কানাডায় জাঁক জমকভাবে শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত
সদেরা সুজন সিবিএনএ।। বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আনন্দ-উৎসবের আমেজে কানাডা মন্ট্রিয়ল-টরন্টো-অটোয়া-ভেঙ্কুবারসহ বিভিন্ন শহরে উদযাপিত হয়েছে। বিভিন্ন শহরের হিন্দু সম্প্রদায়ের নিজস্ব মন্দিরে দেবীকে তিথী অনুযায়ী আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধুপ ও দীপ দিয়ে পূজা-অর্চণা, সন্ধ্যায় পূজা মণ্ডপগুলোতে ভক্তিমূলক গান, আরতি, সর্বশেষ শারদীয় পূণর্মিলনীতে রকমারি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনে মধ্যে দিয়ে আনন্দ-বিষাদে সমাপ্তি হলো শারদীয় দুর্গোৎসব ২০১৫।
কানাডার মন্ট্রিয়লে বাংলাদেশ হিন্দু এসোসিয়েশন অব ক্যুইবেক এর উদ্যোগে সনাতন ধর্ম টেম্পুলে এবং বাংলাদেশ হিন্দু কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে মন্ট্রিয়লস্থ হিন্দু মন্দিরে সাতদিন ব্যাপী অত্যন্ত জাঁক জমকভাবে পূজা উদযাপন করা হয়েছে। মন্দিরে-মন্দিরে সারাক্ষণই চলে দেবীর বন্দনা, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আরতী, সিঁদুর খেলা, ঢাক-ঢোল আর কাঁসরের সুরের মূর্চনায় সঙ্গে সুরেলা উলুধ্বনি। সপ্তাহব্যাপী পূজা অর্চনার পাশাপাশি স্থানীয় শিল্পী এবং নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণে অসাধারন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও কোলকাতার বিখ্যাত শিল্পীরা অংশগ্রহণ করে। বাঙালির ঐতিহ্যবাহি শাড়ী-সেলোয়ার- পাঞ্জাবি- ফতোয়া পড়ে নারী-পুরুষ শিশুদের জমজমাট উপস্থিতি ছিলো দেখার মতো। প্রতিটি পূজায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভক্তদের মাঝে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়। শারদীয় দুর্গোৎসবের অনুষ্ঠানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অন্যান্য ধর্মের মানুষদের উপস্থিতিও ছিলো উল্লেখযোগ্য। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সম্প্রীতির বন্ধনে বিশ্ব এগিয়ে যাবে এ প্রত্যাশা ছিলো সবার। সনাতনী কৃষ্টি-ঐতিহ্য-সভ্যতা-সত্য ও সুন্দরের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে এবং নিজের দেশ ও শেকড়কে প্রবাসে বড় হয়ে ওঠা নতুন প্রজন্মদের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয়ে প্রতিটি পূজা কমিটি সদস্যরা রকমারি আয়োজনের মধ্য দিয়ে তুলে ধরেছেন। হিন্দু সম্প্রদায়েরর প্রধান অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসবে আনন্দের মধ্যে ছিলো বিষাদের ছায়াঘেরা। এবছর দুর্গা পূজার পূর্ব মুহূর্তে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় দুর্গা প্রতিমা ভাংচুরের কারণে কানাডার বিভিন্ন শহরে প্রবাসীদের মধ্যে আনন্দের পাশাপাশি বিষাদের ছায়া ছিলো স্পষ্ট।ফলে বিভিন্ন মন্দিরে প্রতিবাদ সভা হয়েছে।
ধর্ম যার যার, রাস্ট্র ও উৎসব সবার হলেও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব ২০১৫তে পূজার পূর্ব মূহুর্তে দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির ও প্রতিমা ভাঙার প্রতিবাদে কানাডার বিভিন্ন শহরে মন্দিরে মন্দিরে পূজা মন্ডপে প্রতিকী প্রতিবাদে দশ মিনিটের জন্য দেবীর পূজা অর্চনা বর্জন করেছে প্রবাসীরা । কানাডার মন্ট্রিয়লে বাংলাদেশ হিন্দু এসোসিয়েশন অব ক্যুইবেকের উদ্যোগে সনাতন ধর্ম টেম্পুলে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন মলয় বর্মন, রীতীশ চক্রবর্তী, প্রদীপ সরকার দোলন, শক্তিব্রত হালদার মানু ও শর্মিলা ধর। সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন শ্যামল দত্ত, দীপক ধর অপু, দিলীপ কর্মকার ও কৃষ্ণপদ সেন। বাংলাদেশ হিন্দু কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে বাংলাদেশ হিন্দু মন্দিরে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন সুকুমার চক্রবর্তী, সরোজ দাস ও মল্লিকা পাল। প্রতিবাদ সভাগুলোতে বিপুল সংখ্যাক প্রবাসীরা উপস্থিত ছিলো। একইভাবে কানাডার টরন্টো, ভেঙ্কোবারসহ বিভিন্ন শহরের পূজামন্ডপে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বক্তারা গভীর ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করে বলেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অসাম্প্রদায়িক সংগঠন বলে দাবিদার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাবস্থায় এমন ঘটনা দেশ ও জাতির জন্য ভয়ানক লজ্জাকর।
শারদীয় দুর্গাৎসবের শুভ বিজয়া পুণর্মিলনী উপলক্ষে সনাতন ধর্ম টেম্পলের উদ্যোগে ২৪ অক্টোবর শনিবার মন্ট্রিয়লের সেন্ট হেনরী স্কুল অডিটরিয়ামে শর্মিলা ধর ও শক্তিব্রত হালদার মানু’র নান্দনিক উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্থানীয় শিল্পীদের নৃত্যানুষ্ঠানের পাশাপাশি ছিলো অম্লান দত্তের পরিচালনায় রবী ঠাকুরের নাটক ‘মূল্য প্রাপ্তি’। এছাড়াও সা রে গা মা এর নন্দিত শিল্পী শুভংকর দেবনাথ, ঋষভ ধর ও গোপাল দাশের পরিবেশনায় ছিলো আকর্ষণীয় সঙ্গীতানুষ্ঠান।
অপরদিকে বাংলাদেশ হিন্দু মন্দিরের উদ্যোগেও শুক্র ও শনিবার ছিলো রকমারি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মল্লিকা পাল ও বর্না দে’র পরিচালনায় শনিবারের শুভ বিজয়া পুণর্মিলনী মন্দির ভবনে বিপুল সংখ্যাক প্রবাসীর উপস্থিতিতে রকমারি নান্দনিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি একাধারে তিন ঘন্টা সঙ্গীত পরিবেশন করেন শ্যামা রহমান। তিনি নিজে যেমন গানের সাথে নেচেছেন পাশাপাশি সঙ্গীত পিপাষুদেরকেও নাচিয়েছেন মুগ্ধ করেছেন শ্রোতাদর্শকদেরকে।