মৌলভীবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা অনুষ্টিত

Moulvibazar Fish (14)বিশ্বজিৎ রায়, কমলগঞ্জ প্রতিনিধিঃ প্রতি বছরের ন্যায় এবারও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পৌষ সংক্রান্তি উৎসব উপলক্ষ্যে মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকায় ৩দিন ব্যাপী ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা অনুষ্টিত হয়েছে। এ উৎসবে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে তৈরী হয় নানা ধরনের পিঠা পুলি ও সুস্বাদু খাবার। তার একটি বড় অংশ হচ্ছে বাজার থেকে বড় আকারের মাছ কিনে খাবার তৈরী করা।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুর এলাকায় ১৩ জানুয়ারী বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া ১৫ জানুয়ারী শুক্রবার পর্যন্ত তিন দিন ব্যাপী চলে এই ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা।
স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর তীরে প্রায় দুইশত বছর পূর্ব থেকে চলে আসছে এ মেলা। এখনও তা চলছে তবে মাছের মেলাটি এখন সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়ে তিনদিনে হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মৎস ব্যবসায়িরা চারপাশের ডালায় সাজিয়ে বসে বিশাল বিশাল মাছের সমাহার দেখতে ও কিনতে আসা হাজারো মানুষের ভিড় নামে এ মেলায়। কুশিয়ারা নদী, সুরমা নদী, মনু নদী, হাকালুকি হাওর, টাঙ্গুগুয়ার হাওর, কাওয়াদিঘি হাওর, হাইল হাওরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মৎস্য ব্যবসায়ীরা রুই, কাতলা, বোয়াল, গজার, বাঘ, আইড় মাছসহ বিশাল আকৃতির মাছ নিয়ে আসেন এ মেলায়। মৎস্য ব্যবসায়ি আবুল মিয়া জানান, পশ্চিমে হবিগঞ্জ জেলার নবিগঞ্জ উপজেলা, উত্তরে কুশিয়ারা ও সিলেট জেলার বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর উপজেলা মৎস্য ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী দেশের সবচেয়ে বৃহৎ মাছের মেলা। যদিও মাছের মেলা নামে পরিচিত মাছ ছাড়াও বিভিন্ন কয়েক হাজার দোকান বসে কুশিয়ারার তীরজুড়ে। মেলায় মাছ ছাড়াও ফার্নিচার, গৃহস্থলী সামগ্রী, খেলনা সামগ্রী, নানা জাতের দেশীয় খাবারের দোকানসহ গ্রামীণ ঐতিহ্যের দোকানও স্থান পায়। এছাড়া শিশুসহ সব শ্রেণির মানুষকে মাতিয়ে তোলার জন্য ছিল বায়োস্কোপ ও চরকি খেলা। আগে এই মাছের মেলায় স্থানীয় বিভিন্ন হাওর-বাওরের, নদ-নদীর মাছ নিয়ে আসতো জেলেরা। এখন মৎস্য খামারগুলোর মাছতো আসেই। আসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মৎস্য ব্যবসায়ীদের বিরাট বিরাট চালান। এবার এ মেলা ইজার নেওয়া হয়েছে ১৭ লক্ষ টাকায়।
মেলার দর্শনার্থীরা জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে এ জাতীয় মেলার আয়োজন করলে মাছের সঠিক প্রজনন ও বিলুপ্ত প্রজাতি সংরক্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ এই মেলার জন্য প্রতিযোগিতামূলক ভাবে বৃহৎ আকৃতির মাছ উৎপাদন করবে মাছ চাষিরা। মেলায় বৃহৎ মাছ আমাদানিকারক ও উৎপাদনকারীর জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন বলেও জানান তারা।