ন্যায্য সম্মান বঞ্চিত একজন মহামানবের কথা বলছি…….

Maolana Vashaniউম্মুক্ত প্রকৃতিতে একটি মাটির চুলো মিইয়ে মিইয়ে জ্বলছে । চুলোর ওপরে একটি হাঁড়ি চাপানো । জিল দিয়ে আগুনের লাভা ও ধোঁয়া বেরুচ্ছে । বয়সের ভারে কুঁজো হয়ে যাওয়া একজন বৃদ্ধ মানুষ লাকড়ি ঢুকিয়ে দিচ্ছে চুলোয় । উধোম শরীর । পড়নে একখানা সাদামাটা লুঙ্গি আর মাথায় একটি টুপি । ভাত রান্না শেষ হলেই তিনি বেরিয়ে পড়বেন দেশের কাজে । যোগ দিবেন একের পর একটি মিটিংয়ে । দেশকে স্বাধীন করার স্বপ্নে বিভোর তার সমস্ত সত্তা । হ্যা পাঠক ! ঠিকই ধরেছেন ! বলছি বাঙালীর মুক্তির আন্দোলনের অন্যতম পুরোহিত মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর কথা । যিনি দেশকে স্বাধীন করার জন্য সক্রিয় ও আধ্যাত্মিক শক্তির সঞ্চারক ছিলেন । আজ সেই মহামানবের ৩৯তম মৃত্যু বার্ষিকি । বাংলাদেশকে মুক্ত করার প্রশ্নে যিনি অনস্বীকার্য অবদান রেখেছেন সেই মানুষটির প্রয়াণ দিবস কাটছে অনেকটা অবহেলায় । কেউ তাকে মনে রেখেছে আবার কেউ মনে রাখেনি । যারা মনে রেখেছে তারা কৃতজ্ঞ কিংন্তু যারা মনে রাখেনি তারা কৃতঘ্নের সর্বনিম্ন শ্রেণীর । রাজনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় কিছু মানুষ তাকে শ্রদ্ধা না জানালেও এদেশের নিরপেক্ষ ও সচেতন মানুষ তাকে হৃদয়ের মণি কোঠায় স্থান দিয়েছে । আজ এই বেদনার লগ্নে সফল ভাষা সৈনিক ও স্বার্থক স্বাধীনতার মহান নেতা হিসেবে হৃদয়ের সবটুকু ভলোবাসা উজাড় করে একবার স্যালুট জানাচ্ছি ভাসানীর সম্মানে ।

….
দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে মহান নেতা ভাসানী আজ একটি অস্ত যাওয়া নক্ষত্রের নাম । অথচ বাংলাদেশের গোড়াপত্তনে অশেষ অবদান ও বাঙালরি জাতীয়তা প্রতিষ্ঠায় প্রতি অক্লান্ত কর্মী ও নেতা হিসেবে যারা অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে যদি মাত্র কয়েকজনের তালিকা করা হয় তাতেও ভাসানীর নামটির শীর্ষের দিকে উজ্জ্বল অক্ষরে জ্বল জ্বল করবে । কোন এক কারণে মাওলানা ভাসানী বর্তমানে দেশের একটি উপেক্ষিত চরিত্র । এদেশ সৃষ্টিতে তার যত অবদান তার বেশিরভাগ দিনে দিনে ক্ষয়ে যাচ্ছে । যে মানুষটির রাজনৈতিক বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্মকান্ড দেশের ভৌগলিক ইতিহাস ও স্বাধীনতার ইতিহাসে অন্তর্ভূক্তি করণ আবশ্যিক করা উচিত ছিল সেই মানুষটি সম্পর্কে জানতে আজ অবলম্বন করতে হয় ভিন্ন কোন উপায়ের । নতুন প্রজন্মের থেকে ভাসানীকে লুকিয়ে রাখায় অনেক জানতে পারছে না ভাসানীর নাম ও বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির জন্মে তার অবদান । শুধু বাংলাদেশ নয় তিনি বৃটিশদের শোষণ থেকে পাকিস্তান রাষ্ট্রের গোড়াপত্তনেও ছিলেন অগ্রসৈনিক ।
…..
দূর্ভাগ্য মাওলানা ভাসানীর কেননা তার কন্যা, স্ত্রী, পুত্র কিংবা নাতি-নাতনীর কেউ দেশের রাজনীতরি রথি-মহরথী নন । এ দেশের কোন নেতাকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে তার যোগ্য উত্তরসূরী রেখে যাওয়ার দরকার অথচ মাওলানা ভাসানী উত্তরসূরী রেখে গেছেন ঠিক কিন্তু তাদের কেউ যোগ্য নন । কেননা মাওলানা ভাসানীকে একদিন যারা রাজনীতির গুরু বলে স্বীকার-সমীহ করত সেই তারাই পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন অঙ্গনের রথি-মহারথী হয়ে অতীতকে তথা গুরুকে ভুলে গিয়েছিল । ব্যক্তি ভাসানীকে নিয়েও তারা শুরু করেছিল রাজনীতি । সেখানে ভাসানীকে যতটুকু সম্মান দেয়া উদ্দেশ্য ছিল, তার মতাদর্শের যতটুকু বিস্তৃতির উপলক্ষ্য ছিল তার চেয়ে বেশি ছিল মাওলানা ভাসানীর জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে নিজের আখের গোছানো । তারা তাদের উদ্দেশ্যে সফল হলেও ব্যক্তি ভাসানী হযে পড়লেন সংকীর্ণ । দলীয় চাদরে আবৃত করে তাকে জাতীয় নেতা থেকে করা হল সংকুচিত । আজ ভাসানী বলতেই শুধু কোন এক বিশেষ দলের সাবেক নেতাকে বুঝি কিন্তু সে দলের বর্তমান নেতাদের মুখে ভাসানী নাই ।
….
আমাদের তথা দেশের জন্য ভাসানী যে অসীম অবদান রেখেছেন তার সিঁকি অংশও প্রতিদান আমরা তাকে দিইনি । কেন দিইনি সে প্রশ্ন উত্থাপন করা অবান্তর কেননা ভাসানীর কাছে হাতেখড়ি নিয়ে যারা রাজনীতিতে প্রবেশি করিছল তারা স্বার্থান্ধ হয়েছিল । আজ আমাদের সচেতন হওয়া দরকার । ভাষার স্বকীয়তা প্রতিষ্ঠা, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অবদানের জন্য মাওলানা ভাসানীর অবদানে জাতীয়ভাবে ব্যাপক প্রচার-প্রসার করা আবশ্যক । প্রজন্মের জানা উচিত জননেতা ভাসানী ও তার চিন্তা-দর্শন সম্পর্কে । উত্তরসূরী ছাড়াও যে পূর্বসূরী বেঁচে থাকে তার অমর দৃষ্টান্ত স্থাপন করার এটাই সূবর্ণ সুযোগ । কায়মনোবাক্যে প্রার্থণা করি, মাওলানা ভাসানী তার কর্মানুযায়ী স্রষ্টার কাছ থেকে প্রতিদান লাভ করুন এবং আমরা যেন তার প্রাপ্য সম্মানটুকু দেই এবং দেয়ার মানসিকতা তৈরি করি ।

রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।
facebook.com/rajucolumnist/