সিলেটে স্থাপিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের কিডনি হাসপাতাল
ডেস্ক রিপোর্টঃ সিলেটে স্থাপিত হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের কিডনি হাসপাতাল। শহরতলীর টুকেরবাজাস্থ সিলেট-বাদাঘাট সড়কের নাজিরের গাঁওয়ে স্থাপন করা হচ্ছে এ হাসপাতাল।
’৭১-এ পাকিস্তানী হায়েনাদের হাতে নিহত সিলেট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের তৎকালীন চিকিৎসক শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদের সন্তান, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. জিয়াউদ্দিন আহমদ-এর উদ্যোগে এবং ঢাকাস্থ ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশন এন্ড রিচার্স হসপিটাল-এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। পিপিপি প্রজেক্টের আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে সরকারের তরফ থেকে ৮০% এবং বিনিয়োগকারীরা ২০% অর্থ বিনিয়োগ করবেন। প্রকল্পটি দ্রুততার সাথে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশন এন্ড রিচার্স হসপিটাল-এর প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান চেয়ারপার্সন প্রফেসর ডা. হারুনুর রশীদ জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কিডনি রোগীরা সিলেটেই আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা পাবেন। তাদেরকে চিকিৎসার জন্য আর দেশের বাইরে যেতে হবে না। গরীব ও দুঃস্থ রোগীরা স্বল্পমূল্যে, কোন কোন ক্ষেত্রে বিনামূল্যেও চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
এদিকে, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন এন্ড কনভার্শন ওয়ার্কশপ ওনার্স এসোসিয়েশন সিলেট বিভাগীয় কমিটির সভাপতি এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস, ডিস্ট্রিবিউটারস, এজেন্টস্ এন্ড পেট্রোলপাম্প ওনার্স এসোসিয়েশন সিলেট বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমদ চৌধুরী প্রায় ৮ কোটি টাকা মূল্যের ১১০ শতক ভূমি বিনামূল্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দান করেছেন।
উদ্যোক্তারা শুক্রবার বিকেলে নাজিরের গাঁও এলাকায় জুবায়ের আহমদ চৌধুরীর দানকৃত ভূমি পরিদর্শন করেন এবং প্রশংসনীয় কর্মের জন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।
প্রফেসর ডা. জিয়াউদ্দিন আহমদ এবং অন্যতম উদ্যোক্তা মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অবঃ) মোঃ আব্দুস সালাম বীর প্রতীকসহ পরিদর্শনকালে অন্যদের মধ্যে ছিলেন ডা. ফাতেমা আহমদ, এফআইভিডিবির পরিচালক যেহীন আহমদ, ডা. নাজমুস সাকিব, প্রকৌশলী মোস্তফা শাহরিয়ার, শামীম আহমদ চৌধুরী, ফরিদা নাসরিন, খসরু সিদ্দিকী এবং ইফতেখার আলী চৌধুরী বাবলা।
এই প্রকল্পের মূল উদ্যোক্তা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কিডনি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. জিয়াউদ্দিন আহমদ বলেন, সিলেটে প্রচুর কিডনি রোগী রয়েছেন। কিন্তু সে অনুযায়ী মানসম্পন্ন চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। সিলেটের কিডনি রোগীদের সুচিকিৎসার জন্য ঢাকা অথবা দেশের বাইরে যেতে হয়, যা খুবই কষ্টকর এবং প্রচুর ব্যয়সাপেক্ষ। ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশন এন্ড রিচার্স হসপিটাল-এর শাখা হিসেবে সিলেটে এই হাসপাতালটি স্থাপিত হলেও এখানকার চিকিৎসা সেবা হবে আন্তর্জাতিক মানের। একই সাথে শুধু সিলেটের নয়, জাতীয় পর্যায়ে এ হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ানদের যথাযথ প্রশিক্ষণও দেয়া হবে। এ হাসপাতালটি স্থাপিত হলে, দেশের কিডনি রোগীদের আর দেশের বাইরে যেতে হবে না। পাশাপাশি বিদেশী ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ানরাও নিয়মিত দায়িত্ব পালন করবেন।
অন্যতম উদ্যোক্তা মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অবঃ) মোঃ আব্দুস সালাম বীর প্রতীক বলেন, ঢাকার বাইরে ইতোমধ্যেই পাবনায় একটি কিডনি হাসপাতাল স্থাপনের কাজ চলছে। খুব শিগগিরই তা সম্পন্ন হবে। অনুরূপভাবে সিলেটেও একটি হাসপাতাল স্থাপনের প্রক্রিয়া আজ থেকে শুরু হলো। তবে সিলেটে হাসপাতাল স্থাপনের সুবিধা হলো এখানে বিনামূল্যে ভূমি পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েছেন ভূমি পাওয়া গেলে খুব শিগগিরই হাসপাতাল স্থাপনের কাজ শুরু হবে এবং দ্রুততার সাথে তা সম্পন্ন করা হবে।
তিনি বলেন, সিলেটের এই হাসপাতালটি স্থাপনের ক্ষেত্রে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ১২ থেকে ১৫ কোটি টাকার প্রয়োজন। আর অপারেশন থিয়েটার, ডায়লিসিস সেন্টারসহ পুর্ণাঙ্গ হাসপাতালে রূপ পেতে গিয়ে প্রায় ৩০ কোটি টাকারও বেশী লাগবে।
কর্নেল (অবঃ) মোঃ আব্দুস সালাম বলেন, সিলেটের কিডনি হাসপাতালটি স্থাপনের ক্ষেত্রে ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশন এন্ড রিচার্স হসপিটাল তত্বাবধান করবে এবং দেশের বাইরে থেকে প্রফেসর ডা. জিয়াউদ্দিন আহমদ সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করে যাবেন।
স্বেচ্ছায় ভূমিদাতা লায়ন জুবায়ের আহমদ চৌধুরী বলেন, আজ আমি খুবই আনন্দিত, আমার খুব ভাল লাগছে। কারণ প্রফেসর ডা. জিয়াউদ্দিন আহমদ তাঁর এই মহতি উদ্যোগের সাথে আমাকে সংযুক্ত করেছেন। আমাকে সম্পৃক্ত করায় আমি প্রফেসর ডা. জিয়াউদ্দিন আহমদসহ উদ্যোক্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।