১৪ বছর ধরে বন্ধ সিলেট টেক্সটাইল মিল, নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি
ডেস্ক রিপোর্টঃ ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে বন্ধ করে দিয়েছিলো সিলেট টেক্সটাইল মিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে পুণরায় চালু করে মিলটি। ২০০১ সালে আবার বিএনপি ক্ষমতায় এলো আবারো বন্ধ হয়ে যায় মিলটি। ২০০৮ সালে যখন আরেকবার ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ তখন সংশ্লিষ্টরা আশা করেছিলেন আরেকবার চালু করা হবে সিলেট টেক্সটাইল মিল।
২০০৮ এর নির্বাচনের আগে আবুল মাল আবদুল আবদুল মুহিতও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নির্বাচিত হয়ে মিলটি চালু করার। মুহিত নির্বাচিত হয়েছিলেন। টানা দুই মেয়াদে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তবু এখন পর্যন্ত চালু হয়নি সিলেট টেক্সটাইল মিল।
মাঝখানে প্রাইভেটাইজেশন কমিশন এই টেক্সটাইল মিলটি বেসরকারিখাতে বিক্রির উদ্যোগ নিলেও তাও মাঝপথে থমকে আছে।
এদিকে ১৪ বছর ধরে মিলটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় নষ্ট হয়ে পড়েছে এর কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। অনেক যন্ত্রপাতি খোয়া যাওয়ারও অভিযোগ আছে। বর্তমানে টেক্সটাইল মিলটি র্যাব-৯ এর আবাসন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
১৯৯৬ সালে ক্ষমতাসীন হয়ে টেক্সটাইল মিলটি চালু করলেও এবার টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও মিলটি চালু না করায় মিলের শ্রমিকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা।
জানা যায়, গত মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর মিলটি পুণরায় চালুর দাবিতে শ্রমিকরা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সাথে কয়েকবার দেখা করে স্মারকলিপি প্রদান করেন। অর্থমন্ত্রী শ্রমিকদের মিলটি চালুর ব্যাপারে আশ্বাসও দেন। এমনকি তিনি ও তৎকালীন শ্রমমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া পৃথকভাবে মিলটি পরিদর্শনও করেন। এতো আশ্বাসের পরও মিলটি চালু করা হয়নি।
সিলেট টেক্সটাইল মিল সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৮ সালে সিলেটে শিল্প সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় সিলেট টেক্সটাইল মিল। ফরাসি, এডিবি ঋণ এবং বিশ্বব্যাংকের অর্থ সংস্থা আইডিএ’র অর্থায়নে ১৯৭৭ সালের ১৭ আগস্ট সিলেট টেক্সটাইল মিলের জন্য ২৮ দশমিক ৮১ একর জমি ক্রয় করা হয়। পরের বছর তৎকালীন বাণিজ্য উপদেষ্টা এম সাইফুর রহমান এই মিলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৮০-৮১ অর্থবছরে মিলটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। ১৯৮৩ সালের জুনে মিলটি পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যায়। এরপর কয়েক বছর মিলটি লাভের মুখ দেখলেও অব্যবস্থাপনার কারণে ধীরে ধীরে লোকসান গুনতে থাকে।
অব্যাহত লোকসানের কারণে ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে মিলটি বন্ধ করে দেয়। এসময় শতাধিক শ্রমিককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হলেও পুণরায় চালুর আশায় কর্মরত থেকে যান ৭৭৩ জন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আবারো চালু হয় টেক্সটাইল মিলটি। ২০০১ সালে আবারো বন্ধ হয়ে যায় সিলেট টেক্সটাইল মিল। এরপর শ্রমিকদের বেতনও বকেয়া পড়তে থাকে। অবশেষে ২০০৩ সালের ৩০ জুন বকেয়া বেতন পরিশোধ না করেই অনেকটা জোর করে সাড়ে সাত শতাধিক শ্রমিককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল কর্পোরেশন (বিটিএমসি)। পরে আন্দোলন করে বকেয়া বেতন আদায় করে নেন শ্রমিকরা। কিন্তু শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিলের টাকা পরিশোধ করা থেকে বিরত থাকে বিটিএমসি।
এখনো কল্যান তহবিলের প্রায় সাত কোটি টাকা প্রতিষ্ঠানটির কাছে শ্রমিকদের পাওনা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিলেট নগরীর ইসলামপুরে অবস্থিত এই মিল বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে র্যাব-৯-এর আবাসিক দফতর হিসেবে। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে মিলটি বিক্রির জন্য দুবার টেন্ডারও আহ্বান করা হয়। কিন্তু কাগজপত্রে ত্রুটির কারণে প্রথম দফা টেন্ডার বাতিল করা হয়। দ্বিতীয় দফা ১৫ কোটি টাকা দর উঠলেও অ্যাসেস ভ্যালুর পরিমাণ প্রায় শত কোটি টাকা হওয়ায় সেটিও বাতিল করা হয়।
গত মহাজোট সরকারের আমলে আরেকদফা বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবেও সেটিও বেশীদূর এগোয়নি।
জানা গেছে, সিলেট টেক্সটাইল মিল প্রকল্পের ঋণের পরিমাণ ৯৪ কোটি ৮৭ লাখ ৭১ হাজার টাকা। এর মধ্যে পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ ৫৮ কোটি ৮২ লাখ ১৭ হাজার এবং প্রকল্প ঋণের পরিমাণ ৩৬ কোটি ৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। প্রকল্প ঋণের মধ্যে ফরাসি ঋণ ২৩ কোটি ৫৩ লাখ ৬ হাজার, এডিবি ঋণ ৫ কোটি ১১ লাখ ৩১ হাজার, আইডিএ’র ঋণ ১৫ লাখ ৭৯ হাজার এবং শেয়ার ইক্যুইটি ৭ কোটি ২৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা।