কোনো মাদ্রাসাছাত্রকে গ্রেপ্তার করলে মেনে নেয়া হবে না: শফী
ডেস্ক রিপোর্টঃ হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী ব্রাক্ষণবাড়িয়ার ঘটনায় মাদ্রাসা ছাত্রদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হলে তার বিরুদ্ধে হুশিঁয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মামলার মাধ্যমে কোনো মাদরাসা ছাত্রকে ‘গ্রেপ্তার বা হয়রানি’ করা হলে সেটি বরদাশত করা হবে না । একই সাথে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ স্মৃতি যাদুঘরসহ পুরো শহরে ব্যাপক তাণ্ডবের পর এনিয়ে কেউ ‘উস্কানি’ (বিচার চাইলে) দিলে এর পরিনাম ভয়াবহ হবে বলেও হুশিয়ারি দেন। সারাদেশকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া না বানানোরও পরামর্শ দেন কওমী মাদারাসা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান আহমদ শফী।
প্রধান অতিথির ভাষণে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের মুফতিয়ে আযম আল্লামা মুফতি হাবিুর রহমান খায়রাবাদী বলেন, ‘মহান আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা, হযরত মুহাম্মদ সা. আমাদের নবী, এটাই আমাদের আকিদা; সিরাতুল মুস্তাকিম আমাদের চলার পথ। আমাদের জীবনে সকল অশান্তি, নৈরাজ্য ও হতাশা, ভূমিকম্পের গযব, এবং মানবসৃষ্ট দুর্যোগ থেকে মুক্তির জন্য জীবনের সর্বস্তরের আল্লাহর দাসত্ব, রাসুলের পূর্ণাঙ্গ আদর্শ অনুসরণ, তাকওয়া, খোদাভীতি ও মহান আল্লাহর কাছে কিয়ামতের দিন জবাবদিহির কথা স্মরণ রাখতে হবে।’
শুক্রবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি মাঠে হেফাজতে ইসলামের দুই দিনব্যাপী ইসলামী মহাসম্মেলনের শেষ দিনে তিনি এসব কথা বলেন।
হেফাজতে আমির বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী কওমী মাদরাসা জামিয়া ইউনুছিয়ায় পুলিশ গুলি করে মাদরাসা ছাত্রকে হত্যা করেছে। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলছি, আমরা সর্বোচ্চ ধৈর্যের দৃষ্টান্ত দেখিয়েছি। আমাদের ধৈর্য ও শৃঙ্খলাবোধকে দুর্বলতা ভেবে ইসলামবিদ্বেষী কোনো কোনো মহল বারবার উস্কানি দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে; তাদের ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনায় মাদরাসাছাত্র বা আলিম-ওলামাকে মামলায় জড়ানো কিংবা হয়রানি বরদাশত করা হবে না। সারাদেশকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বানাবেন না।’
যদিও গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, মাদরাসা ছাত্র নিহতের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অঙ্গন ও রেল স্টেশনে কয়েক দফা তাণ্ডব চালিয়ে প্রায় ৭০ কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন মাদরাসা ছাত্ররাই।
এছাড়া সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ স্মৃতি যাদুঘরও রক্ষা পায়নি তাদের হাত থেকে। যদিও অভিযোগটি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে সেটিকে ‘দুস্কৃতিকারীর কাজ’ বলে দাবি করেছেন জামিয়া ইসলামীয়া ইউনুছিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল মুফতি মোবারক উল্লাহ।আর এঘটনায় ৮টি মামলায় ৮ হাজারের অধিকজনকে আসামি করা হয়েছে। প্রত্যাহার করা হয়েছে সার্কেল এএসপি ও থানার ওসিকে।
সম্মেলনে আহমদ শফী আরো বলেন, ‘সরকারের ভেতরে ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিকচক্রের বড় বড় রাঘববোয়ালরা ঘাপটি মেরে আছে। ইসলাম ও আলিম-ওলামাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপকারী এসব শয়তানদের বিরুদ্ধেও সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশের সংবিধান থেকে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস কথাটি বাদ দিয়ে এটাকে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে কুফরী সংবিধানে পরিণত করা হয়েছে। আগে ঈমান শুদ্ধ হতে হয় তার নামায-রোজা ইবাদত বন্দেগী শুদ্ধ হবে। ঈমানের গোড়ায় গলদ রেখে কেবল নামাযী আর পরহেযাগার সাজতে গেলে আখিরাতে আল্লাহর কাছে এসবের কোনো মূল্য থাকবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘রাষ্ট্রের যারা কর্ণধার, রাজনীতির যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাদের দায়-দায়িত্ব অনেক বড়, আল্লাহর কাছে প্রতিটি বিষয়ে তাদেরকে জবাব দিতে হবে। জনগণের অধিকার, তাদের শান্তি-সমৃদ্ধি ও দেশের স্বাধীনতা রক্ষার ক্ষেত্রে জাতীয় ঐকমত্য খুবই জরুরি। পরস্পরের প্রতি হিংসা ও বিদ্বেষ, প্রতিপক্ষকে নির্মূল ও ধ্বংস করার চিন্তা থেকে বেরিয়ে না এলে জাতি হিসেবে আমরা এক সময় বিলিন হয়ে যাবো। তাই সময় থাকতে সকলকেই সংশোধন হতে হবে।’
বাদ জুমা থেকে চার অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন, আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী, মাওলানা মুফতি মুজাফফর আহমদ পটিয়া, মাওলানা মুহাম্মদ ইদরিস নাজিরহাট ও মাওলানা মুহাম্মদ শফী (বাথুয়া)।