ফেঁসে গেলেন কনস্টেবল, চতুরতায় ওসির রক্ষা
ডেস্ক রিপোর্টঃ এবার বরিশালে পুলিশের হাতে বেধড়ক পিটুনিতে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে হাসপাতালে যেতে হয়েছে। সড়কপথে গাছ ফেলে রাখায় তা নিয়ে বাকবিতণ্ডায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং গাড়িচালক কনস্টেবল উভয় মিলে এই ঘটনার জন্ম দিয়ে পুলিশি নির্যাতনের আরেকটি উদাহরণ তৈরি করলো। ঘটনাটি আগৈলঝাড়া এলাকার। শনিবার এই ঘটনায় সামান্য উত্তাপ ছড়ালেও উপজেলা আওয়ামী লীগ রহস্যজনক কারণে এখন নিরব। কিন্তু পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে উঠতে পারে এমন সম্ভাবনার আলোকে থানার পিকআপ ভ্যান চালক কনস্টেবল মোকলেছুর রহমানকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। অবশ্য ঘটনার মূল নায়ক সংশ্লিষ্ট থানার ওসি মনিরুল ইসলাম রয়েছেন সুরক্ষায়।
কেন এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলো না তার নেপথ্যের কারণও জানা গেছে। আহত ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য মতে, আগৈলঝাড়ার গৈলা এলাকায় কাঁঠালবাড়ী নামক স্থানে কিছু গাছ কেটে সড়কের একাংশে ফেলে রাখা হয়। ওই গাছের মালিক ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি বাদল সেরনিয়াবাত সেটি সরানোর অপেক্ষায় পার্শ্ববর্তী একটি দোকানে চা খাচ্ছিলেন।
এ সময় ওই সড়ক পথ দিয়ে থানার পিকআপ ভ্যানে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চালককে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে সড়কে ওই গাছের জন্য তাদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে গাড়ি থামিয়ে গাছের মালিক কে? তা স্থানীয়দের কাছে জানতে চান। নাম ও তার অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর পাশ্ববর্তী দোকানে থাকা বাদল সেরনিয়াবাতকে ডেকে এনে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একচোট নেন। অর্থাৎ পেটাতে থাকেন। এ সময় চালক মোখলেছুর রহমান তার সাথে যুক্ত হয়ে ওই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে আটকের উদ্দেশ্যে থানায় নিয়ে যেতে টানাহেচড়া শুরু করেন।
পুলিশি এই নির্যাতনের দৃশ্যে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন স্থানীয়রা এবং প্রতিবাদে অগ্রসর হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশ কর্মকর্তা উল্টো পথে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। পরে দলীয় নেতার ওপর পুলিশি এই নির্যাতনের খবর উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদেরকে জানানো হলেও রহস্যজনক কারণে কেউ এ বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখেনি।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র এমন তথ্য দিয়ে বলছে, ওই পুলিশ কর্মকর্তার সাথে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয় সাংসদ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সু-সম্পর্ক রয়েছে। আর এ করণেই সবাই অনেকটা নিরব। তবে বিষয়টি নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বিকেলেই জেলা পুলিশ সুপার এক নির্দেশে পিকআপ ভ্যান চালক কনস্টেবল মোকলেছুর রহমানকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে নেন। গৌরনদী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। কিন্তু ঘটনার অনুঘটক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ব্যাপারে কেন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি তার সদুত্তোর দিতে পারেননি তিনি। শুধু বলছেন, ‘এটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিষয়।’
এদিকে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামের দাবি, তিনি ওই ঘটনার সময় স্থানীয় সাংসদের বাড়িতে ছিলেন। সুতরাং ঘটনাস্থলে থাকা নিয়ে তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা অবান্তর। একাধিক অনুসন্ধানী সূত্র নিশ্চিত করেছে, সাংসদ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ আগৈলঝাড়ার সেরাস্থ বাড়িতে থাকলেও ওখানে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ওই সময় দেখা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, তিনি ঘটনাস্থলের অদূরেই প্রথমে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরে আসেন এবং নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তবে সাংসদের সাথে তার সু-সম্পর্ক রয়েছে তা নিশ্চিত করতে কৌশলী এই পুলিশ কর্মকর্তা নানা ভূমিকা রেখে স্থানীয়দেরকে এক প্রকার ভয়-ভীতির মধ্যে রাখেন। অবশ্য এ সম্পর্কে হাসানাতের কোনো মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার একেএম আক্তারুজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান, প্রাথমিক অবস্থায় থানার পিকআপ চালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসায় তিনি যথার্থ পদক্ষেপ নিয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট থাকলে পরবর্তীতে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, জেলা পুলিশ কর্মকর্তারা বিভিন্ন মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছেন ঘটনার সাথে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। কিন্তু কোনো এক সুপারিশে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। আগৈলঝাড়ায় এমন এক সময় এই পুলিশি নির্যাতনের ঘটনা ঘটলো যখন ঢাকায় একজন ব্যাংক কর্মকর্তা ও ঢাকা (দক্ষিণ) সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের পরিদর্শকে অ কারণে পুলিশ পিটিয়ে আহত করে। এ নিয়ে গোটা দেশব্যাপী তোলপাড় চলছে।
শনিবারও ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনে একজন হিজড়াকে পুলিশ হয়রানি করে। তারই ধারাবাহিকতায় আগৈলঝাড়ায় ঘটলো পুলিশি নির্যাতনের সর্বশেষ উদাহরণ। ব্যতিক্রম এখানেই, এবার পুলিশের হাতে আওয়ামী লীগ নেতা নির্যাতনের শিকার। আহত বাদল সেরনিয়াবাতকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা সঙ্কটপূর্ণ না হলেও জখম কম হয়নি। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আহতকে দেখতে যাওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।