একদিনে পাঁচ মামলায় ২৪ জনের ফাঁসির আদেশ
ডেস্ক রিপোর্টঃ একদিনে পাঁচ জেলায় ২৪ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত। যুবলীগ নেতা হত্যা এবং স্ত্রী, শিশু ও প্রেমিকা হত্যার দায়ে পৃথক আদালত সোমবার এ সব আসামির ফাঁসির আদেশ দেন। এ ছাড়া পাঁচ জনের মৃত্যুদন্ড বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। এর মধ্যে, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা যুবলীগ সভাপতি জালালউদ্দিন হত্যার দায়ে ১১ জন, নারায়ণগঞ্জে স্কুলছাত্র রাকিবুল হাসান ইমনসহ দুই হত্যাকাণ্ডে ৫ জন, চট্টগ্রামে সিএনজি অটোরিকশার চালক হত্যায় ৪ জন, সিলেটে স্কুলছাত্র আবু সাঈদ হত্যায় ৩ জন এবং কুষ্টিয়ায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী হত্যায় স্বামীকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়।
গাজীপুরে ১১ জনের ফাঁসি
গাজীপুর কাপাসিয়ায় ক্ষমতাসীন যুবলীগ নেতা জালাল সরকার হত্যা মামলায় ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। সোমবার দুপুরে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. ফজলে এলাহী ভূঁইয়া এই রায় দেন। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি আসামিদের প্রত্যেককে ১০,০০০ টাকা করে জরিমানা করেছে আদালত। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ১১ আসামির মধ্যে ছয়জন রায়ের সময় কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন- ফরহাদ সরকার, বেলায়েত হোসেন বিল্টু, ফারুক হোসেন, আতাউর রহমান, জয়নাল আবেদীন ও আহমদ আলী।
এছাড়া জজ মিয়া, আলামিন, মাহবুবুর রহমান, আহিম ফকির ও জুয়েল মামলার শুরু থেকেই পলাতক। তারা স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, ২০০৩ সালে কাপাসিয়া উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি জালাল সরকারকে বলখেলা বাজার এলাকায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেন আসামিরা। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মিলন সরকার বাদী হয়ে ওই ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ১৭ নভেম্বর বিচারক রায়ের জন্য ঠিক করেন।
আদালত পরিদর্শক মো. রবিউল ইসলাম জানান, দণ্ডিতরা সাত দিনের মধ্যে উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবেন।
নারায়ণগঞ্জে ৫ জনের ফাঁসি
নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর স্কুলছাত্র রাকিবুল হাসান ইমন (১৩) হত্যাকাণ্ডে চারজনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। সোমবার নারায়ণগঞ্জের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মিয়াজি মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম এই রায় দেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- সারজাহান আলী জীবন, জামাল, সাইদুর রহমান ও তোফাজ্জল। এদের মধ্যে শেষের দুজন পলাতক। মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, পূর্বশত্রু তার জের ধরে ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি শিশু ইমনকে অপহরণ করে আসামিরা। এরপর ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ঘটনার ৩৫ দিন পর বন্দর থানার মালিভিটা এলাকার একটি পুকুর থেকে ইমনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহত ইমন নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলার কামতাল মালিভিটা এলাকার প্রবাসী নূরু মিয়ার ছেলে এবং সোনারগাঁও এইচজিজি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল। এ ঘটনায় ইমনের মা ফেরদৌসি বেগম বাদী হয়ে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেন। আগে একজনের ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।
চট্টগ্রামে ৪ জনের ফাঁসি
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় এক সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালককে গলা কেটে হত্যার দায়ে চারজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত। একই রায়ে অপর দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। সোমবার দুপুরে চট্টগ্রামের জননিরাপত্তা ট্রাইব্যুনালের বিচারক সৈয়দা হোসনে আরা এই রায় ঘোষণা করেন। জননিরাপত্তা ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম এই রায়ের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, নুরুল আলম, আবুল কালাম, রুবেল ও কাউসার। আর যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, আরিফুল ইসলাম ও নঈম উদ্দিন। এদের মধ্যে কাউসার ও নঈম উদ্দিন জেল হাজতে থাকলেও অন্যরা পলাতক রয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের ৩ মে নগরীর বহদ্দারহাট থেকে আনোয়ারার মোহছেন আউলিয়ার মাজারে যাওয়ার জন্য ইউসুফের অটোরিকশা ভাড়া করেন আসামিরা। তবে তারা সেখানে না গিয়ে বোয়ালখালীর পশ্চিম গোমদণ্ডী এলাকায় তার সিএনজি অটোরিকশাটি ছিনতাই করে তাকে গলা কেটে হত্যা করে লাশ ফেলে চলে যায়। এরপর সিএনজি অটোরিকশাটি সাতকানিয়া থেকে উদ্ধার করে মালিক।
লাশ উদ্ধারের পর নিহতের খালাতো ভাই হাশেম বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করলে মামলার বিচারকার্যে ২৭ জন সাক্ষীর মধে ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিচারক অভিযুক্ত ছয়জনের মধ্য চার জনকে ফাঁসি ও দুই জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।
সিলেটে ৩ জনের ফাঁসি
শিশু আবু সাঈদ হত্যা মামলায় সিলেট জেলা ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাকিব ও পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর রহমান পুতুলসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। এ মামলায় একজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। সোমবার বিকেলে সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আব্দুর রশিদ এ রায় ঘোষণা করেন। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত অন্যজন হলেন- পুলিশের কথিত সোর্স আতাউর রহমান গেদা।
রায়ে তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো তিন মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অপহরণ করে মুক্তিপণ চাওয়া ও ৩০২/৩৪ ধারায় হত্যার দায়ে দুবার করে ফাঁসির আদেশ পেয়েছেন আসামিরা।
অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় অপর আসামি ওলামা লীগ নেতা মুহিবুর রহমান মাসুমকে খালাস দিয়েছে আদালত। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারকাজ সম্পন্ন হওয়া সিলেটের শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যা ও খুলনায় শিশু রাকিব হত্যা মামলার চেয়েও এ মামলার বিচার দ্রুত শেষ হলো বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। এর আগে রবিবার রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্কের পর রায়ের এ দিন ধার্য করেন আদালতের বিচারক।
আর ঐতিহাসিক এ রায় ঘোষণার পর আদালতের বিচারক আব্দুর রশিদ অবসরে যাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, গত ১১ মার্চ নগরীর শাহ মীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আবু সাঈদকে (৯) আসামিরা অপহরণ করেন। অপহরণের তিন দিন পর ১৪ মার্চ নগরীর ঝর্ণারপাড় সোনাতলা এলাকায় পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর রহমান পুতুলের বাসার ছাদের চিলেকোঠা থেকে আবু সাঈদের বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
২৩ সেপ্টেম্বর এ মামলায় চারজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন কোতোয়ালি থানার (ওসি-তদন্ত) মোশাররফ হোসেন। চার্জশিটে অভিযুক্তরা হলেন- সিলেটের বিমানবন্দর থানার সাবেক কনস্টেবল এবাদুর রহমান পুতুল, সিলেট জেলা ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাকিব, পুলিশের কথিত সোর্স আতাউর রহমান গেদা এবং ওলামা লীগ নেতা মাহিব হোসেন মাসুম। অভিযুক্তদের মধ্যে এবাদুর, রাকিব ও গেদা ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেন।
নিহত আবু সাঈদ সিলেট নগরীর রায়নগর শাহমীর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ও রায়নগর দর্জিবন্দ বসুন্ধরা ৭৪ নম্বর বাসার আব্দুল মতিনের ছেলে। তাদের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার এড়ালিয়াবাজারের খশিলা এলাকায়।
কুষ্টিয়ায় স্ত্রী হত্যায় স্বামীর ফাঁসি
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় নয় মাসের অন্তঃিসত্ত্বা স্ত্রী লাইলী খাতুনকে হত্যার দায়ে জুয়াড়ি রোকন মণ্ডলকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছে আদালত। সোমবার দুপুর ১২টায় কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে বিজ্ঞ বিচারক রেজা মো. আলমগীর হাসান আসামির উপস্থিতিতে এ রায় দেন। রাষ্ট্রপক্ষের পিপি অ্যাডভোকেট অনুপ কুমার নন্দী মামলার বিবরণে জানান, ২০১১ সালের ২৬ আগস্ট রাতে দৌলতপুর উপজেলার নাজিরপুর গ্রামের হুলি মণ্ডলের ছেলে ভ্যানচালক রোকন মণ্ডল জুয়া খেলে হেরে গিয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন।
এ সময় অন্তঃদসত্ত্বা স্ত্রী লাইলী খাতুনের সঙ্গে তার এ নিয়ে বাক-বিতণ্ডা হয়। পরে রাত ৯টার দিকে লাইলীকে বাড়ির পার্শ্ববর্তী স্থানে নিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মরদেহ ড্রেনে ফেলে দেন রোকন। দুই দিন পরে ওই ড্রেন থেকে লাইলীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহত লাইলীর বাবা লাল চাঁদ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করলে পুলিশ রোকনকে গ্রেপ্তার করে। পরে আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে রোকন স্ত্রী হত্যার কথা স্বীকার করেন। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আটজনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে সোমবার আদালত রোকন মণ্ডলকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। এছাড়া সোমবার রাজধানীর শ্যামপুরের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম হত্যা মামলায় স্ত্রী মডেল সুমাইয়া কানিজ ওরফে সাগরিকাসহ পাঁচজনের ফাঁসি বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।