নিউইয়র্কে হেইট ক্রাইমের শিকার বাংলাদেশী মজিবুর রহমান

হেইট ক্রাইমের শিকার বাংলাদেশী মুজিবুর রহমান স্থায়ী গণমাধ্যমের সাথে কথা বলছেন (ডান থেকে তৃতীয়)। ছবি- এনা।
হেইট ক্রাইমের শিকার বাংলাদেশী মুজিবুর রহমান স্থায়ী গণমাধ্যমের সাথে কথা বলছেন (ডান থেকে তৃতীয়)। ছবি- এনা।

নিউইয়র্ক থেকে এনা: এস্টোরিয়ায় বাংলাদেশী ব্যবসায়ী সরকার হকের উপর হামলার বিচার শেষ হবার পূর্বেই বাংলাদেশী অধ্যুষিত ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টারের বাসিন্দা মজিবুর রহমান হেইট ক্রাইমের শিকার হয়েছেন। গত ১৫ জানুয়ারি শুক্রবার বিকেলে (নিউইয়র্ক সময়) নিজ বাড়ির পাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পিএস-১১৯’ স্কুল থেকে ভাগনিতেক আসতে গিয়ে স্কুলের সামনে হেইট ক্রাইমের শিকার মজিবুর রহমান। মজিবুর রহমানের আত্মীয়রা জানান, ভাগনীকে আনতে গিয়েছিলেন মুজিবুর রহমান। এই সময় স্কুলের সামনেই দুই কৃষ্ণাঙ্গ তাই মুসলিম সন্ত্রাসী বলেই আঘাত করেন। প্রথম আঘাত করেন মুজিবুরের মাথায়। এতে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। এর পর দুর্বৃত্তরা তাকে এলোপাথাড়ি আঘাত করে পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন পুলিশ কল করলে সাথে সাথেই পুলিশ এসে তাকে মারাত্মক আহত অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়।
আহত মজিবুর রহমানকে দেখতেই ১৬ জানুয়ারি শনিবার সকাল থেকেই ছুটে আসেন স্থানীয় জনপ্রতিধি, মূলধারার রাজনীতিকি, কমিউনিটি ও স্থানীয় মসজিদ কমিটির নেতা, খতীবসহ সর্বোস্তরের প্রবাসী বাংলাদেশী। ঘটনার তদন্তে মাঠে নেমেছেন নিউইয়র্ক সিটির পুলিশ বিভাগের হেইট ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তারা।

হেইট ক্রাইমের শিকার বাংলাদেশী মজিবুর রহমান ( সর্ব ডানে)। ছবি- এনা।
হেইট ক্রাইমের শিকার বাংলাদেশী মজিবুর রহমান ( সর্ব ডানে)। ছবি- এনা।

১৬ জানুয়ারি শনিবার দুপুরে মজিবুরকে তার বাসায় দেখতে আসেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি স্টেট এসম্বলীম্যান লুইস সিপুলভেদাসহ অনেকে। যাদের মধ্যে ছিলেন কমিউিনিটিরর নেতারাও। ব্রঙ্কসের বাংলাদেশেী কমিউনিটি নেতা ও আইনজীবী মোহাম্মদ এন মজুমদার ও বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহীম হাওলাদারসহ প্রায় অর্ধশত মানুষ।
ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সবধরেন আইনী সহায়তার আশ্বাস দেন তারা। শনিবার নিউইয়র্ক সিটির সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল ঘটনার তদন্তে মাঠে নেমেছেন। এসময়ে, কমিউনিটি এবং মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর উপস্থিতিও ছিল বেশ লক্ষ্যনীয়। হেইট ক্রাইমের শিকার আহত মজিবুরকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনও করেন তদন্তকারি দলটি।
ব্রঙ্কসের বাংলাদেশী অধ্যুষিত পার্কচেস্টারের ১৯৭৬ হ্যাভিল্যান্ড এভিউনিউস্থ মজিবুরের বাড়ির পাশেই অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি যেখানে তিনি হেইট ক্রাইমের শিকার হলেন। এসময়ে, নিজ বাসার কাছের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুজন মুখোশধারি কৃষ্ণাঙ্গ দু’জন যুবকের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত মজিবুর নিভু নিভু চোখে গণমাধ্যমের কাছে ঘটনার বর্ণনা দেন।
এসময়ে মজিবুর বলেন, আমি আমার ভাগ্নির জন্য অপেক্ষা করছিলাম স্কুলের ঠিক সামনে। হঠাৎ করে মুখোশধারি দুজন কালো যুবক এসে আমাকে কিল ঘুঁষি দিতে থাকে। কোন বুঝে উঠার আগেই আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। এরপর হাসপাতালে গেলে জ্ঞান ফিরে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, আমার নাকে বড় ধরণের ক্ষত হয়েছে (নেসাল বোন) নাকে হাঁড় ভেঙ্গে গেছে।
এঘটনার নিন্দা জানিয়ে, হামলাকারিদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি স্টেট এসম্বলীম্যান লুইস সিপুলভেদা। তিনি বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার বেশীরভাগই হচ্ছেন বাংলাদেশী কমিউনিটি। মজিবুর একজন ভালো মানুষ। আমি তাকে চিনি। তিনি এভাবে হামলার শিকার হবেন এটা মেনে নেয়া যায় না। ইসলাম কিংবা যে কোন ধর্মের লোকই হোক না কেন; কাউকে আঘাত করা কিংবা হেইট ক্রাইমের শিকার হওয়া এটা কাম্য নয়। আজকে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন। আমি বিশ্বাস করি দ্রুত তারা হামলাকারিদের গ্রেফতার করবেন।  ঘটনার প্রতিবাদে শিগগিরই ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশীদের উদ্যোগে বড়ধরণের বিক্ষোভ কর্মসূচির পালনের ঘোষণাও দেন কমিউনিটির নেতারা।