বঙ্গবন্ধুর খুনীকে দেশে ফিরিয়ে নিতে মার্কিন সরকারের সহযোগিতা চাইলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
‘আইএস হোক আর জঙ্গি হোক আমরা সব নিয়ন্ত্রণ করছি’
নিউইয়র্ক থেকে এনাঃ আমেরিকায় পলাতক বঙ্গবন্ধুর একজন খুনীকে দেশে ফিরিয়ে নিতে মার্কিন সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ ব্যাপারে আইনি জটিলতা দূর করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাসও পাওয়া গেছে। আমেরিকা সফরে এসে গত ১৪ জানুয়ারি তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে এই দাবি জানান। পরে একই দিন সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে এক আলোচনা সভায় এ তথ্য জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। একই অনুষ্ঠানে জাসাদ নেতা মঈদুদ্দিন খান বাদল এমপি বলেন, সাকা ফাঁসিতে দেশে একটা কাক পঙ্খিত পায়খানা করেনি।
‘১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস’ উপলক্ষে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের পালকি সেন্টারে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত এই আলোচনা সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আরো বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দম্ভ দেখেছিলাম। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই দম্ভ ভেঙে দিয়েছেন। আর এটা শুধু শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব। তিনি বলেন, আমরা অনেক নেতা দেখেছি, যারা ভোল পাল্টে নানান ধরনের উল্টাপাল্টা কথা বলেন। এমনকি ওয়ান ইলেভেনের পরেও অনেক কথা বলতে শুনেছি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যার কোনো তুলনা হয় না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের চতুর্থতম নেতা, যিনি তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। তিনি পৃথিবীর যোগ্য নেতাদের মধ্যে ১৩তম নেতা। শেখ হাসিনা কারো রক্তচক্ষুকে ভয় পান না বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। তিনি যোগ্য নেতার যোগ্য কন্যা। তার হাতে আজ বাংলাদেশ। আমরা অনেক ষড়যন্ত্র দেখেছি। কোনো ষড়যন্ত্র শেখ হাসিনাকে পেছনে টানতে পারেনি।
পদ্মা সেতুর কথিত দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, আমাদের দোষারোপ করা হয়েছিল যে আমরা নাকি পদ্মা সেতু নিয়ে চুরি করেছি। অথচ সমস্ত হিসাব নিকাশ করে দেখা গেলো সব ভুল। আজ সেই পদ্মা সেতু হচ্ছে। পদ্মা সেতুর সঙ্গে বাংলাদেশের চেহারাও পাল্টে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আজ আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আজ আমাদের কোথাও হাত পাততে হয় না। আমরাই বরং এখন পণ্য বিদেশে রপ্তানি করছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন আর পরনির্ভরশীল নই। যুক্তরাষ্ট্র জানতে চেয়েছিল আমরা কী চাই। কিন্তু আমরা তাদের বলেছি আমরা এখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছি। সন্ত্রাস দমনে আমরা সহযোগিতা চাই। আমরা সন্ত্রাস মোকাবেলা করছি। আইএস হোক আর জঙ্গী হোক আমরা সব নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি। তিনি ষ্পষ্ট করে বলেন, আইএস আমাদের দেশে নেই। দু-এজন যা-ও আছেন তারা আইএসের কর্মকা- বিশ্বাস করে। আমরা তাদেরও সনাক্ত করেছি। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য থাকলে আমরা সেই তথ্য আদানপ্রদানে সহযোগিতা চেয়েছি।
জামায়াত নিষিদ্ধের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আদালতে এ ব্যাপারে শুনানি চলছে। এটা এখন আদালতের বিষয়। এ ব্যাপারে আর কথা না বলাই ভাল। তবে জামায়াতের পেছনে কারা আছে তা সবাই ভাল করে জানে।
মাঈন উদ্দিন খান বাদল তার বক্তব্যে বলেন, বিএনপি নেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দক্ষতার কাছে পরাজিত হয়েছেন। তিনি রাজনীতিকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা না করে পেট্রোল বোমার সংস্কৃতি চালু করেছেন। তার ওই হ্যাতযজ্ঞ সংস্কৃতিকে দেশ ও জাতি প্রত্যাখ্যান করেছে। এরপর তিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে কটূক্তি করেছেন। যা কাম্য নয়। আমি পরিস্কার করে বলতে চাই- শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যে ভাবে এগিয়ে চলছে, দেশ বিরোধী কোন শক্তি তাকে দমিয়ে রাখতে পারবে না।
এসময়ে বাদল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের দেশের চেয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অনেক শক্তিশালী যা বঙ্গবন্ধু দেখিয়ে গেছেন। সমালোচনা না করে আপনাদের সংবিধান ও আমাদের সংবিধান পড়ে দেখুন।
বিএনপি-জামায়াতকে উদ্দেশ্য করে জাসদের নেতা আরো বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার পক্রিয়া নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। আমরা অনেকের বিভিন্ন হুঁঙ্কার শুনেছি। ওমুকের ফাঁসি হলে এই হবে! তমুকের ফাঁসি হলে দেশে এই ঘটে যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। বিএনপির অনেক নেতা বলেছিলেন না সাকা চৌধুরীর ফাঁসি হলে পুরো চট্টগ্রাম ধ্বংস হয়ে যাবে? প্রবাসীদের উদ্দেশ্য বলে কই, আপনারা কী তা দেখেছন? তিনি অনেকটা তাচ্ছিল্য করে বলেন, আমি বেশী বাজে করে বলতে চাই না। সাকা চৌধুরী ফাঁসিতে দেশ ধ্বংস তো দুরের কথা ‘একটা কাক-পক্ষীও পায়খানা করেনি’। অনেক দেশের নেতা ও সরকার প্রধান ফোন করেছেন শেখ হাসিনাকে। বান কী মুনের ফোনকে প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব দেয়নি। আমি এখনো বলছি বাংলাদেশে শেখ হাসিনার মত এত সাহসী লীডার অতীতেও ছিলো না। আগামীতেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। যিরি কারো রক্তচক্ষুকে ভয় করে না বলেই আজকে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে গ্রহণযোগ্য একটি মডেল দেশের রূপ নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জাসদ কার্যকরী সভাপতি মঈন উদ্দিন খান বাদল এমপি ও বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাজ আজাদের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ডা. মাসুদুল হাসান, সহ-সভাপতি আক্তার হোসেন, সৈয়দ বসারত আলী, আবুল কাশেম, সামসুদ্দিন আজাদ ও লুৎফুল কবীর, যুক্তরাষ্ট্র জাসদ সভাপতি আব্দুল মুসাব্বির, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহিম বাদশা ও ফারুক আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ আবুল মনসুর খান, যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগ সভাপতি কাজী আজিজুল হক খোকন, নিউইয়র্ক স্টেট আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শাহীন আজমল, সিটি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় নেতা সাখাওয়াত বিশ্বাস প্রমূখ।