নিউইয়র্কে ‘ট্রাম্প টাওয়ার’ ঘেরাও

নিউইয়র্কে ট্রাম্প টাওয়ারের সামনে বিক্ষোভ। ছবি- এনা।
নিউইয়র্কে ট্রাম্প টাওয়ারের সামনে বিক্ষোভ। ছবি- এনা।

নিউইয়র্ক থেকে এনা : ইসলাম বিরোধী মনোভাবকে উস্কে দিয়ে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন মুসলিম, হিস্পানিক, আফ্রিকানসহ বিভিন্ন দেশের ইমিগ্র্যান্ট কমিউনিটির নেতা এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো। গত ২০ ডিসেম্বর (নিউইয়র্ক সময়) রোববার দুপুরে ম্যানহটানে ট্রাম্প টাওয়ারের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তারা এই অভিযোগ করেন।
ম্যানহাটনের ফিফটি সিক্সথ স্ট্রীটের ফিফ্থ এভিনিউর উপরেই অবস্থিত ট্রাম্প টাওয়ার ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হয়। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবেই টাওয়ার সামনে এসে জড়ো হন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারি বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণ ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। এর আগ থেকেই রাস্তার পাশে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসময়ে, বিপুল পরিমাণ পুলিশ সদস্য ও ট্রাম্প টাওয়ারের নিরাপত্তার রক্ষীদের সামনেই নিউইয়র্ক সিটির

নিউইয়র্কে ট্রাম্প টাওয়ারের সামনে বিক্ষোভ। ছবি- এনা।
নিউইয়র্কে ট্রাম্প টাওয়ারের সামনে বিক্ষোভ। ছবি- এনা।

বাংলাদেশি অধ্যুষিত ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার থেকে যাওয়া কিছু মুসলিম, সেখানে জোহরের নামাজও আদায় করেন তারা। নামাজে ইমামতি করেন পার্কচেস্টার জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মইনুল ইসলাম।
এরপর একে একে বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সংগঠনের নেতৃত্বে কর্মসূচিতে অংশ নেন অসংখ্য মানুষ। এ সময় রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বিরোধী বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে শ্লোগানে শ্লোগানে ট্রাম্পের ইসলাম বিরোধী অবস্থানের নিন্দা জানানো হয়। প্রায় অর্ধশত সংগঠনের নেতৃত্বে কার্ভাড ভ্যানের এই অস্থায়ী মঞ্চে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একজন বর্নবাদী এবং হিংসা ছড়ানো রাজনীতিক হিসেবে আখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান বক্তারা। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প উগ্র-ধর্মীয় ও জাতিগোষ্ঠী বিরোধী মনোভাব আমেরিকার ‘গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি’ তথা রিপাবলিকানদের শত বছরের ঐতিহ্যকে কলঙ্কিত করেছে বলে অভিযোগ করেন ট্রাম্প বিরোধী সমাবেশে আসা সবাই। বলেন, ভোট বাড়াতে গিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিতর্কিত করছেন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান কে, ঐতিহাসিক মূল্যবোধকে।
ট্রাম্প বিরোধী বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেয়া বক্তাদের বেশীর ভাগই ছিল বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের। কোন ভেদাভেদ ছিল না তাদের মাঝে। বেশ কয়েকজন আমেরিকান মানবাধিকার কর্মী ও কমিউনিটি নেতা এবং মূলধারার রাজনীতিকরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে সবার। এর সৃষ্টিও হয়েছে সবার জন্য। জানান, মুসলিম, খ্রীস্টান, জুইশ সবাই ভাই ভাই। বিশ্বের বুকে অভিবাসী বান্ধব যুক্তরাষ্ট্রের মাটিকে উর্বর করেছে সকল ধর্ম-বর্ন ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষ।
নিজে মুসলমান না হয়েও হুইল চেয়ারে করে ট্রাম্পের ইসলাম বিরোধী মনোভাবের নিন্দা জানাতে ছুটে আসেন আমেরিকান এই প্রতিবন্ধী নারী। নিভু নিভু চোখে এবং ভাঙা-ভাঙা গলায় বলেন, আজকে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ধরণের বক্তব্য দিচ্ছে আমি মুসলিম না হলেও, আমরা বিশ্বাস করি, সে মুসলামদের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে বর্ণ-বৈষম্যসহ আমেরিকাতে হেইট ক্রাইমকে উস্কে দেয়া হচ্ছে। তার শাস্তি পাওয়া উচিত।
দুপুর ১টার পর থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচিতে নো ট্রাম্প, নো রেসিজম স্লোগানের নানা ব্যানার এবং ফেস্টুন নিয়ে আগতরা ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেয়ার আহ্বান জানান। বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতা হিসেবে পুরো কর্মসূচিকে শ্লোগানে শ্লোগানে মাতিয়ে রাখেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ এন. মজুমদার। এসময়ে তিনি অভিযোগ করেন, শুধু মুসলিম দেরকেই নয়, ট্রাম্প একের পর এক বক্তব্যে, অবমাননা করছেন আমেরিকার অভিবাসন নীতিকেও। এসময় তিনি সকল বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্ট ও বাংলাদেশি-আমেরিকানদের পক্ষে তার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানান। বলেন, মুসলমানরা কখনো সন্ত্রাসবাদকে সাপোর্ট করে না।
প্রায় একই ভাষায় কথা বলেন, কর্মসূচিতে অংশ নেয়া মাজেদা উদ্দিন। ট্রাম্পের ইসলাম ও বর্ণবিদ্বেষী এসব মনোভাবের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে উপস্থিত নিউইয়র্কের বাংলাদেশি মুসলিম কমিউনিটির বেশীরভাগ ব্যক্তি ও সংগঠনের নেতারাও ছিলেন সোচ্চর। কর্মসূচিতে অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন এন মজুমদার, মাজেদা উদ্দিন, আফসার আলী, আলমাস আলী, নজরুল হক, মনজুর চৌধূরী জগলুল, বোরহান উদ্দিন, আবদুর রউফ তফাদার, অ্যাড. নাসির উদ্দিন, সৈয়দ আল ওয়াহিদ নাজিম, ইমাম মইনুল ইসলাম, অধ্যাপক মজিবুর রহমান, আবদুল মোসাবিব্বর, জামাল হোসেনসহ অনেকে।