪টি হত্যা মামলায় ৯জনকে গ্রেফতার করা হযেছে। এছাড়া নিয়মিত মামলায় শুক্রবার গ্রেফতার হওয়া আরও ৫জন থানা হাজতে রয়েছেন। এনিয়ে মোট গ্রেফতারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৩জনে। এদের অনেকের বিরোদ্ধেই বিশ্বনাথসহ বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে।
এছাড়া অন্যদের বিভিন্ন মামলা ও ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
শুক্রবার ভোররাতে মাদকদ্রব্য আইনের মামলায় সিলেটের তেতলী বেটুরিয়া গ্রামের লিটন মিয়া (৩০) ও দক্ষিণ সুরমার নিশিচন্তপুর গ্রামের আব্দুল শহীদসহ (৩৫) চুরির মামলায় ৬জন এবং মারামারি মামলায় আরও ৫জনকে গ্রেফতার করা হয়।
শুক্রবার বিকেলে মাদক ও চুরির মামলায় গ্রেফতার হওয়া ৮জনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। নিয়মিত মামলায় গ্রেফতার হওয়া বাকি ৫জন থানা হাজতে রয়েছেন। ২৮ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টায় বিশ্বনাথ থানাসহ বিভিন্ন থানায় দায়েরকৃত ৬টি ডাকাতি মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পালাতক আসমি তেরাব আলীকে (২৬) গ্রেফতার করে পুলিশ। উপজেলার পেশকারের গাও গ্রামের তেরাব আলীকে সিলেট এয়ারপোর্ট থানা এলাকা থেকে থানা পুলিশের এসাই কল্লোল গোষ্মামীসহ একদল পুলিশ গ্রেফতার করেন।
গত ২৭ জানুয়ারি বুধবার উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রাম থেকে ডাকাত সন্দেহে ওসি আব্দুল হাই’র নেতৃতত্বে শিশুসহ ১০জনকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরদিন ২৮জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে ৫জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়। এছাড়া শিশুসহ আটকৃত অপর ৫জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, ওসমানীনগর উপজেলার থানাগাঁও (সুলতানপুর) গ্রামের কমরু মিয়া (২৭), একই গ্রামের সাহেদুর রহমান (২১), ইছামতি গ্রামের মজনু মিয়া (৩৩), মশাদিয়া গ্রামের আক্তার হোসেন (২৮) ও মির্জাপুর গ্রামের আনা মিয়া (২২)।
এরআগে গত ২১ জানুয়ারি ওসি (তদন্ত) মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে উপজেলার মুন্সিরগাঁও খেলার মাঠ থেকে জুয়া খেলা অবস্থায় ৯জুয়াড়িকে গ্রেফতার করা হয়। এরা হচ্ছে, জানাইয়া মাঝপাড়ার আফিজ আলী (২০) আশক আলী (৩২), আবুল কালাম (৩০) সেলিম আহমদ (২৯), লিটন (১৯), শমছুল আলী (২৩) শরিয়ত আলী (৩৮), জানাইয়া দক্ষিণ পাড়ার মানিক মিয়া ওরফে সরাই (৫০) ও মঞ্জু মিয়া (৪০)। পরে তাদের বিরোদ্ধে জুয়া আইনে মামলার প্রেক্ষিতে জেলহাজতে পাঠানো হয়, মামলা নং (১১)।
থানার ওসি (প্রশাসন) আব্দুল হাই, ওসি (তদন্ত) মাসুদুর রহমান এই প্রতিনিধিকে বলেন, আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমরা প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
এপর্যন্ত প্রায় শতাধিক অপরাধীদের গ্রেফতার করা হয়েছে দাবি করে তারা বলেন, আমাদের (পুলিশের) ধরপাকড়ে অপরাধীরা এখন এলাকা ছাড়া। ফলে চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেফতার করা যাচ্ছেনা। তবে এরাসহ অন্য অপরাধীদের গ্রেফতারে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তারা।