প্যারোলে গউছ : কিবরিয়া হত্যায় সম্পৃক্ত থাকলে চোখ অন্ধ হয়ে যাবে
ডেস্ক রিপোর্টঃ ‘কিবরিয়া হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকলে আমার দুই চোখ অন্ধ হয়ে যাবে। আমার সন্তানদের ওপর এর প্রভাব পড়বে।’ এ মন্তব্য করেছেন হবিগঞ্জের নির্বাচিত পৌর মেয়র জি কে গউছ। ফের পৌর নির্বাচনে জয়লাভের পর গতকাল প্যারোলে মুক্তি পেয়ে হবিগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচিত মহিলা ও পুরুষ কাউন্সিলরদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি অনেকটা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। এরপরও সহকর্মীদের শুভেচ্ছা জানাতে তিনি ভুল করেননি। বললেন, আপনারা নির্বাচিত হয়েছেন জনগণের উন্নয়ন ঘটাতে। সুতরাং সবক্ষেত্রে জণগণের উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে কাজ করবেন। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে জনগণের দাবি আদায়ে সচেষ্ট থাকবেন। গতকাল দুপুরে সিলেটের জেলা পরিষদ মিলনায়তনে সিলেট বিভাগের নির্বাচিত ১৬ মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ পড়ানো হয়। এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বেলা ১১টার দিকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয় নবনির্বাচিত মেয়র জিকে গউছকে। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলার আসামি হয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে কারাবরণ করছেন। জেল থেকে গত ৩০শে ডিসেম্বর নির্বাচনে অংশ নিয়ে ৩য়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার ছগির আলী বলেন, শপথ নিতে কারাবন্দি মেয়র জিকে গউছকে সিলেটের ভারপ্রাপ্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলাম প্যারোলে মুক্তি দিয়েছেন। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যতটুকু সময় প্রয়োজন, ততটুকু সময়ের জন্য তাকে মুক্তি দেয়া হয়। তিনি প্রায় ১৩ মাস ধরে কারাবন্দি রয়েছেন। বর্তমানে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। প্যারোলে মুক্তি দিয়ে জিকে গউছকে মাইক্রোবাসযোগে নিয়ে আসা হয় জেলা পরিষদ মিলনায়তনে। সেখানে এসে অন্যান্য সকল মেয়রের সঙ্গে শপথ পড়েন। শপথগ্রহণ শেষে জেলা পরিষদ মিলনায়নের একটি কক্ষে তিনি তার পরিষদের কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় কয়েকজন কাউন্সিলর জিকে গউছকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন। জিকে গউছ এ সময় বলেন, ‘সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় আমার বিন্দু পরিমাণ সম্পৃক্ততা নেই। কিবরিয়া হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকলে আমার দুই চোখ অন্ধ হয়ে যাবে। আমার সন্তানদের ওপর এর প্রভাব পড়বে।’ তিনি কখনো হত্যার রাজনীতি করেন না বলেও জানান। বেলা একটার দিকে জিকে গউছকে ফের সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে, শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে নিজ নিজ পৌরসভার উন্নয়নে সকলকে নিয়ে মিলেমিশে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সিলেটের নবনির্বাচিত পৌর মেয়র ও কাউন্সিলররা। শপথ গ্রহণের পর এক প্রতিক্রিয়ায় তারা বলেন, ‘সকলের সঙ্গে মিলে মিশে আমি পৌরসভার উন্নয়ন করতে চাই।’ সিলেটের গোলাপগঞ্জ পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র সিরাজুল জব্বার চৌধুরী জানান, পৌর নাগরিকরা যাতে কোনোরূপ ভোগান্তির শিকার না হন- তিনি সে চেষ্টা চালাবেন। তিনি বলেন, ছয় মাসের মধ্যে পৌরসভার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করা হবে। পৌর সদরের পানি নিষ্কাশনেও দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হবে। বুধবার দুুপুর পৌনে ১২টায় জেলা পরিষদ মিলনায়তনে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার জামাল উদ্দীন আহমেদ সিলেট বিভাগের নবনির্বাচিত ১৬ পৌর মেয়র ও ১৯১ কাউন্সিলরকে শপথ পাঠ করান। প্রথমে মেয়রদের শপথ পাঠ করানো হয়। এরপর কাউন্সিলরদেকে জেলাওয়ারী শপথবাক্য পাঠ করানো হয়। সিলেট বিভাগের ১৬ পৌরসভার নবনির্বাচিত ১৬ জন মেয়র, সংরক্ষিত নারী আসনের ৪৮ জন ও ১৪৩ জন সাধারণ কাউন্সিলর বুধবার শপথ নেন। মামলা থাকায় মৌলভীবাজারের বড়লেখার ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেহান পারভেজ রিপনের শপথগ্রহণ হয়নি। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক মিজানুর রহমানসহ সিলেটের চার জেলার জেলা প্রশাসক উপস্থিত ছিলেন। সিলেট বিভাগের ১৬ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের ১০জন, বিএনপি’র ৩ জন এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ৩ জন প্রার্থী বিজয়ী হন। শপথ গ্রহণকারী মেয়ররা হলেন, সিলেটের গোলাপগঞ্জে সিরাজুল জব্বার চৌধুরী, কানাইঘাটে নিজাম উদ্দিন আল মিজান, জকিগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান, সুনামগঞ্জ সদরে আইয়ুব বখ্ত জগলুল, ছাতকে আবুল কালাম চৌধুরী, জগন্নাথপুরে আবদুুল মনাফ, দিরাইয়ে মোশাররফ হোসেন, মৌলভীবাজারে ফজলুর রহমান, কুলাউড়ায় শফি আলম, কমলগঞ্জে জুয়েল আহমদ ও বড়লেখায় আবু ইমাম চৌধুরী কামরান, হবিগঞ্জ সদরে জিকে গউছ, মাধবপুরে হিরেন্দ্র লাল সাহা, চুনারুঘাটে নাজিম উদ্দিন শামছু, শায়েস্তাগঞ্জে ছালেক মিয়া এবং নবীগঞ্জে ছাবির আহমেদ চৌধুরী। (মানবজমিন)