হাইকোর্টের বিচারকরা বিচারপতি না ভগ্নিপতি?
ডেস্ক রিপোর্টঃ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে হাইকোর্টের রায়ের তীব্র সমালোচনা করে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, “১৯৬৭ সালে জন্ম নিয়ে কিভাবে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়। তাদের পক্ষে মহামান্য হাইকোর্ট রায়ও দিয়েছেন। এরা কী আসলে বিচারপতি না ভগ্নিপতি?”
শনিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে ‘মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা’অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, “একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ১৯৬৭ সালে জন্ম হয়ে তার পক্ষে মহামান্য হাইকোর্টের রায় নিয়ে এসেছেন। কিভাবে এই রায় দিলো আদালত। মুক্তিযোদ্ধা হওয়া তো কোন মৌলিক অধিকার নয়। আইন না বুঝে উচ্চ আদালতের এ রায় বিচারকের চেয়ারকে কলঙ্কিত করেছে।”
“আমার কাছে এই রায় আসার পর আমি ছুঁড়ে দিয়েছি। আপনারা কারা (হাইকোর্টের বিচারক)? হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে যায়নি। যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে, তারাই হবে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। কোন রায় নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হওয়া যাবে না অনন্ত আমি থাকতে। অস্ত্র জমা দিয়েছি কিন্তু ট্রেনিং কারও কাছে বন্ধক দেয়নি।”
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অনেক আমলা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে চাকরি করছেন এমন দাবি করে মোজাম্মেল হক বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ সনদ নিতে এমনও ঘটনা ঘটেছে ‘আজকে দরখাস্ত জমা দিয়ে আগামীকালই গেজেটে নাম উঠেছে’ কোন যাচাই-বাছাই ছাড়া এটা কোন নিয়মে হয়েছে?
একানব্বই সালের পর থেকে আমি আসার পূর্ব পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের যে গেজেট বা তালিকা হয়েছে, তা আসলেই কষ্টদায়ক। বিএনপি’র আমলে ৪৪ হাজার এবং আওয়ামী লীগের আমলে ১১ হাজার এই ৫৫ হাজারই মুক্তিযুদ্ধ সনদ দেওয়ার আইন বর্হিভূতভাবে হয়েছে বলে দাবি করেন মন্ত্রী। এর মধ্যে যারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নয় তাদের সনদ বাতিল করে দিয়েছি, আর অন্যদের যাচাইবাছাই চলছে।
“ইতোমধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় যারা সরকারি চাকরি নিয়েছেন তাদের একটি তালিকা তৈরি করে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদে জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। যাতে গড়মিল থাকলে বের হয়ে আসে”।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে জানার জন্য আগামী বিসিএস পরীক্ষায় ‘২৩ বছরের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ’ নিয়ে একশ নম্বর রাখা হবে বলেও জানান মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী মোজ্জামেল হক।
সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধকালীন অবস্থান তুলে ধরে মোজাম্মেল হক বলেন, জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে গেছেন তা সন্দেহতীতভাবে সত্য। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময়ের কথা যদি চিন্তা করেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ করতে চাননি। ওয়ার কাউন্সিলের মাধ্যমে যুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। এমনও হয়েছে মোস্তাক-জিয়া টোপ ফেলেছিলো যে, বঙ্গবন্ধুকে জেল থেকে মুক্ত করে যুদ্ধ করবেন।
পঁচাত্তরের পরে মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান জয় বাংলাকে জিন্দাবাদে পরিণত করেছে জিয়া-মোস্তাক। আর এই জয় বাংলাকে পরে তারা দলীয় স্লোগান হিসেবে চালিয়ে দিয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা কমিটির কার্জন হল পরিবেশ ক্লাবের চেয়ারম্যান কবির আহমেদ খানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- ঢাবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সহিদ আখতার হুসাইন, ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া প্রমুখ।