দীর্ঘমেয়াদে বন্ধ থাকতে পারে ফেসবুক
ডেস্ক রিপোর্টঃ জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে দীর্ঘমেয়াদে বন্ধ থাকতে পারে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। একইসঙ্গে বন্ধ থাকতে পারে মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ও ভাইবার। গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ উদ্যোগ নেয়া হতে পারে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসির) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ৫ কোটি ৪১ লাখ সক্রিয় ইন্টারনেট গ্রাহকের মধ্যে শুধু ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ কোটি ৭০ লাখ। ১৮ই নভেম্বর দুপুর দেড়টার দিকে ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায়’ সারা দেশে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধের নির্দেশ দেয় বিটিআরসি। এর আগে বেলা ১১টার দিকে বিটিআরসি প্রথম দফায় ফেসবুক, ভাইবার, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধের নির্দেশনা দেয়। পরবর্তীতে লাইন, ট্যাঙ্গো ও হ্যাংআউট বন্ধেরও নির্দেশনা আসে। একপর্যায়ে ইন্টারনেটও বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে দেড় ঘণ্টা ইন্টারনেট সংযোগ ছিল না সারা দেশে। যদিও সরকার দাবি করে, ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়নি। ‘কারিগরি ত্রুটির’ কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। বিটিআরসির সচিব সরওয়ার আলম গতকাল মানবজমিনকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে বৈঠক হয়েছে। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে কোন ধরনের নির্দেশনা আসেনি। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলেই সঙ্গে সঙ্গে এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুলে দেয়া হবে। এর আগে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম দীর্ঘমেয়াদে ফেসবুক বন্ধের ইঙ্গিত দেন। গত শনিবার তিনি জানান, জনস্বার্থ ও জননিরাপত্তার স্বার্থে যতদিন বন্ধ থাকা প্রয়োজন, ততদিন বন্ধ থাকবে এসব মাধ্যম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যখন বলবে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেছে, তখন এসব যোগাযোগ মাধ্যম খুলে দেয়া হবে। এদিকে বিভিন্ন আ্যাপসের মাধ্যমে অনেকে ফেসবুক ব্যবহার করছেন। এটা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি কিনা প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী জানান, যারা বিকল্প পথে এসব ব্যবহার করছেন, সেটি তারা নিরাপদভাবে ব্যবহার করছেন না। তাদের ওপর নজর রাখা সরকারের পক্ষে সহজ হচ্ছে। বড় কোন বিপদ ঘটে যাওয়ার পরে বন্ধ করে কী হবে? আগে থেকেই একটু প্রস্তুতি রাখা ভালো। এদিকে সোমবার সংসদে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়ার আহ্বান জানান স্বতন্ত্র এমপি তাহজীব আলম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, সমপ্রতি ঘটে যাওয়া নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড এবং ভবিষ্যতে ভয়াবহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটার আশঙ্কায় সরকার ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ সাময়িক বন্ধ করে দিয়েছে। এতে কাজের কাজ কিছু না হলেও এই সিদ্ধান্ত জনমনে অযাচিত আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।
বিটিআরসি জানিয়েছে, বাংলাদেশে ফেসবুকে ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৭ শতাংশ এবং ১৮ থেকে ২২ বছর বয়সীদের হার ৪২ শতাংশ। দেশে গত বছর একই সময়ে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১ কোটি। এর মধ্যে ৮২ লাখ পুরুষ এবং ২২ লাখ নারী ছিল। শুধু ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সীর সংখ্যা ছিল ৭৪ লাখ। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটিতে পৌঁছাবে।
অ্যাপস বন্ধ থাকায় কমেছে ইন্টারনেটের গতি
এদিকে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধ থাকায় ইন্টারনেটের গতি কমে গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অ্যাপসগুলো ক্লাউড নির্ভর হওয়ায় এ সমস্যা হয়েছে। কারণ এগুলো একটির সঙ্গে অন্যটি সম্পর্কযুক্ত। তারা জানান, দেশে বর্তমানে ব্যান্ডউইথ খরচ হচ্ছে কম। ফেসবুকে প্রবেশের স্বাভাবিক পথ বন্ধ থাকায় মোট ব্যবহৃত ব্যান্ডউইথের প্রায় ৪০ শতাংশ (সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে বর্তমানে ১৩৭ গিগা ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হচ্ছে) অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে। ইন্টারনেটে ট্রাফিকও (ব্যবহারকারীদের উপস্থিতি) কমে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। তারা জানান, দ্রুত এসব অ্যাপস খুলে দেয়া না হলে সমস্যা আরও বাড়বে। ইন্টারনেটের গতি আরও ধীর হয়ে যাবে। তখন সব সাইটে ঢোকা যাবে না। ঢোকা গেলেও সময় লাগবে অনেক। ছবিও ঠিকমতো দেখা যাবে না। এমনকি সংশ্লিষ্ট সাইটে রাখা ভিডিও দেখতেও সমস্যা হবে। এ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, গ্রাহকরা নেটওয়ার্ক গতি স্লো পাচ্ছেন। ধীরগতির নেটওয়ার্কের কারণে অপরাধীরা নেটওয়ার্ক গড়ার সুবিধা পাচ্ছে না। প্যারিসেও বন্ধ করা হয়েছে বিভিন্ন মাধ্যম। কিন্তু তারা উষ্মা প্রকাশ করছে না।