কুলাউড়ায় ৬০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ ৭৫টি পদ শূন্য
ডেস্ক রিপোর্টঃ কুলাউড়া উপজেলার ৬০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ ৭৫টি পদ শূন্য রয়েছে। ফলে ওইসব বিদ্যালয়ে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে পাঠদানসহ দাপ্তরিক কার্যক্রম। সহকারি শিক্ষক-শিক্ষিকারা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করাতে পাঠদানে তাঁদের প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (রাজস্ব) ১৭৯টি ও তিনটি পর্যায়ে জাতীয়করণ ঘোষিত ১৪টি মিলে মোট ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৬০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে ২৭টি প্রধান শিক্ষক পদ ও ৪৮টি সহকারী শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে।
উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের একিদত্তপুর, ইটাহরী, ধামুলীয়া, গণকিয়া, রাজনগর, আলীনগর, সুলতানপুর ও মদনগৌরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষক না থাকায় বিদ্যালয়গুলোতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকরা।
তাঁরা জানান, অতিরিক্ত এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রীতিমত হিমশিম খেতে হয়। তাদেরকে প্রায়ই দাপ্তরিক কাজে উপজেলা শিক্ষা অফিসসহ শিক্ষা বিষয়ক সমন্বয় সভায় যেতে হয়। ফলে তাঁরা ক্লাসে ঠিকমত পাঠদান করাতে পারেননা। এছাড়াও রয়েছে সহকারি শিক্ষক সংকট। এ সকল বিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকা অনেক শিক্ষক ট্রেনিং ও ছুটিতে থাকায় সেই সংকট আরো তীব্র হয়ে উঠেছে।
একিদত্তপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা সহকারি শিক্ষিকা দীপ্তি রাণী চক্রবর্তী বলেন, বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ ৬ জন শিক্ষকের বিপরীতে বর্তমানে তিনিসহ একজন সহকারি শিক্ষিকা রয়েছেন। একই সাথে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির ২ শ ৫০ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান ও দাপ্তরিক কাজ চালিয়ে যাওয়া দুরূহ হয়ে ওঠেছে।
গণকিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা সোহেনা আক্তার জানান, প্রধান শিক্ষক না থাকায় গত পাঁচ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছি। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ১ শ ৮৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক পদে চারজনের মধ্যে সালমা আক্তার নামের একজন শিক্ষিকা যোগদানের পর থেকেই ডেপুটেশনে (প্রতিনিধি রূপে) অন্যত্র দায়িত্ব পালন করছেন। অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে খুবই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
ধামুলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গীতা রাণী শর্মা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় এই দায়িত্ব পালন করছি। শিশু শ্রেণিসহ ৬টি শ্রেণির পাঠদান মাত্র ৩ জন শিক্ষক মিলে চালিয়ে যাচ্ছি। প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষক পদ শূন্য থাকায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়।
ইটাহরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বরত মুকুল খান প্রশাসনিক কাজে উপজেলা শিক্ষা অফিসে যাওয়ায় তাঁর অনুপস্থিতিতে সহকারি শিক্ষিকা রুজিনা বেগম বলেন, বিদ্যালয়ের ১ শ ৯০ জন শিক্ষার্থীর পাঠদানের জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ ৪ জন শিক্ষক রয়েছেন। এর মধ্যে খলিলুর রহমান ডেপুটেশনে ও জলি বেগম অস্থায়ী শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। একই অবস্থা মদনগৌরী, রাজনগর, আলীনগর, সুলতানপুরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর।
প্রধান শিক্ষকসহ সহকারি শিক্ষক সংকট থাকায় ওইসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে শঙ্কিত রয়েছেন বলে জানান স্থানীয় অভিভাবক ও সচেতনমহল।
তারা জানান, শহর থেকে অনেক দূরে ও রাস্তাঘাটসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় এসব বিদ্যালয়ে কেউ যোগদান করতে আগ্রহী হয়না। অনেকে আবার যোগদান করলেও কিছুদিন পর নিজেদের সুবিধাজনক স্থানে বদলি হয়ে চলে যান।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শরিফ উল ইসলাম বলেন, এ বছরের মার্চ মাসের মধ্যে প্রধান শিক্ষকসহ বাকি সহকারি শিক্ষক শূন্য পদ পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষক পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটভূক্ত হওয়ায় তাদের নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোন প্রক্রিয়া না থাকায় এ পদে নতুন শিক্ষক নিয়োগ কিংবা পদোন্নতি দেয়া যাচ্ছেনা। তাছাড়া সহকারি শিক্ষক নিয়োগে আইনি জটিলতায় সেটিও বন্ধ রয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু হলে প্রধান শিক্ষকসহ সহকারি শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে শূন্যপদগুলো পূরণ করা সম্ভব হবে।