সন্ত্রাসী ধরতে বিশেষ অভিযান আগামীকাল
ডেস্ক রিপোর্টঃ পৌর নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, সুষ্ঠু ভোট নিয়ে ততই শঙ্কা-উত্কণ্ঠার কথা বলা হচ্ছে। অসংখ্য প্রার্থী সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করতে আবেদন করেছেন নির্বাচন কমিশনে (ইসি)। নির্বাচনী কাজে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকাণ্ডে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে খোদ ইসি। এই রকম পরিস্থিতিতে পৌরসভা নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে সন্ত্রাসীদের ধরতে বিশেষ অভিযানে আগামীকাল ২৮ ডিসেম্বর মাঠে নামছে যৌথবাহিনী। গত বৃহস্পতিবার সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারে ‘সক্রিয়’ দুই সহস াধিক সন্ত্রাসী ও গডফাদারের তালিকাসহ একটি প্রতিবেদন ইসির কাছে জমা দেয়া হয়েছে। ওই গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসী-ক্যাডারদের আটক করতে অভিযান পরিচালনার সুপারিশ করা হয়।
গত ৪৮ ঘন্টায় ময়মনসিংহের ত্রিশালে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে লক্ষ্য করে গুলি, চট্টগ্রামে বিএনপি নেতা মীর নাছিরের গাড়িবহরে হামলা, শরীয়তপুরের নড়িয়ায় আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, ভোলার বোরহানউদ্দিনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ও পাবনার ঈশ্বরদীতে বিএনপি নেতাকে পিটিয়ে জখম, যশোরের কেশবপুরের হাবাসপোলে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী অফিসে ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং সীতাকুন্ডে দুই প্রার্থীর মাইক ও গাড়ি ভাংচুর করা হয়।
এদিকে গত সোমবার কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত ব্যবসায়ী মকবুল হোসেন চৌধুরী গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় মারা গেছেন। নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বলেছেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোথাও কোনো অনিয়ম পেলে তাত্ক্ষণিকভাবে ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হবে।
এদিকে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) নির্বাচন বিধিমালা অনুযায়ী সোমবার মধ্যরাত থেকে বন্ধ থাকবে প্রচারণা। নির্বাচনের জন্য মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম নির্বাচনী এলাকায় যাওয়া শুরু করেছে।
সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান প্রসঙ্গে ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কমিশন থেকে আগেই নির্দেশনা দেয়া আছে।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২ হাজার ২৯ জন সন্ত্রাসী পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচারে সক্রিয়। এতে বলা হয়েছে, মাঠে সক্রিয় সন্ত্রাসীদের মধ্যে বিএনপি’র ১ হাজার ১২১ জন, আওয়ামী লীগের ৫৬১ জন ও জামায়াত শিবিরের ২১১ জন, জাতীয় পার্টির ৪ জন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)১ জন, জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ১০ জন ও অন্যান্য ১২১ জন রয়েছেন। সোমবার থেকে প্রতিটি পৌরসভায় পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে গঠিত একটি করে ভ্রাম্যমাণ ও অপেক্ষমাণ দল দায়িত্ব পালন করবে। র?্যাবের একটি করে দল ভ্রাম্যমাণ এবং ৮১টি দল অপেক্ষমাণ বাহিনী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া প্রতিটি পৌরসভায় এক প্লাটুন করে বিজিবি এবং মুলাদী, মে?হেন্দীগঞ্জ, পাথরঘাটা, রামগতি ও হাতিয়া পৌরসভার প্রতিটিতে এক প্লাটুন করে কোস্টগার্ড দায়িত্ব পালন করবে।
ইসিতে অসংখ্য অভিযোগ
পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশনসহ সারাদেশের রিটানিং অফিসারের কার্যালয়ে। দলীয়ভাবে পৌরসভার মেয়র পদে নির্বাচন হওয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন। যদিও ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধেই বেশি অভিযোগ এসেছে ইসি সচিবালয়ে। অধিকাংশ প্রার্থী সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এছাড়া প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষাপতসহ হয়রানিরও অভিযোগও তুলেছেন অনেক মেয়র প্রার্থী। বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল অন্তত ১৭টি পৌরসভায় সুনির্দিষ্টভাবে তাদের প্রচারকাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ দিয়েছে ইসিতে।
ভোট পর্যবেক্ষণ করতে চায় ৩২ সংস্থা
এবারের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য দেশি ও বিদেশি ৩২টি পর্যবেক্ষক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান ইসিতে আবেদন করেছে। এরমধ্যে ৩০টি দেশীয় প্রতিষ্ঠানের পর্যবেক্ষকের সংখ্যা ৪ হাজার ১৮৯ জন।
ত্রিশালে প্রার্থীকে লক্ষ্য করে গুলি
ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা জানান, ময়মনসিংহের ত্রিশাল পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এ বি এম আনিসুজ্জামানকে লক্ষ্য করে গুলি করেছে সন্ত্রাসীরা। তবে তিনি আহত হননি। গত শুক্রবার রাতে পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের বিরামপুর বটতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গতকাল ত্রিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বিদ্রোহী প্রার্থী এবিএম আনিছুজ্জামান বলেন, এই ঘটনায় ত্রিশাল থানায় লিখিত এজাহার দাখিল করলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মীর নাছিরের গাড়িবহরে হামলার অভিযোগ
চট্টগ্রাম অফিস জানিয়েছে, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের গাড়িবহরে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল শনিবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে স্থানীয় গুছরা বাজারে এ হামলার ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেছেন মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। তার রাজনৈতিক সচিব মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই অভিযোগ করেন তিনি। নাছির বলেন, শনিবার বেলা ১২টার দিকে রাঙ্গুনিয়া গুছরা বাজারে বিএনপির দলীয় প্রার্থী হেলাল উদ্দিন শাহকে নিয়ে ধানের শীষ প্রতীকের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করি। বাজারে প্রচারণা শেষ করে সামনের দিকে যাওয়ার সময় পেছন থেকে সরকার দলের ২০ থেকে ২৫ জন ক্যাডার হামলা চালায়। হামলায় ছাত্রদল নেতা ফারুক, রায়হান, মহিউদ্দিনসহ ১০/১১ জন আহত হয়েছে। যদিও এ ধরনের কোনো ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির।
নড়িয়ায় দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংর্ঘষ, আহত ১০
নড়িয়া (শরীয়তপুর) সংবাদদাতা জানান, শরীয়তপুরের নড়িয়ায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের ব্রিদাহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে নড়িয়া পৌরসভা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম বেপারীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
থানার ওসি (তদন্ত) পারভেজ আহম্মেদ সেলিম জানান, দুই মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের সংর্ঘষের খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
ঈশ্বরদীতে বিএনপি নেতাকে পিটিয়ে জখম
ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতা জানান, গতকাল উপজেলা সড়কের টাক বাবুর গুদামের সামনে পৌর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী সমন্বয়ক এ কে এম আকতারুজ্জামানকে ছাত্রদল সমর্থিত নেতাকর্মীরা পিটিয়ে আহত করেছে। ওসি বিমান কুমার দাশ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, অভিযোগ দেয়া হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বোরহানউদ্দিনে কাউন্সিলর প্রার্থীকে পিটিয়ে জখম
বোরহানউদ্দিন (ভোলা) সংবাদদাতা জানান, ভোলার বোরহানউদ্দিন পৌরসভার বর্তমান কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী সালাউদ্দিন পঞ্চায়েতকে পিটিয়ে জখম করেছে দুর্বৃত্তরা। নির্বাচনী কাজ শেষে একা বাড়ি ফেরার পথে গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আহত কাউন্সিলরের ভাই সামছুদ্দিন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে।
মেহেন্দিগঞ্জে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ
বরিশাল অফিস জানায়, মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রচারণাকে কেন্দাহত হয়েছে। ৭ নং ওয়ার্ডের বদরপুর মহল্লায় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার সময় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিরব বেপারী ও সাধারণ সম্পাদক শাকিল হোসেনের সমর্থকের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। অপরদিকে একইদিন সন্ধ্যায় পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের চুনারচর এলাকায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী গিয়াসউদ্দিন দিপেনের একটি প্রচার মাইক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকেরা ভাংচুর করেছে বলে অভিযোগ করেন দিপেনের সমন্বয়কারী বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান মুক্তা।
সীতাকুন্ডে দুই প্রার্থীর মাইক ও গাড়ি ভাংচুর
সীতাকুন্ড সংবাদদাতা জানান, সীতাকুন্ড আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচার মাইক ও গাড়ি ভাংচুর করে ছিনতাই করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টায় ২ নং ওয়ার্ড পন্থিছিলা হাজি পাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র নায়েক অব. সফিউল আলমের নারিকেল প্রতীকের প্রচারণা চালানোর সময় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর কর্মীরা মাইক ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা ভাংচুর করে। একইদিন বিকাল সাড়ে ৪টায় পৌর সদর উত্তর বাইপাস এলাকায় ডা. আহমেদুর রহমান সড়কে জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী তাওহিদুল হকের প্রচার মাইক ও গাড়ি ভাংচুর করে এবং মাইকের যন্ত্রাংশ ছিনিয়ে নেয়া হয়।