যে কোনো সময় যে কোনো ঘটনা ঘটতে পারে : ড. আকবর আলি খান
ডেস্ক রিপোর্টঃ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেছেন, বর্তমানে দেশে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে যে কোনো সময় যে কোনো ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তবে এটাকে আমি কিছু মনে করি না, কোনো সমস্যাই স্থায়ী নয়, সমাধান আছে। এখানে শান্তিপূর্ণভাবে একে অপরের প্রতি নির্ভরশীলতা তৈরি করতে হবে। সমস্যা সমাধানে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন হওয়া দরকার। আর মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য সংকৃতির পরিবর্তন দরকার। রাজধানীর একটি সেমিনার হলে গতকাল (শনিবার) এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘সামাজিক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় করণীয়’ শীর্ষক এ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট ও দ্য ডাইভারসিটি সেন্টার। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাস গুপ্ত, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আব্দুল মুঈদ চৌধুরিসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন। আকবর আলি খান বলেন, স্বল্প আয়তনের দেশে যে পরিমাণ মানুষ বসবাস করে, এখানে পরস্পরের সম্প্রীতি ছাড়া টিকে থাকা অসম্ভব। সম্প্রীতির বন্ধন মজবুত করতে রাজনৈতিক পরিবর্তন দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে সমালোচনা থাকবে, তবে সেটা যেন গালাগাল না হয়। গালাগাল বন্ধ করে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে কথা বললে রাজনৈতিক উত্তাপ কমে যাবে। আমাদের দেশে সামাজিক পুঁজির পরিমাণ পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের তুলনায় কম উল্লেখ করে আকবর আলি খান বলেন, সামাজিক পুঁজি গঠন না করতে পারলে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ সঙ্কট থেকে উত্তরণ সম্ভব। বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, আমাদের মধ্যে যে সাম্প্রদায়িক সমস্যা, তা সম্প্রতি নানা কারণে সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে সারা পৃথিবীর মধ্যে রাজনৈতিক যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তার মধ্যে আমরা ভালো থাকার আশা করতে পারি কিন্তু সম্ভব নয়। তবে তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশে বিশ্বের যে কোনো স্থানের চেয়ে শান্তি ও স্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সম্প্রতি কিছু উপসর্গ দেখা দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসনকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিলে আমরা এ পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হতে পারি। অতীত কাল থেকেই সম্প্রীতি আমাদের হৃদয়ে আছে, কিন্তু বর্তমানে কিছু পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে। যতই উস্কানি আসুক আমাদের সকল ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সম্প্রীতির মধ্যে এগিয়ে যেতে হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাস গুপ্ত বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক উন্নয়নের দায়িত্ব আমাদের। পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ হওয়ার পরও আমাদের সংখ্যালঘুদের ভাগ্যে কী হলো? তারা যেভাবে দেশ থেকে বিতাড়িত হচ্ছে তাতে এই সংখ্যালঘুরা শূন্যে নেমে আসতে আর মাত্র কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে। সংখ্যালঘুরা রাজনীতি এবং রাষ্ট্রের কারণে দেশান্তরি হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের রাজনীতির একটি অংশ মনে করে তারা দেশ থেকে চলে গেলে দেশ বাঁচবে ধর্ম বাঁচবে, আরেক অংশ মনে করে তারা থাকলে ভোট আমার আর চলে গেলে জমিটা আমার। তিনি বলেন, ’৭১ এ প্রথম হিন্দুরা ছিল প্রথম টার্গেট। কিন্তু অনেকেই তখন চুপ ছিলেন। এখন পর্যায়ক্রমে ইসলাম ধর্মের ভিন্ন মতাদর্শীদের ওপরও হামলা হচ্ছে। এটা কি বিচ্ছিন্ন ঘটনা? যারা প্রকৃত দোষী তাদের শাস্তি কি আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি? রাষ্ট্র ও রাজনীতিকেই ঠিক করতে হবে তারা রাষ্ট্রকে কেমন দেখতে চায়? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক আরেক উপদেষ্টা আব্দুল মুঈদ চৌধুরি বলেন, সামাজিক সম্প্রতি রক্ষায় যে রাজনৈতিক সমস্যাই থাকুক মূল উদ্দেশ্য ক্ষমতা ও অর্থ। সম্প্রতি যে অপ্রীতিকর ঘটনাগুলো ঘটছে সেগুলো কে কীভাবে করছে তা বের করা যায় না তা আমার বিশ্বাস হয় না। হঠাৎ কোনো ক্রাইম ছাড়া অর্গানাইজডভাবে কেউ কোন ক্রাইম করবে আর সেটা পুলিশ জানবে না তা আমি বিশ্বাস করি না। সেই অপরাধীদের খুঁজে পেতে আমাদের আগ্রহ আছে কিনা সেটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ সময় হাঙ্গার প্রজেক্টের দেশব্যাপী সম্প্রতি রক্ষায় গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির সুফল তুলে ধরেন হাঙ্গার প্রজেক্টের গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলম মজুমদার।