গোলাপগঞ্জে ভিন্নমতের ৫২ ভোটার তালিকা থেকে বাদ : নেপথ্যে মেয়র পাপলু
নোমান মাহফুজ: সিলেটের গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের ৫২জন ভোটার এখন বলির পাটা। ভিলেজ পলিটিক্সের শিকার এসব ভোটারের মধ্যে ১৬জন নারী ও ৩৬জন পুরুষ ভোটার রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মনোভাব পরিবর্তন হওয়ায় এই ৫২জনকে ‘ভুয়া ভোটার’ অভিযোগ এনে সিলেট জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন একই ওয়ার্ডের পশ্চিম ঘোগারকুল,বাদে রনকেলী ও রণকেলী উত্তর গ্রামের ৫জন ভোটার। গত ১০ অক্টোবর সিলেট জেলা প্রশাসক বরাবর এ অভিযোগ দায়ের করা হয়। নেপথ্যে থেকে পৌর মেয়র পাপলু এসব করছেন বলে এলাকায় প্রচার রয়েছে। অভিযোগদাতারা হলেন একই ওয়ার্ডের মোঃ আনোয়ার হোসেন, রায়েনা বেগম,বসির উদ্দিন, ইছাক আলী, লিটন আহমদ এদের প্রত্যেকেই পৌর মেয়রের সমর্থক বলে জানাগেছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল (মঙ্গলবার) গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কার্য্যালয়ে বাদী ও বিবাদী পক্ষকে শুনানীর জন্য ডাকা হয়। সিলেটের সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ আজিজুল ইসলাম ও উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ এমদাদুল হক মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকে অভিযোগের শুনানী করে দুই পক্ষের বক্তব্য শুনেন। বিবাদী পক্ষে শুনানীতে আসা বেশ কয়েকজনের সাথে আলাপকালে জানা যায় তারা স্থানীয় রাজনীতির শিকার। তাদের নিকট গোলাপগঞ্জ পৌরসভার জন্ম সনদ, নাগরিক সনদ রয়েছে তবুও তাদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে যা শুনানীতে কর্মকর্তাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন। বাদীপক্ষ অভিযোগপত্রে উল্লেখ করে উক্ত ৫২ জন পৌরসভার সীমানার বাইরের ভোটার তাদেরকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হোক। অভিযোগের ১নং ও ৩১নং বিবাদী মাসুক মিয়া ও মইচ আলী উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কার্য্যালয় থেকে শুনানী শেষে বেরিয়ে আসার সময় তাদের জন্ম সনদ ও নাগরিক সনদ এ প্রতিবেদকের সামনে তুলে ধরেন ( সূত্র গোলাপ/পৌর/নাঃ সঃ/২০১২-১৩/৪৭৮, তাং ০৮ আগষ্ট ২০১২, জন্ম নিবন্ধন নং ১৯৫২৯১২২৫০৬০২৭৪৮৩, তাং ৭ আগষ্ট ২০১২) যাহাতে গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলু ও প্রস্তুতকারী হিসেবে জনৈক সোমা বেগমের স্বাক্ষর রয়েছে । তাদের দাবী একসময় এই মেয়রই তাদেরকে নিজ স্বার্থে ভোটার বানিয়েছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় আরেকবার তাদরেকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে ভুমিকাও নেন মেয়র। পরবর্তীতে আবারো ভোটার হলে মেয়র তার কয়েকজন সমর্থককে দিয়ে আবারো ভুয়া ভোটারের অভিযোগ এনেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শুনানীতে আসা ৬নং ওয়ার্ডের একজন নাগরিক অভিযোগ করেন যাদের বিরুদ্ধে ভুয়া ভোটারের অভিযোগ আনা হয়েছে তারা বিগত সময়ে পৌর মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলুর মতাদর্শী ছিলেন। বর্তমানে নির্বাচন পরিস্থিতি ভিন্ন তাই তাদেরকে বাদ দেওয়ার তৎপরতা চলছে। তিনি আরো বলেন পৌর মেয়র নিজ স্বার্থে এই ৫২জনকে অতীতে পৌরসভার ভোটার করেছিলেন এরকম আরো ৫০জন রয়েছে যারা তার অনুসারী নয় তাই ভোটার হতে পারেননি। অভিযোগের ৩নং বাদী বসির উদ্দিন এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে জানান, তারা (অভিযুক্তরা) ভোটার থাকলেও আপত্তি নেই। তাদের সূত্র ধরে বাদ পড়া বাকি ৫০ জন ভোটার হওয়ার জন্য তিনি অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন বলে জানান। বর্তমান মেয়র নেপথ্যে থেকে এসব অভিযোগ দায়ের করিয়েছেন কিনা এবং ভোটার থাকলে আপত্তি নেই তারপরও কেন অভিযোগ দিয়েছেন এরকম প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারেননি বসির উদ্দিন তবে মেয়রের সংশ্লিষ্টতা নেই বলে তিনি দাবী করেন। যোগাযোগ করা হলে সিলেটের সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ আজিজুল ইসলাম জানান, শুনানী শেষে তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এদিকে পৌর মেয়রের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলেও থাকে পাওয়া যায়নি, তিনি ঢাকায় রয়েছেন বলে জানাগেছে।