দুই মহামানবের জন্মদিনে এ কোন লজ্জা
সৈকত ধারাঃ সকালে ঘুম থেকে জেগে বিছানায় শুয়ে শুয়েই শুনছিলাম নজরুলের ‘তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে, মধু পূর্ণিমারি সেথা চাঁদ দোলে, যেন ঊষার কোলে রাঙা-রবি দোলে’ গানটি। মোহম্মদ রফির কণ্ঠে যেন মধু ঝরছিল। আজকের এই সকালে গানটা ছিল খুবই প্রাসঙ্গিক। কারণ ১২ই রবিউল আউয়াল। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। সাড়ে ১৪শ বছর আগে এই দিনে আরবের বুকে জন্মেছিলেন এক মহামানব, বিশ্ব মানবতার পথ প্রদর্শক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। আবার এই দিনেই ইহলোক ত্যাগ করেন তিনি। সেকারণে এই দিনটি বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আবার কাকতালীয়ভাবে এবার একই দিন যিশুখ্রিস্টেরও জন্মদিন পড়েছে। খ্রিস্টান দুনিয়ায় সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব এই ‘বড়দিন’।
বিশ্বের মুসলিম ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মতো বাংলাদেশেও দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। মুসলিমরা মহানবীর (সা.) পূর্ণাঙ্গ জীবন নিয়ে আলোচনা, সমাবেশ, মিলাদ মাহফিল, মোনাজাত এবং শোভাযাত্রাসহ নানা অনুষ্ঠানমালায় দিনটিকে স্মরণ করছে। অপরদিকে, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ও নানা অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে যিশুর জন্মদিন উদযাপন করছেন।
শান্তির বাণী নিয়ে আজকের এইদিনে পৃথিবীতে এসেছিলেন এ দু’জন মহামানব। তাছাড়া যিশুখ্রিস্টকে মুসলিমরা নবী হযরত ইসা (আ.) বলেই জানে। ফলে তার প্রতি মুসলিমদের অসীম শ্রদ্ধা রয়েছে।
এমনি এক পবিত্র দিনে বাংলাদেশের খোদ মসজিদেই ঘটে গেলো এক মর্মান্তিক ও লজ্জাজনক ঘটনা। সারা দেশে যখন পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর অনুষ্ঠান-আয়োজন চলছে, ঠিক তখনই রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার সৈয়দপুর মচমৈল চকপাড়ায় এক মসজিদের নামাজরত মুসল্লিদের ওপর আত্মঘাতী বোমা হামলা হলো। শুধু তা-ই নয় মসজিদটি আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) হওয়ায় এ ভূখণ্ডে দীর্ঘদিনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গর্বিত ঐতিহ্যেও বড় আঘাত এটি।
হামলায় ঘটনাস্থলেই এক তরুণ নিহত হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন ৩ মুসল্লি। ধারণা করা হচ্ছে, ওই তরুণই আত্মঘাতী হামলাকারী।
এমন এক তাৎপর্যপূর্ণ দিনে মুসলমানদের প্রার্থনার জন্য সবচেয়ে পবিত্র স্থান মসজিদের ভেতর নামাজরত অবস্থায় বোমা হামলার ঘটনা মানুষের মনে যারপর নাই উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশে হঠাৎ করেই এরকম মসজিদ ও ধর্মীয় সমাবেশে হামলার ঘটনা সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে।
গত শুক্রবারও চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর সংরক্ষিত এলাকার দুটি মসজিদে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। ওইদিন জুমার নামাজের সময় বিএনএস ঈশা খাঁ ঘাঁটি সংলগ্ন নৌবাহিনীর মসজিদ দুটিতে হামলাগুলো চালানো হয়েছিল। সেই হামলায় ৬ মুসল্লি আহত হন। ঘটনাস্থল থেকেই মুসল্লিরা আটক করে নৌবাহিনীর দুই সন্দেহভাজন সদস্যকে।
এর আগে গত ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যার পর বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার হরিপুর-চককানু গ্রামে শিয়া সম্প্রদায়ের আল-মোস্তফা জামে মসজিদে নামাজরত অবস্থায় অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের গুলিবর্ষণে মোয়াজ্জিন নিহত ও তিন মুসল্লি গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার পর র্যাব ও পুলিশের অভিযানে ৭ জন গ্রেপ্তার হয়।
তারও আগে ২৩ অক্টোবর রাজধানীর পুরান ঢাকায় ইমামবাড়ায় মহররমের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতি সমাবেশে মাঝরাতে বোমা হামলা হয়। এতে এক কিশোর নিহত ও অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়।
এভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিশেষ করে শিয়া ও আহমদিয়াদের ওপর হামলা বাংলাদেশের নিরাপত্তা নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। জঙ্গি সমস্যা নিয়ে বেশ কয়েক বছর থেকেই আলোচনা ও পদক্ষেপের কথা শুনা গেলেও এইসব ঘটনা নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মূল প্রবন্ধঃ বাংলামেইল