ছাতকে শিশু ইমন হত্যাকান্ড : ঘাতক ইমাম সুজনসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল
ছাতক প্রতিনিধি: ছাতকের বহুল আলোচিত শিশু ইমন হত্যাকান্ডের ঘটনায় চার্জশীট আদালতে দাখিল করেছে থানা পুলিশ।গত ২১ নভেম্বর জামায়াত নেতা ও মসজিদের ইমাম সুয়েবুর রহমান সুজনসহ ৭ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ চার্জশীট(নং২২৯) প্রেরন করা হয়। হত্যাকান্ডের মুল নায়ক ছৈলা-আফজলাবাদ ইউনিয়নের ব্রাহ্মনজুলিয়া গ্রামের মৃত মখলিছ মিয়ার পুত্র, নোয়ারাই ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারী, বাতিরকান্দি গ্রামের একটি মসজিদের সাবেক ইমাম সুয়েবুর রহমান সুজন, নোয়ারাই ইউনিয়নের বাতির কান্দি গ্রামের আব্দুস ছালামের পুত্র জাহেদ মিয়া, মৃত আব্দুল মুক্তাদিরের পুত্র রফিকুর রহমান, মৃত আব্দুল কাবিরের পুত্র সালেহ আহমদ, মৃত আব্দুল করিমের পুত্র আব্দুল বাহার, মৃত আব্দুল লতিফের পুত্র নুরুল আমিন ও ইসমাইল আলীর পুত্র বাচ্চু মিয়াকে চার্জশীটে অভিযুক্ত করা হয়েছে। চলতি বছরের ২৭ মার্চ নোয়ারাই ইউনিয়নের বাতিরকান্দি গ্রামের প্রবাসী জহুর আলীর পুত্র ও লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট কারখানা কমিউনিটি বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেনীর ছাত্র মোস্তাফিজুর রহমান ইমন(৬)কে তার নিজ বাড়ির সামন থেকে অপহরন করে জামায়াত নেতা ও মসজিদের ইমাম সুজন ও তার সহযোগিরা। ইমনের পিতার কাছে ২ল টাকা মুক্তিপন দাবী করে এসময় অপহরনকারীরা শিশু ইমনকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করতে থাকে। মুক্তিপনের দু’লাখ টাকা না পেয়ে ৫ এপ্রিল রাতে ইমনের বাড়ী সংলগ্ন মসজিদের আঙ্গিনায় এনে ইমনকে হত্যা করার পরিকল্পনা নেয় ঘাতক ইমাম সুজন ও তার সহযোগিরা। রাতে শিশু ইমন পানির পিপাসায় ছটপট করতে থাকলে তাকে বিষ মেশানো পানি পান করতে দেয় ঘাতকরা। বিষ মেশানো পানি পান করে বিষের জ্বালায় ছটফট ও বমি করতে থাকলে ধরা পড়ার আশংকায় ঘাতক সুজনসহ তার সহযোগীরা ধারালো ছুরি দিয়ে ইমনকে নির্মমভাবে জবাই করে হত্যা করে। পরে ইমনের লাশ বস্তায় ভর্তি করে পার্শ্ববর্তী খালে মাটি চাপা দিয়ে রাখে বলে জানিয়েছিল আটক ইমাম সুয়েবুর রহমান সুজন। মসজিদের পার্শে¦ একটি গর্তে পুতে রাখা হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি, বিষের বোতল ও ইমনের রক্তমাখা কাপড় পরবর্তীতে পুলিশ উদ্ধার করে ঘাতক সুজনের স্বীকার উক্তির ভিত্তিতে। ৮ এপ্রিল কুমিলা পালিয়ে যাবার সময় সিলেটের কদমতলী বাস টার্মিনাল থেকে ইমনের স্বজনরা ঘাতক সুজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। গ্রেফতার হওয়ার পর পুলিশের কাছে শিশু ইমন হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক বর্ননা দেয় খুনী সুজন।এসময় তার দেয়া স্বীকার উক্তির ভিত্তিতে পুলিশ তাকে নিয়ে বাতিরকান্দি মসজিদ সংলগ্ন একটি খালে লাশ উদ্ধারে ব্যাপক তলাসী চালায়। প্রায় ১২ ঘন্টা তলাসী অভিযান চালিয়েও ইমনের লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। হত্যাকান্ডের প্রায় একমাস পর বাতিরকান্দি হাওর থেকে শিশু ইমনের মাথার খুলিসহ দেহের বিভিন্ন হাড় উদ্ধার করে পুলিশ।এসময় ইমনের পিতা জহুর আলী ছেলের মাথার খুলি ও দাঁত দেখে এসময় ইমন বলে সনাক্ত করেন। অপহরন ও মামলা দায়েরের প্রায় সাড়ে ৭ মাস পর ৭জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চুড়ান্ত অভিযোগ পত্র দাখিল করে পুলিশ। ইমনের পিতা জহুর আলী মামলার চার্জশীটে সন্তোষ প্রকাশ করে খুনীদের দ্রুত ফাঁসী প্রদানের দাবী জানান। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আহমেদ সঞ্জুর মুর্শেদ জানান হত্যাকান্ডে প্রকৃত জড়িতদের অভিযুক্ত করে এ অভিযোগ পত্র আদালতে প্রেরন করা হয়েছে। উলেখ্য ৭জন আসামীর মধ্যে প্রধান আসামী ইমাম সুজনসহ ৪জন জেলহাজতে, ২জন জামিনে ও আসামী ছালেহ আহমদ পলাতক রয়েছে।