সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে প্রস্তুত আট ফুট ফাঁসির মঞ্চ
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির আদেশ বহাল রেখেছে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ গতকালই তাদের চুড়ান্ত রায় ঘোষণা করে। বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তাদের এই দন্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। এর আগে সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের পক্ষ থেকে এই রায় পুর্নবিবেচনার আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু আপীল বিভাগ দুটি আবেদনই খারিজ করে দেয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরে তাদের দুই জনের রিভিউ খারিজের রায়ের কপি ট্রাইব্যুনাল থেকে কারাগারে যাওয়ার পর ফাঁসি কার্যকর নিয়ে যখন চার দিকে নানা গুঞ্জন চলছিল আর ঠিক তখনই রাত নয়টার দিকে সংবাদ মাধ্যমকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, রাতে ফাঁসি কার্যকর না হলেও দণ্ড কার্যকরের জন্য ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ।
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি যেকোনো সময় কার্যকর হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাবেক দুই মন্ত্রীর ফাঁসি কার্যকর করার জন্য সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কারাগারের চারপাশে। রাস্তায় যানবাহন চলাচল সীমিত করা হয়েছে।
এদিকে, কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি নির্ভরযোগ্য সুত্রমতে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর কনডেম সেলে বন্দী দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী বিএনপি ও জামায়াতের প্রভাবশালী নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী এবং আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে ফাঁসির মঞ্চ । মঞ্চের ওপরে শামিয়ানাও টাঙানো হয়েছে । পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দীন রোডের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের আট ফুট দৈর্ঘ্য আর সাড়ে চার ফুট প্রস্থের ফাঁসির মঞ্চ ধোয়ামোছার কাজও চলছে।
কারা সূত্র জানিয়েছে, দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসির রায় কার্যকর করতে আবারো ডাকা হয়েছে অভিজ্ঞ দুই জল্লাদ শাজাহান ও রাজুকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এ দুই অপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকর এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। আজকালের মধ্যেই তাদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে আদালতের রায় কার্যকর করা হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় রায়ের অনুলিপিও এখন কারা কর্তৃপক্ষের হাতে।
রাত পৌনে ৯টায় রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর আইজি প্রিজনের নেতৃত্বে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় । কারাগার ঘিরে নেওয়া হয়েছে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা। সরকারি সূত্রগুলো বলেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকর হতে পারে শনিবারের পর যে কোনো দিন।
এর আগে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় এতদসংক্রান্ত আদেশ দেন। দু’জনের ক্ষেত্রেই প্রধান বিচারপতি শুধু একটি শব্দ উচ্চারণ করেন_ ‘ডিস্মিস্ড’। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এ রায়ের পর শীর্ষ দুই যুদ্ধাপরাধীর দণ্ড কার্যকরে আর কোনো আইনি বাধা থাকল না। এখন শুধু সাকা ও মুজাহিদের সামনে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার একটিমাত্র সুযোগ রয়েছে। নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতাপ প্রকাশ করে তারা প্রাণভিক্ষা না চাইলে যে কোনো সময় দণ্ড কার্যকর করা যাবে। এই প্রথম বিএনপির কোনো শীর্ষ নেতা ও সাবেক মন্ত্রীর ফাঁসির চূড়ান্ত আদেশ দেওয়া হলো।