মধ্যরাতে হাসপাতালে এসে রাব্বীকে প্রাণনাশের হুমকি
ডেস্ক রিপোর্টঃ পুলিশের নির্যাতনে আহত ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বীকে মধ্যরাতে ছদ্মবেশে হাসপাতালে গিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর দুই ব্যক্তি পূর্ব-পরিচিতের ভান করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাব্বীর কেবিনে যায়। এরপর সরাসরি তার কাছে গিয়ে বসে। শারীরিক অবস্থা জানতে না চেয়ে প্রথমেই জিজ্ঞেস করে- ‘ঘটনার সময় ক্ষুদে বার্তায় ‘কাদের কেস’ (ইতিপূর্বে পুলিশি নির্যাতনের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল কাদের) বলতে কী বোঝাতে চেয়েছিলেন। আপনি যে এত কথা বলতেছেন, নিজের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করছেন? নির্যাতিত হওয়ার পর যারা এভাবে বাড়াবাড়ি করেছিল তাদের পরিণতি কী হয়েছিল জানেন। এ ধরনের ঘটনায় শেষে মেরে ফেলে দেয়া হয়। শেষে উল্টো মামলার শিকার হয়। হাত, পা ফেলে দেয়।’ তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে রাব্বী আরও বলেন, ‘আপনি কী মুসলমান?। তাহলে দুই রাকায়াত নফল নামাজ পড়ে ঘুমান। আমরা আবার আসব।’
গত বৃহস্পতিবার রাতে রাব্বীকে এসব কথা বলার সময় একই কক্ষে কিছু দূরে তার ৬ বন্ধু উপস্থিত ছিলেন। বন্ধুরা রাব্বীর কাছে ওই দু’জনকে চিনেন কিনা জানতে চাইলে ‘না’ বলে জানান তাদের। এরপর রাব্বীর বন্ধুরা প্রথম থেকে সন্দেহভাজন ওই দু’ব্যক্তির কাছে তাদের পরিচয় জানতে চান। তখন তারা একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক পরিচয় দেন। এরপর তারা পরিচয় পত্র বা ভিজিটিং কার্ড দেখতে চাইলে তারা তা দেখাতে পারেননি। পরে রাব্বীর বন্ধুরা ছবি তুলতে চাইলে মুখ ঢেকে দ্রুত কেবিন থেকে বেরিয়ে পড়ে।
ওই সময় উপস্থিত রাব্বীর বন্ধু জাহিদ হাসান মানবজমিনকে বলেন, তখন রাব্বীর আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব মিলে আমরা ৬ জন কেবিনে ছিলাম। ওই দু’জনকে ঢুকতে দেখেই সবার সন্দেহ হয়। তবু রাব্বীর পরিচিত মনে করে তার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু তারা সাংবাদিক পরিচয় দেয়। তাদের পরিচয় দেয়া বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলটির পরিচয় পত্র বা ভিজিটিং কার্ড দেখতে চাইলে বলে ফ্রিল্যান্সে কাজ করে। ওই চ্যানেলে ফোন করে তেমন কেউ নেই বলে জানা যায়। এরপর ছবি তুলতে গেলে মুখ ঢেকে বেরিয়ে দ্রুত সটকে পড়েন। এরপর রাব্বীকে হুমকি দেয়ার বিষয়টি জানি।
গতকাল বিকালে হাসপাতালের কেবিনে গিয়ে দেখা যায়, কেবিনের শয্যায় অনেকটা মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থায় শুয়ে আছেন গোলাম রাব্বী। কিছুক্ষণ পর পর গায়ে খিঁচুনি দিয়ে চমকে উঠছেন। ঘুমানোর চেষ্টা করেও কিছুক্ষণ পর পর আঁৎকে উঠছিলেন। কেঁদে ফেলছেন মাঝে-মধ্যে। চোখে কিছুটা ঘুম এলেই প্রলাপ বকছেন ‘আমি বাঁচবো না। আমাকে মেরে ফেলবে। আমি লিখতে চাই। পড়তে চাই। কিন্তু কোন কাজ করতে পারছি না। মাথা কাজ করছে না। আমি কোনদিন সিগারেটও খাইনি। ওরা বলে আমি নাকি ইয়াবা ব্যবসায়ী। আমি ঘুমাতে চাই। আমার মাথা কাজ করছে না কেন।’ ইত্যাদি।
গতকাল বিকালে তাকে হাসপাতালে দেখতে যান বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. আবুল কাসেম। তিনি মানবজমিনকে বলেন, গভর্নর আতিউর রহমান আমাকে পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক তার পাশে থাকবে। চিকিৎসার ব্যয় বহন করবে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। দেখা যাক কী হয়।
উল্লেখ্য, গত ৯ই জানুয়ারি রাতে মোহাম্মদপুরের খালার বাসা থেকে কল্যাণপুরে নিজের বাসায় যাওয়ার সময় ওই থানার উপ-পরিদর্শক মাসুদ সিকদার তাকে নির্যাতন করে ও ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়ের চেষ্টা করে। ইতিপূর্বে মাসুদ শিকদারকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। (মানবজমিন)