মৌলভীবাজারে হাওর গুলো অতিথি পাখির কলকাখলিতে মুখরিত
বিশ্বজিৎ রায়, কমলগঞ্জ প্রতিনিধি :
শীত যতই বাড়েছে মৌলভীবাজারের হাওর গুলোতে অতিথি পাখির সংখ্যাও ততই বাড়েছে। হাওরগুলোর মধ্যে রয়েছে জেলার কুলাউড়া উপজেলায় হাকালুকি হাওর, রাজনগর উপজেলায় হাওর কাউয়া দিঘী ,শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বাইকা বিল ও ও কমলগঞ্জের কেওলার হাওর।
দেশের সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকিসহ, কাউয়া দিঘী ও বাইক্কা বিলে এবার অতিথি পাখির সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা হলে হাওর তীরবর্তী এলাকাগুলো মুখরিত হয় ঝাঁকে ঝাঁকে আসা অতিথি পাখির কলতানে। দেশের যে সবস্থানে অতিথি পাখির সমাগম হয় তার মধ্যে হাকালুকি হাওরে সবচেয়ে বেশি পাখির সমাগম ঘটে। সিডব্লিউবিএম প্রজেক্ট প্রতিবছর এই হাওরে পাখি শুমারি অনুষ্টিত হয়। ছোট বড় ২৩৮ বিলের সমন্বয়ে দেশের সর্ববৃহৎ হাকালুকি হাওরের প্রায় ১২% এলাকা জেলার কুলাউড়া উপজেলায় অবস্থিত এখানে প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাস থেকে অতিথি পাখি আসতে শুর করে। এবার দীর্ঘস্থায়ী বন্যা ও শীতের আগমন বিলম্বিত হওয়ায় অতিথি পাখিও আসছে দেরীতে। তবে যতই শীত বাড়ছে পাখির সংখ্যাও ততই বাড়ছে। হাকালুকি হাওরে অতিথি পাখিদের অবাধ বিচরণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন কোষ্টাল ওয়াটারল্যান্ড এন্ড বায়োডাইভারসিটি ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট হাওরে ১৪টি পাখির অভয়াশ্রম তৈরী করেছে। অতিথি পাখির অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করায় প্রতি বছর হাকালুকি হাওরে অতিথি পাখির সমাগম বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এই প্রজেক্টের মেয়াদ গতবছর শেষ হয়ে গেলে অরক্ষিত হয়ে পড়ে অতিথি পাখিরা। হাওরে পাহারাদার বসিয়েও শেষ রক্ষা সম্ভব হচ্ছেনা। কিছু অসাধু শিকারি বিষটোপে পাখি নিধন করে চলছে। ফলে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পাখি বিশেষজ্ঞসহ স্থানীয় সচেতন মহল।
সিডব্লিউবিএমপি’র পাখি শুমারির তথ্য অনুসারে ২০০৬-০৭ সালের ৪২ প্রজাতির ৫২ হাজার, ২০০৭-০৮ সালে ৪০ প্রজাতির ১লাখ ২৬ হাজারের বেশি, ২০০৮-০৯ সালে অনুষ্ঠিত পাখি শুমারিতে হাকালুকি হাওরে মোট ৫৩ প্রজাতির মোট ৮৫ হাজারের বেশি পাখি পাওয়া যায়। এরমধ্যে দেশীয় ২০ প্রজাতি এবং পরিজায়ী ৩৩ প্রজাতি। আইপ্যাক কুলাউড়ার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন তাদের প্রকল্প ও বার্ড কবের সদস্যরা দু’টি দলে ভাগ হয়ে পূর্বে হাকালুকি হাওরের নাগুয়া-ধলিয়া, গৌড়কুড়ি,উজান তুরল, নামা তুরল, চাতলা, হার্লা, জর্লা, ফুয়ালা, বালুজুড়ি, ফুটবিল, কালাপানি, রঙ্গি, পর্তি, গুজুয়া, তেকোনা,বোয়ালজুড় বিলে শুমারীতে অংশ নেন। দু’টি দলে নেতৃত্ব দেন বার্ড কাবের সভাপতি ইনাম আল হক ও আইপ্যাকের সামাজিক ও অথনৈতিক পরামর্শক পল থম্পসন। নামাতুরুল বিলে একটি ধলা কপাল ছোট রাজহাঁস, পর্তিতে ১১টি উত্তরে টিকি ও র্জলায় ৬টি লাল নুড়ি বাটান এবং ফুটবিলে ১৩টি ধূসর পা রাজহাঁস পাখির দেখা মিলেছে । তন্মধ্যে ৪টি বিরল প্রজাতির। সবচেয়ে বেশী দেখা গেছে টিকি হাঁস এর সংখ্যা ছিল ১০হাজার ৫৬৫টি। ২য় অবস্থানে লেঞ্জা, ৩য় অবস্থানে গিরি হাঁস। এদের সংখ্যা যথাক্রমে-৯৭১ ও ৪৫১৮টি।
পরিবেশ অফিস সুত্রে জানা যায়, হাকালুকি হাওরে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার সংযুক্ত পাখি এখনও হাকালুকি হাওরে ফেরেনি। স্যাটেলাইট ট্রেকিং করে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত অনেকগুলি পাখি ভারতে অবস্থান করছে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। হাকালুকি হাওরে পূর্বে অনুষ্ঠিত শুমারীতে হাকালুকিতে ৫৬জাতের প্রায় ৪৫হাজার পাখি দেখা যায়।