সিলেটে সাঈদ হত্যা : চিকিৎসক ও পুলিশসহ ৫ম দিনের সাক্ষ্য গ্রহণ
স্টাফ রিপোর্টার:: সিলেটে শিশু আবু সাইদ হত্যা মামলায় মরদেহের ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক, মামলার প্রথম দিকের তদন্ত কর্মকর্তাসহ ৩জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। এ নিয়ে চাঞ্চল্যকর এই মামলায় ২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হলো। বুধবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত সিলেট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো.আব্দুর রশিদ আসামিদের উপস্থিতিতে তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।আজ বৃহস্পতিবার ফের সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত।সাক্ষ্য প্রদানকারীরা হচ্ছেন, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসি বিভাগের প্রভাষক ও সাঈদের পোষ্ট মর্ডেমকারী চিকিৎসক মো. সামছুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান ও সাঈদ হত্যা মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহ ফজলে আজিম পাঠাওয়ারী।নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল মালেক জানান, এ নিয়ে এই আলোচিত মামলায় ৩৭ সাক্ষীর মধ্যে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হলো। বৃহস্পতিবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসাইন ও কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) তারেক মো মাসুদের সাক্ষ্যগ্রহনের মধ্যদিয়ে আলোচিত এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হবে। তিনি জানান, সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে চলতি মাসেই রায় ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে।আদালত সুত্র জানায়, সকাল সাড়ে ৯ টায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌসলি ডা. মো. সামছুল ইসলাম, মো. আসাদুজ্জামন, এসআই শাহ ফজলে আজিম পাঠাওয়ারী, এসআই তারেক মো. মাসুদ ও ওসি (তদন্ত) মোঃ মোশারফ হোসেনের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আদালতে হাজিরা দেন। দুপুর ১২ টা পর্যন্ত টানা দুই জনের সাক্ষ্যগ্রহণ চলে। এর পর আদালত অন্য মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করেন এবং দুপুর ১ টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত পুণরায় আরো এক জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।সাক্ষ্যগ্রহণকালে আলোচিত এই হত্যা মামলার আসামি এসএমপির এয়ারপোর্ট থানার পুলিশ কনস্টেবল (বরখাস্ত) এবাদুর রহমান পুতুল, র্যাব ও পুলিশের কথিত সোর্স আতাউর রহমান গেদা, সিলেট জেলা ওলামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম রাকিব ও প্রচার সম্পাদক মুহিবুর রহমান ওরফে মাহি হোসেন মাসুম আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিতি ছিলো।এর আগে গত ২৪ নভেম্বর সাক্ষ্য দেন, সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (আমলী-১) মোঃ সাহেদুল করিম, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেট (আমলী-২) মোচ্ছা: ফারহানা ইয়াসমিন, সিলেট সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক শামিমুর রহমান পীর ও আসামী এবাদুর রহমান পুতুলের সঠিক নাম-ঠিকানা যাচাইকারী এএসআই রতন লাল দেব।২৩ নভেম্বর সাক্ষ্য দেন, মো. সেলিম আহমদ, মো. আজির উদ্দিন, আবুল হোসেন, আব্দুস কুদ্দুস, মোক্তাদির আহমদ, দেলোয়ার হোসেন ও আব্দুল আহাদ তারেক। ২২ নভেম্বর সাক্ষ্য দেন, সাঈদের মা সালেহা বেগম, সাঈদের আরেক মামা জয়নাল আবেদীন, তার শ্যালক সৈয়দ হিলাল, এয়ারপোর্ট থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) গৌছুল হোসেন, এসআই সমরাজ মিয়া ও কনেষ্টবল কাশেম। ১৯ নভেম্বর সাক্ষ্য দেন, সাঈদের পিতা মতিন মিয়া, মামা আশরাফুজ্জামান, প্রতিবেশী ফিরোজ আহমদ, ওলিউর রহমান ও শফিকুল ইসলাম।গত ১৭ নভেম্বর পুলিশের এক কনস্টেবলসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন সিলেট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আব্দুর রশীদ। এর আগে গত ২৯ অক্টোবর সিলেটের মূখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক সাহেদুল করিম চার্জশিট আমলে নিয়ে মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নথিপত্র স্থানান্তর করেন। গত ২৩ সেপ্টেম্বর সিলেট মূখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্রটি দাখিল করেন মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) আবদুল আহাদ চৌধুরী। এর আগেরদিন ২২ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার ভাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) মোশাররফ হোসাইন এসি প্রসিকিউশনের কাছে মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) হস্তান্তর করেন।গত ১১ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর রায়নগর থেকে স্কুলছাত্র আবু সাঈদকে (৯) অপহরণ করা হয়। পরবর্তীতে ১৩ মার্চ রাত সাড়ে ১০টায় পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর রহমান পুতুলের কুমারপাড়াস্থ ঝরনারপাড় সবুজ-৩৭ বাসার ছাদের চিলেকোঠা একটি ঘর থেকে আবু সাঈদের অর্ধগলিত লাশ সাতটি পলিথিনের বস্তার মধ্যে মোড়ানো অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।এ ঘটনায় এয়ারপোর্ট থানার কনস্টেবল এবাদুর, পুলিশের সোর্স গেদা ও ওলামা লীগ নেতা রাকিবকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর এই তিনজনই ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।নিহত আবু সাঈদ নগরের রায়নগর শাহমীর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ও রায়নগর দর্জিবন্দ বসুন্ধরা ৭৪ নম্বর বাসার আব্দুল মতিনের ছেলে। মতিনের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার খাশিলা গ্রামে।