লন্ডনে বিজয় দিবসে আলোচনা : জাতীয় ঐক্যের ডাক
ডেস্ক রিপোর্টঃ ৪৪তম বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশের বর্তমান ক্রান্তিলঘ্নে লন্ডন থেকে আবারো জাতীয় ঐক্যের ডাক দেয়া হলো। যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত মঙ্গলবার লন্ডনে দ্যা রয়্যাল রিজেন্সী অডিটরিয়ামে আলোচনা সভায় এ ঐক্যের ডাক দেয়া হয়।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেকের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমদের পরিচালনায় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সচিব ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ-সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ খান ও ফেরদোস আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক খসরুজ্জামান খসরু, আইনজীবী ফোরামের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার লিটন আফিন্দী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সোয়ালিহিন করিম চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন, জাসাসের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল আহমেদ, সহ-তথ্য সম্পাদক জাহিদ গাজী প্রমুখ।
সভায় বলা হয়, শেখ হাসিনার দুঃশাসনে দেশ এখন অনিরাপদ জনপদে পরিণত হয়েছে। দেশে এখন মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ধনী, গরিব, নারী-পুরুষ কেউ নিরাপদ নয়। এই অবস্থায় ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। এখন দলীয় স্বার্থ নয় দেশের স্বার্থ, প্রতিহিংসা নয় সহযোগিতা, বিরোধ কিংবা বিভক্তি নয় ঐক্য ও সংহতি এখন সময়ের দাবি। এই ঐক্যের ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার।
সভায় আরো বলা হয়, দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরও দেশের গৌরবময় স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক চলছে। ইতিহাসকে দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে গিয়ে এবং একজনকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়েই ইতিহাস বিকৃতির শুরু।
সভায় বলা হয়, আদালতের রায়ের দোহাই দিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন জিয়াউর রহমান নাকি অবৈধ রাষ্ট্রপতি। অথচ এ ধরনের কথা কোনো রায়ে নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন সম্পর্কে সম্প্রতি বৃটেনের একটি সংস্থা ডিএফআইডি সম্প্রতি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, সেই রিপোর্টেও বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিচারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনেও সংশয় রয়েছে।
সভায় আরো বলা হয়, যদি আদালতের রায়ের দোহাই দেয়া হয় তাহলে দেখা যায় ২০০০ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়ই দেশের সর্বোচ্চ আদালত তাকে রংহেডেড হিসাবে রায় দিয়েছিলো। সভায় বলা হয়, ২০০০ সালেল উচ্চ আদালতের রায় আমলে নিয়ে ভবিষ্যতে যদি কোনো আদালত শেখ হাসিনার বর্তমান কথাবার্তাকে পাগলের প্রলাপ কিংবা তার সময়ে নেয়া সকল কার্যক্রমকে পাগলের কাজ কিংবা অবৈধ হিসাবে রায় দেয়? স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ মুজিব ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ গ্রহন অবৈধ ছিলো বলে যদি ভবিষ্যতে কোনো আদালত রায় দেয় এবং অবৈধ রাষ্ট্রপতি হিসাবে যদি তার পরবর্তী সকল কার্যক্রম অবৈধ হিসাবে রায় দেয়? কিংবা শেখ মুজিব সাংবিধানিকভাবে সকল গণতান্ত্রিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার কারণে সাংবিধানিকভাবেই যদি তাকে গণতন্ত্রকারী হত্যাকারী হিসাবে আদালতের রায় আসে কিংবা রায়ে শেখ মুজিবকে বাকশালের জনক হিসেবে উল্লেখ করে?
সভায় বলা হয়, এ কারণেই রাজনৈতিক ইস্যুর সমাধান হওয়া দরকার জনতার আদালতে। রাজনৈতিক ইস্যু আদালতে নেয়া একটি খারাপ দৃষ্টান্ত। তারা বলেন, আদালত কিংবা র্যাব পুলিশ দিয়ে ইতিহাস নির্মাণ করা যায় না। সেই ইতিহাস জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না।
জনতার আদালতে বিচার কিভাবে হয় এর একটি উদাহরণ তুলে ধরে সভায় বলা হয়, এখন থেকে ২৫ বছর আগে, ১৯৯১ সালে বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে জনগণ রায় দিয়েছিলো জিয়াউর রহমানের দল বিএনপিকে, প্রত্যাখ্যান করেছিলো আওয়ামী লীগকে।
মহান বিজয় দিবসের বক্তৃতার শুরুতেই সভায় স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে যিনি ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সশস্র মুক্তিযুদ্ধে। সভায় শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীকে যিনি ১৯৫৭ সালের কাগমারী সম্মেলনেই পাকিস্তানকে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজ বুনেছিলেন। মওলানা ভাসানীই রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে প্রথম স্বাধীনতার কথা উচ্চারণ করেন।
সভায় বলা হয়, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসনের জন্য শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের কথাও স্মরণ করছি যদিও শেখ মুজিব আন্দোলন করেছিলেন স্বায়ত্বশাসনের জন্য তবে জনগণ চেয়েছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
সভায় প্রশ্ন করা হয়, যদি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে শেখ মুজিবের চারটি শর্ত মেনে নিতো তাহলে কি সে সময় দেশ স্বাধীন হতো? পাকিস্তান চারটি শর্ত মেনে নিলে শেখ মুজিব হতেন ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।
সভায় স্মরণ করা হয়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান সংগঠক তাজউদ্দিন আহমদ, জেনারেল ওসমানীসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের অসংখ্য শহীদদের যাদের আত্মত্যাগে স্বাধীন বাংলাদেশ।
সভায় আরো বলা হয়, ২০১৪ সালের বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে তিনি ঐতিহাসিক তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ইতিহাসের বেশ কিছু সত্য তুলে ধরেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে লেখা বই থেকে উদ্ধৃত করে দলীলসহ তথ্য প্রমাণ তুলে ধরলেও কিছু লোক গালাগাল করা ছাড়া কোনো তথ্য ভুল প্রমাণ করতে পারেনি। যেসব বই থেকে তিনি দলীল প্রমাণ তুলে ধরেছেন তাদের অনেকে এখনো বেঁচে আছেন।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে সভায় বলা হয়, তিনি দেশে একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কেমন আছেন? জবাবে ওই ব্যক্তি বলেছেন, ‘ভালো থাকার নির্দেশ আছে’।
সভায় আরো বলা হয়, এই হলো দেশের বর্তমান পরিস্থিতি যেখানে এখন ভোট চাইতে গিয়েও নারীরা ধর্ষিতা হয়। এ প্রসঙ্গে তারা বলেন, ৩০ ডিসেম্বর সারাদেশে ২৩৪টি পৌরসভায় নির্বাচন। কিন্তু দেখা গেছে, নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগের ৬ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পৌর মেয়র নির্বাচিত ঘোষণা করেছে তথাকথিত নির্বাচন কমিশন।
সভায় বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণ সব সময়ই স্বাধীনচেতা, গণতন্ত্রকামী এবং নির্বাচনমুখী। তৃণমূল পর্যায়ের পৌরসভা নির্বাচনে ফেনী সদর, পরশুরাম এবং চাটখিল পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পাওয়া যাওয়া যাবে না এটি শেখ হাসিনার তথাকথিত নির্বাচন কমিশন ছাড়া পাগলেও বিশ্বাস করে না।
সভায় আরো বলা হয়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেও ১৫৪ জনকে একইভাবে এমপি ঘোষণা করেছিলো এই নির্বাচন কমিশন। কৌশলগত কারণে বিএনপি স্থানীয় পর্যায়ের এই নির্বাচনে অংশ নিলেও বিএনপি আগেই বলেছে এই নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।
সভায় বলা হয়, দেশে এখন গণতন্ত্র নেই। মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা নেই। বাক স্বাধীনতা নেই। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই। প্রতিদিনই মানুষ গুম-খুন হচ্ছে। তিনি বলেন, ইতিহাস সাক্ষী, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে গণতন্ত্র থাকে না।
সভায় মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উপর ইউকে বিএনপি মিডিয়া সেলের উদ্যোগে নির্মিত একটি ডকুমেন্টারী প্রদর্শিত হয়।