ওসমানীনগরে ‘জমির বদলে ওরা লন্ডনি মেয়ে চায়’ : তটস্থ জেবু চৌধুরী
ডেস্ক রিপোর্টঃ ওসমানীনগরের কচপুরাই গ্রামের জেবু বেগম চৌধুরী। সন্তানদের নিয়ে বসবাস করেন লন্ডনে। মেয়ে বিয়ের বয়সী। দেশে আসার আগেই একই গ্রামের মিফতা মিয়া তার ছেলের জন্য জেবু চৌধুরীর মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান। কিন্তু জেবু চৌধুরী ওই বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হননি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন মিফতা মিয়া। ছেলে জুয়েলের জন্য লন্ডনি কইন্যাকে না পেয়ে তাদের দেশে থাকা সম্পত্তি দখলে নিয়েছে। ছিনিয়ে নিয়েছে জেবু চৌধুরীর বৃটিশ পাসপোর্ট, টাকাসহ স্বর্ণালংকার। এখন বলছে, ‘লন্ডনি কইন্যা মেয়েকে দিন, নতুবা জমি ছেড়ে দিন।’ এ অবস্থায় রীতিমতো অসহায় হয়ে পড়েছেন জেবু চৌধুরী। মামলা করলেও প্রভাবশালী এক নেতার দাপটের কারণে পুলিশেরও মুখ বন্ধ। গতকাল সিলেটে সংবাদ সম্মেলনে জেবু বেগম আর্তি জানিয়ে বলেন, ‘ভাই আমাকে বাঁচান। ওরা জমি দখল করে আমার মেয়েকে নিতে চাইছে। পুলিশ কিছুই করছে না।’ ওসমানীনগরের কচপুরাই গ্রামে জেবু বেগমের পিতার বাড়ি। পিতার একমাত্র সন্তান হওয়ায় তিনিই হচ্ছেন তার পিতার উত্তরাধিকারী। জেবু বেগম চৌধুরী প্রবাসী হওয়ায় গ্রামের বাড়িতে রেখেছিলেন কেয়ারটেকার। সেই কেয়ারটেকারকেও মারধর করে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। একই গ্রামের মিফতা মিয়া বেশ প্রভাবশালী। প্রায় দুই বছর ধরে মিফতা তার ছেলের জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছিল। কিন্তু সব প্রস্তাবই ফিরিয়ে দেন জেবু বেগম। জেবু বেগম জানান, ‘মিফতার পরিবারের সঙ্গে তাদের পরিবারের ব্যবধান অনেক। কোনো ভদ্র পরিবার তাদের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক স্থাপন করবে না। এ কারণেই বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেই।’ তিনি জানান, ‘বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়ার পর মিফতা তার সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা শুরু করে। মারধর করে তাড়িয়ে দেয় কেয়ারটেকারকে। আর এ খবর পেয়ে তিনি দেশে ফিরে আসেন। নিজের সম্পত্তি রক্ষার উদ্যোগ নেন।’ সংবাদ সম্মেলনে জেবু বেগম বলেন, ২রা জানুয়ারি জেবু বেগম বসতভিটায় গেলে মিফতা তার লোকজন নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় তারা জেবু বেগমকে মারধর করে তার বৃটিশ পাসপোর্ট, নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকারসহ বাসার মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ওসমানীনগর থানায় মামলা করেছেন নির্যাতিতা প্রবাসী জেবু বেগম চৌধুরী। মামলায় অভিযুক্তরা হলো কচপুরাই গ্রামের মৃত আনোয়ার মিয়ার ছেলে শহিদুল ইসলাম, জাবেল মিয়া, মেয়ে ফারজানা বেগম, সাজনা বেগম, মৃত ফজলু মিয়ার ছেলে মুক্তা উরফে সিফাত ডাকাত, মিফতার ছেলে জুয়েল মিয়া, স্ত্রী রোকিয়া বেগম, মৃত আনোয়ার মিয়ার স্ত্রী মিনারা বেগম, শহিদুল ইসলামের স্ত্রী তাহমিনা বেগম ও নুরুল ইসলামের স্ত্রী নাজমিন বেগম। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার ইন্ধনে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। জেবু বেগম চৌধুরী বলেন, ‘আমি আপনাদের মতোই এ দেশের আলো-বাতাসে বড় হওয়া একজন বাঙালি নারী। ভাগ্যের অন্বেষণে আজ আমি প্রবাসে। এ দেশের মানুষ, প্রকৃতি ও সমাজের প্রতি আমার ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতা বিদ্যমান। কিছুদিন আগে আমার জন্মস্থান বর্তমানে ওসমানীনগর থানাধীন গোয়ালাবাজারের কচপুরাই গ্রামে পৈতৃক ভূমিতে সুদৃশ্য একটি দালানঘর নির্মাণ করি। কিন্তু এখন ওই ঘর ওরা দখলে রেখেছে।’ জেবু ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানান, ‘অযোগ্য ছেলের জন্য আমার যুক্তরাজ্য সিটিজেন মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। বিনিময়ে সে সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে দখলকৃত আমার পৈতৃক সম্পত্তি উদ্ধার করবে বলে জানায়। এ রকম অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে আমি দিশাহারা হয়ে উঠেছি। প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের রহস্যময় ভূমিকায় নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছি।’(মানবজমিন)