বিশ্বে প্রতি ১২২জন মানুষের একজন বাস্তুচ্যুত

50481039ডেস্ক রিপোর্টঃ সিরীয় যুদ্ধ, ইউক্রেইন সংকট এবং বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাতসহ নানা কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা রেকর্ড ছাড়াচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। সাতশ কোটি মানুষের এই পৃথিবীতে এ বছর বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ছয় কোটি ছাড়িয়ে যাবে। আর এর মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৩৩ হাজার। আন্তর্জাতিক অভিবাসন দিবসে শুক্রবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা-ইউএনএইচসিআর-এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, “বিশ্বে প্রতি ১২২ জন মানুষের একজন আজ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে।”
বাস্তুচ্যুত এসব মানুষের মধ্যে দুই কোটি ২০ লাখ শরণার্থী রয়েছেন, যে সংখ্যা ১৯৯২ সালের পর সবচেয়ে বেশি। ২০১৫ সালের প্রথমার্ধের তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে শুক্রবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়। ইউএনএইচসিআর-এর হিসাবে, বাংলাদেশে এ বছর উদ্বাস্তু হবে ৩২ হাজার ৯৭৫ জন আর উদ্বাস্তু হওয়ার মতো অবস্থায় পৌঁছাবে দুই লাখ মানুষ। জাতিসংঘের অর্থনীতি ও সামাজিক বিষয় সংক্রান্ত দপ্তরের ২০১৩ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বছরে অভিবাসীর সংখ্যা বেড়েছে ২ দশমিক ৭ শতাংশ হারে, যেখানে ১৯৯০ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এ হার ছিল ১ দশমিক ১ শতাংশ। আর নব্বইয়ের দশক থেকে ২০ বছরে বাংলাদেশিদের বিদেশে পাড়ি জমানোর হার বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন দিবস সামনে রেখে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বর্তমানে বিশ্বের ১৬০টি দেশে বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি মানুষ কর্মরত আছেন। প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশির বিদেশে কর্মসংস্থান হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এ বছর বিশ্বজুড়ে শরণার্থী বাড়ার পিছনে আফগানিস্তান, সোমালিয়া ও দক্ষিণ সুদানে সহিংসতার পাশাপাশি বুরুন্ডি, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো এবং ইরাকে সশস্ত্র লড়াইও কাজ করেছে বলে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ২০১৪ সালের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় এ বছর একই সময়ে বিশ্বজুড়ে আশ্রয় প্রার্থীদের আবেদনের সংখ্যা ৭৮ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে বিভিন্ন দেশে বাস্তুচ্যুত হয়ে অভ্যন্তরীণ অভিবাসনে বাধ্য হয়েছেন প্রায় তিন কোটি ৪০ লাখ। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছরের প্রথম ছয় মাসে শরণার্থীর সংখ্যা আট কোটি ৩৯ লাখ বেড়েছে। দিন হিসাবে বেড়েছে প্রায় গড়ে চার হাজার ৬০০ জন। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার অ্যান্টোনিও গুটেরেস এক বিবৃতিতে বলেছেন, “বাধ্য হয়ে বাস্তুচ্যুতি এখন ব্যাপকভাবে আমাদের সময়ের ওপর প্রভাব ফেলছে।
“যেসব মানুষ সবকিছু হারিয়েছে তাদের প্রতি সহনশীলতা, সমবেদনা ও সৌহার্দ্য দেখানোর প্রয়োজন এর আগে কখনও এতো বেশি হয়নি।”
ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, সংঘাতপূর্ণ এলাকার সীমান্তবর্তী উন্নয়নশীল দেশগুলো এখন সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দিচ্ছে। এর বাইরে এবছর সবচেয়ে বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে জার্মানি। জুন পর্যন্ত ছয় মাসে এক লাখ ৫৯ হাজার জনকে আশ্রয় দিয়েছে তারা। এ বছরের শেষ নাগাদ ইউরোপের এ দেশটিতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীর সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জার্মানির পরে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দিয়েছে রাশিয়া। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে তারা আশ্রয় দিয়েছে এক লাখ শরণার্থীকে, যারা মূলত ইউক্রেইন সংঘাত থেকে পালিয়ে গেছেন। এছাড়া শরণার্থীদের স্বেচ্ছায় দেশে ফেরার হার গত তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম বলে ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে। “কার্যত, আজকে আপনি যদি শরণার্থী হন তাহলে আপনার বাড়ি ফেরার সম্ভাবনা গত ৩০ বছরের যে কোনো সময়ের চেয়ে কম।”