হুমকির মুখে বাংলাদেশ থেকে ভারতে সময় প্রকাশনীর মালিক
ডেস্ক রিপোর্টঃ ঢাকায় এক প্রকাশককে কুপিয়ে হত্যার এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে সময় প্রকাশনীর মালিক ও প্রকাশক ফরিদ আহমেদ হুমকির মুখে ভারতে অবস্থান করছেন। এ মাসের শুরুর দিকে তাকে হুমকি দেয় নতুন উগ্রপন্থি আল আহারা (ইউকে)। এ খবর দিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার ফরিদ আহমেদকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছে। কিন্তু এরপরও প্রকাশকদের যেভাবে টার্গেট করেছে জঙ্গিরা, তাতে তিনি উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, শুরুর দিকে ব্লগার ও লেখকদেরই টার্গেট করা হয়েছিল যারা উদারপন্থি ও সৃজনশীল চিন্তাধারার বিকাশ ঘটাতেন। কিন্তু এখন প্রকাশকদেরও হত্যা শুরু করেছে তারা, যাতে বিরুদ্ধ মতের কিছু প্রকাশিত না হয়।
ফরিদের সময় প্রকাশনী দেশের অন্যতম বৃহৎ প্রকাশনা সংস্থা। এখান থেকে এখন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখা শ’ শ’ বই ছাপানো হয়েছে। তিনি বলেন, জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক ফয়সাল আবেদিন দীপনকে তার অফিসে নিষ্ঠুর কায়দায় হত্যার পরই এটা শুরু হয়। ১লা নভেম্বর আমি মোবাইলে একটি বার্তা পাই অপরিচিত নম্বর থেকে। সেখানে বলা হয়, ‘অনেক বই ছেপেছো। তোমার অনেক পাপ জমেছে। মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হও।’ আনসারুল্লাহ বাংলা টিম আগের হত্যার দায় স্বীকার করলেও, ফরিদ আহমেদকে বার্তাটি পাঠিয়েছে নতুন সংগঠন আল আহারা (ইউকে)।
মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধ স¤পর্কে ১২ খণ্ডের বই ছাপানো ছাড়াও, গত তিন দশকে প্রায় ১২০০ বই ছাপিয়েছে সময় প্রকাশন। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধ ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে রচিত বই আমি প্রকাশ করে আসছি। যারা এ ভাবধারার বিরোধী, তাদের অনুভূতিতে হয়তো আঘাত লাগতে পারে। কিন্তু উদারপন্থী চিন্তাধারার প্রবাহ বন্ধ করার জন্য এটি কোন কারণ হতে পারে না।
এর আগে অভিজিৎ রায়ের মতো ব্লগারদের হত্যার দায় নিয়েছে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। কিন্তু এরপরও কৌশল পাল্টে প্রকাশনা সংস্থাগুলোকে স্তব্ধ করার পথে হাঁটে সংগঠনটি। যেদিন দীপনকে হত্যা করা হয়েছিল, তখন আরেক প্রকাশক আহমেদ রহিম টুটুলকেও আঘাত করা হয়েছিল তার কার্যালয়ে। তিনি সহ আরও দুইজনকে মারাত্মক আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ওই খবর ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশের প্রকাশকরা প্রতিবাদের ডাক দেয়। ফরিদ বলেন, ওই ঘটনাও হয়তো মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোর ক্ষোভের কারণ হতে পারে। ফরিদ প্রকাশকদের ফোরাম বাংলাদেশ জ্ঞ্যান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
তিনি আরও বলেন, ব্লগার ও প্রকাশকদের হুমকি দিতে ওই গোষ্ঠীগুলো প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু এসব মূলত স্থানীয় কিছু সংগঠন। সরকারের মতো তিনিও এ হুমকির সঙ্গে আইএস’র কোন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে স¤পর্ক তৈরিতে রাজি হননি। বৃহ¯পতিবার বগুড়ায় একটি শিয়া মসজিদে নামাজরত মুসল্লিদের ওপর হামলার দায় স্বীকার করে আইএস।
ফরিদ বলেন, কোথাও আশ্রয় চাওয়ার কথা আমি চিন্তা করছি না, যদিও হুমকি প্রতিদিনই বাড়ছে। তিনি নিজে কোন নিরাপত্তা সংস্থার দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবছেন। তিনি বলেন, আমার প্রচেষ্টা সবসময়ই ছিল উদারপন্থী চিন্তাধারার প্রকাশ। কিন্তু প্রকাশকরা যদি দেশ ছেড়ে যায়, তবে সন্ত্রাসীরা মুক্ত হয়ে যাবে।