রাজধানীতে হাসপাতালের লিফটেই চোখ খুললেন ‘মৃত’ ঘোষিত সংগীতশিল্পী দিলরুবা খানের স্বামী!

60116ডেস্ক রিপোর্টঃ রাজধানীর ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসার বিল পরিশোধের পর মৃত ব্যক্তির লাশ নিয়ে বের হলেই তিনি জিন্দা হলেন। তার নাম মকবুল খান। তিনি তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় এই হাসপাতালে ভর্তির পর তাকে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়েছিল। চিকিৎসকগণ তার পরিবারের কাছে জানিয়েছিলেন, মকবুল খানের লাইফ সাপোর্ট খুললেই তিনি মারা যাবেন।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক এ কর্মকর্তার স্বজনরা সব আশা হারিয়ে লাইফ সাপোর্ট খোলারই সিদ্ধান্ত দেন। এর আগে হাসপাতালে তার চিকিৎসার সব বিলও পরিশোধ করেন। ‘লাইফ সাপোর্ট’ খুলে হাসপাতাল থেকে তার ‘মরদেহ’ বের করা হয়। আর তখনই মুহূর্তের মধ্যেই চোখ খুলে তাকান মকবুল খান।
মকবুল খানের স্ত্রী সংগীতশিল্পী দিলরুবা খান। তাঁদের মেয়ে শিমুল খান জানিয়েছেন, চিকিৎসকদের কথার উপর ভিত্তি করে গ্রামের বাড়ি নাটোরে মকবুল খানের জন্য কবরও খোঁড়া হয়। তাঁর বাবা বর্তমানে অন্য একটি হাসপাতালের সাধারণ শয্যায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
শিমুল খান বলেন, ‘লাইফ সাপোর্ট খোলার পরই দেখি বাবা চোখ খুলে তাকিয়েছেন। তাঁর চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল। এরপর দ্রুত ওই হাসপাতাল থেকে তাঁকে নিয়ে হলিফ্যামিলি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখার পর আজ সোমবার বিকেল ৩টায় বাবাকে সাধারণ শয্যায় নিয়ে আসা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাবা নাটোরে থাকেন। গত ২ ডিসেম্বর তিনি মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত (ব্রেইন স্ট্রোক) কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপরই তাঁকে নাটোর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় মগবাজার কমিউনিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিনই রাত পৌনে ১০টায় বাবাকে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা বলেন, বাবাকে লাইফ সাপোর্টে রাখতে হবে, নইলে বাঁচবেন না। এমন কথা শুনে আমি রাজি হই।’
শিমুল খান আরও জানান, ‘আমরা তো জানি, লাইফ সাপোর্ট মানেই আসলে বাবা মারা গেছেন। এখন যন্ত্রের সাহায্যে তাঁকে বাঁচিয়ে রাখা হবে। আমার মাথায় কিছুই কাজ করছিল না। অথচ ওখানে নেওয়ার আগেও বাবার গোঙানি শুনতে পাই আমি।’
আর তারা মকবুল খানকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়ার আগে বলা হয় প্রতিদিন খরচ হবে ৫০-৬০ হাজার টাকা। তিনি ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। তার দু-তিন ঘণ্টা পর বাবার কাছে গিয়ে দেখি তাঁর শরীরে অনেক যন্ত্র লাগানো হয়েছে। পরে মা (দিলরুবা খান) আমাকে বলেন, লাইফ সাপোর্টে রাখা মানেই তো মারা গেছেন। তাহলে আর রেখো না ওখানে। পরদিন পৌনে ১২টায় আমাদের বলা হয় লাইফ সাপোর্ট খুললেই মারা যাবেন মকবুল খান।
তিনি বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসকগণ দাবি করেছেন- যে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে আসছেন উনাকে, সেই অ্যাম্বুলেন্সে লাইফ সাপোর্ট খুলবেন। এমনকি ডেথ সার্টিফিকেট দিতেও রাজি হননি তারা। পরে ৫৭ হাজার ৩২৭ টাকা বিল পরিশোধ করা হয়। এরপর চিকিৎসকগণ তার লাইফ সাপোর্ট খুলে দেন।’
শিমুল খান আরো বলেন, আমার বাবার লাইফ সাপোর্ট খোনার পর খুবই ভেঙে পড়ি। নাটোরে বাবার জন্য কবর খোঁড়া হয়। কিন্তু তার লাইফ সাপোর্ট খুলে লিফটে ওঠানোর সময়ই বাবা চোখ তুলে তাকান। তাঁর চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে। তখনই আর দেরি না করে বাবাকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নিয়ে যাই। শিমুল খান অভিযোগ করে বলেন, ‘রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রায়ই এভাবেই রোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে। আর আমাদের সঙ্গে যা করা হলো তাতে আমি হতবাক।’
এ ব্যাপারে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে যোগাযোগ করা হলে হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী কে বলেন, এখন কেউ কথা বলার মতো নেই। আগামীকাল ফোন করুন।