মঞ্চ প্রস্তুত তবুও ফাঁসি বিলম্বিত

SAKA Mujahid Cartoon2সুরমা টাইমস ডেস্কঃ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি হয়নি। প্রাণভিক্ষার জন্য আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শের দাবি জানালে সরকার পক্ষ থেকে বলা হয়, সুযোগ নেই। এরপরই ফাঁসির বিষয়টি ঝুলে যায়। যুদ্ধাপরাধের দায়ে দ-িত বিএনপি ও জামায়াতের দুই নেতার ফাঁসি কার্যকরের জন্য শুক্রবার দিনভর প্রস্তুতি নেয়া হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন না হওয়ায় তাদের ফাঁসি হয়নি। শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে শীর্ষ কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার নেসার আলম টেলিফোনে বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা করবে কিনা সে বিষয়ে দুই যুদ্ধাপরাধী কিছু জানায়নি। এ কারণে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া যাচ্ছে না বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, সব তৈরি করা আছে। সিদ্ধান্ত হলে অল্প সময়ের মধ্যেই তা বাস্তবায়ন করা যাবে। অপর এক কারা কর্মকর্তা বলেন, প্রাণভিক্ষা চাওয়ার বিষয়ে আসামিরা তাদের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে চান। এছাড়া পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও শেষ সাক্ষাতের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন।
শুক্রবার রাত ১২টার পর ফাঁসি হবে এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় কারাগারে নানা ধরনের পরীক্ষার পর মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়। তৈরি থাকতে বলা হয় জল্লাদকে। তওবা পড়ানোর জন্য কারা মসজিদের ইমামকে অপেক্ষা করার নির্দেশ দেয়া হয়। দুপুরে দুই আসামির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এর আগে কারা কর্তৃপক্ষ নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন। কারাগারের শীর্ষ কর্মকর্তারা ফাঁসির মঞ্চ ঘুরে দেখেন। রাতেই ফাঁসি কার্যকর হতে যাচ্ছে- এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়াও এ খবর প্রচার করে। রাত ৮টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে এ রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি। রাত ৯টার কিছু পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। হঠাৎ করেই কারাগারের ভেতরে যাওয়া কর্মকর্তারা বের হয়ে আসেন। আর এভাবেই সমাপ্তি ঘটে ফাঁসি নিয়ে নানা গুঞ্জনের।
প্রস্তুতি চূড়ান্ত করার পরও শুক্রবার রাতে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দ-িত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদেও ফাঁসি কার্যকর হয়নি। বুধবার প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির বেঞ্চ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রায়ের কপি ট্রাইব্যুনালে পৌঁছলে তা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে দুজনকে রায় পড়ে শোনানো হয়। ফাঁসি কার্যকরের জন্য বাকি থাকে শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদনের বিষয়টি। তারা প্রাণভিক্ষা চাইবেন কিনা শুক্রবার রাত দশটা পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।
যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মুজাহিদ ও সালাহউদ্দিন কাদেও চৌধুরী প্রাণভিক্ষা চাইবেন কিনা সে প্রশ্নের কোনো জবাব এখনও পাননি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, তারা আবেদন না করলে বা রাষ্ট্রপতির অনুকম্পা না পেলে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী মৃত্যুদ- কার্যকর করবে কারা কর্তৃপক্ষ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন. ‘উনারা বলেছেন, সিদ্ধান্ত পরে জানাবেন। উনাদের সিদ্ধান্ত জানার জন্য আজও আমরা তাদের কাছে যাব।’
শীর্ষ দুই যুদ্ধাপরাধীর রায় কার্যকরকে কেন্দ্র করে শুক্রবার দুপুর থেকেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের আশপাশে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলে আইনশৃক্সখলা বাহিনীর সদস্যরা। রায় কার্যকরের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খানের সঙ্গে বৈঠক করেন আইজি (প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন। এদিকে সাকা ও মুজাহিদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য কেন্দ্রীয় কারাগারের গেটে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেন সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর আইনজীবীরা। কিন্তু তারা ঊর্ধ্বতন কারা কর্মকর্তাদের সাক্ষাত পাননি। রাতে সাকার ছেলেসহ আইনজীবীরা কারাগারের সামনে যান। সেখানে তারা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে আবারও সাক্ষাতের চেষ্টা করেন। কিন্তু তাদের সুযোগ দেয়া হয়নি। তারা কারা ফটকের সামনে থেকে চলে আসেন। এর পরপরই কেন্দ্রীয় কারাগারের আশপাশের নিরাপত্তা শিথিল করা হয়।
ডিআইজি প্রিজন গোলাম হায়দার চৌধুরী বলেন, ফাঁসি কার্যকরের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যে ফাইলটি কারাগারে যাওয়ার কথা ছিল, সেটি যথাসময়ে প্রস্তুত হয়নি। শুক্রবার সরকারি ছুটি থাকায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অফিসে উপস্থিত না থাকায় ফাইলটি প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি। তবে আজ শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অফিসে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
কারা সূত্রে আরও জানা গেছে, যে কোনো মুহূর্তেই রায় কার্যকর হতে যাচ্ছে এমনটা ভেবে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই অস্থিরতার মধ্যেই ছিলেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। কারা সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই উৎকণ্ঠা ছিল তার ভেতর। কারারক্ষী বা কারাগারের কেউ তার আশপাশে গেলেই তাদের কাছে নানা কিছু জিজ্ঞাসা করেছেন, জানতে চেষ্টা করেছেন তার জন্য সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষের পরবর্তী পদক্ষেপ প্রসঙ্গে। শুক্রবার দিনভর খুব বিমর্ষ ও চিন্তিত দেখা গেছে। রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা নিয়ে সময়ক্ষেপণ করলেও তিনি বুঝতে পেরেছেন, যে কোনো মুহূর্তে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হবে। সূত্রটি বলেছে, বৃহস্পতিবার রাতে রায় পড়ে শোনানোর পর থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত কোনো খাবার গ্রহণ করেননি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। প্রায় একই অবস্থা ছিল মুজাহিদেরও। তিনি কোরআন শরিফ পড়েই দিন পার করেছেন।
মুজাহিদের পরিবারের আজ সংবাদ সম্মেলন : মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের পরিবার আজ বেলা ১২ টায় সংবাদ সম্মেলন করবে। শুক্রবার সন্ধায় মুজাহিদের ছেলে আলী আহমদ মাবরুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সুপ্রিমকোর্ট বার মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। যুগান্তর