চট্টগ্রাম বিএনপির স্থবিরতা বিরাজ

imagesসুরমা টাইমস ডেস্ক: অন্য অনেক জেলায় যখন কমিটিই নেই, সেখানে ব্যতিক্রম চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি। তাদের অন্তত একটি কমিটি আছে। কিন্তু এর সভাপতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর নিষ্ক্রিয়তা আর সাধারণ সম্পাদক গাজী মোহাম্মদ শাহজাহান জুয়েল দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে অবস্থান করায় এবং নানা গ্রুপিংয়ে স্থবির হয়ে পড়েছে দলের সাংগঠনিক তৎপরতা।এ ছাড়া দক্ষিণ জেলা বিএনপির প্রতিটি সাংগঠনিক উপজেলায় বিএনপি, যুবদল, শ্রমিক দল, ছাত্রদলের একাধিক কমিটি থাকলেও সাংগঠনিক কোনো কার্যক্রম নেই বললেই চলে।দলীয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার প্রাণকেন্দ্র পটিয়া উপজেলায় রয়েছে বিএনপির চার নেতার নেতৃত্বে চারটি গ্রুপ। এর মধ্যে ইদ্রিস মিয়া ও এনামুল হকের নেতৃত্বে দুটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। তারা আলাদাভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। অপর দুটি গ্রুপের তেমন কোনো তৎপরতা নেই। চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, আনোয়ারায়ও সৃষ্টি হয়েছে আলাদা আলাদা গ্রুপ।একদিকে মামলা, অন্যদিকে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সেক্রেটারির নিষ্ক্রিয়তা্- এসব কারণে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা নেমে এসেছে বলে জানান দলের অনেক নেতাকর্মী।দলীয় সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সম্মেলনে জাফরুল ইসলাম চৌধুরী সভাপতি এবং অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চাঙা হয়ে ওঠে।কিন্তু ২০১১ সালে দলীয় হাইকমান্ড শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিনকে সরিয়ে সাধারণ সম্পাদক  নিযুক্ত করেন পটিয়া থেকে নির্বাচিত সাবেক এমপি গাজী মোহাম্মদ শাহজাহান জুয়েলকে। এ নিয়ে দক্ষিণ জেলা বিএনপির মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলে পরে মহিউদ্দিনকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়।পুনর্গঠিত কমিটির সভাপতি জাফরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক গাজী মোহাম্মদ শাহজাহান কিছুদিন দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার পর উভয়ের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এরপর সভাপতির নেতৃত্বে একটি গ্রুপ এবং সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে আরেকটি গ্রুপ সৃষ্টি হয়।জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে রয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, সহসভাপতি পটিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইদ্রিস মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এনামুল হকসহ যুবদল ও ছাত্রদলের একটি অংশ।অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক গাজী শাহজাহানের সঙ্গে রয়েছেন আনোয়ারা থেকে নির্বাচিত সাবেক বিএনপিদলীয় এমপি সরওয়ার জামাল নিজামসহ যুবদল ও ছাত্রদলের একটি অংশ।জেলা কমিটির মতো উপজেলা কমিটিগুলোতেও কলহ-বিরোধ চরমে। নেতায় নেতায় দ্বন্দ্বের কারণে দলের কর্মীরা দিশেহারা। হতাশ হয়ে পড়ছেন সমর্থকেরা। ফলে দক্ষিণ জেলায় বিএনপির ব্যাপক জনসমর্থন থাকার পরও আন্দোলন-সংগ্রামে কোনো গতি আসছে না। এ জন্য নেতাদের নিষ্ক্রিয়তা ও কোন্দলকে দায়ী করেন কর্মীরা।চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, মূলত সভাপতি ও সেক্রেটারির নিষ্ক্রিয়তার কারণে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা বিরাজ করছে।মহিউদ্দিন বলেন, একটি সংগঠনের মূল দায়িত্ব পালন করেন সাধারণ সম্পাদক। অথচ তিনি থাকেন কানাডায়। আসেন মাঝেমধ্যে। দীর্ঘদিন ধরে দলীয় কর্মকাণ্ডে তার অনুপস্থিতিই সাংগঠনিক স্থবিরতার মূল কারণ। এ ছাড়া দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। অনেকে সাংগঠনিক স্থবিরতার কারণে দল ছেড়েছে। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদলের কমিটি হয়নি। অনেকের বয়স হলেও তারা মূল দলে স্থান পাচ্ছে না।দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, “দক্ষিণ জেলা বিএনপির বড় দুই নেতাকে আমরা একসঙ্গে পাই না। প্রতিটি উপজেলা ও পৌরসভায় আমাদের নেতা-কর্মীরা দুটি ধারায় বিভক্ত। কেন্দ্র থেকে হস্তক্ষেপ করা না হলে এই বিভক্তি দীর্ঘায়িত হবে।”দলের স্থবিরতার বিষয়ে জাফরুল ইসলাম চৌধুরী দাবি করেন, তিনি মাঠ ছাড়েননি। দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন। বলেন, “সাধারণ সম্পাদক মাঝেমধ্যে দেশে এসে আবার কানাডা চলে যান। তার অনুপস্থিতিতে সভাপতি হিসেবে এককভাবে আমি দলের হাল ধরেছি।”