কমলগঞ্জে গ্রাম বাংলার ঐহিত্যবাহী পলো বাওয়া উৎসব শুরু
বিশ্বজিৎ রায়, কমলগঞ্জ থেকেঃ পুরোদমে শুষ্ক মৌসুম শুরু হতে না হতেই মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকার নদী, হাওর, বিলসহ বিভিন্ন জলাশয়ে শুরু হয়েছে বাওয়া উৎসব। প্রতিবছর এই সময়ে জেলার বিভিন্ন এলাকার সৌখিন মৎস্য শিকারীরা দল বেধেঁ উৎসব মুখর পরিবেশে অংশ নেন বাওয়া প্রতিযোগীতায় ।
বাওয়া উৎসব হলো দল বেধেঁ মাছ ধরার উৎসব। শরতের শেষ দিকে যখন বিভিন্ন জলাশয়ের পানি যখন কমতে শুরু করে তখন থেকেই শুরু হয় উৎসবের প্রস্তুতি। বিশেষত হাওর এলাকায় এই উৎসব বিশাল আকারে হয় ।সেসব এলাকায় গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের নিয়ে গঠিত কমিটির লোকজন সংশ্লিষ্ট জলাশয়ের পানি কমছে কিনা তা সরেজমিনে পরীক্ষা করে দেখার পর উৎসবের দিনক্ষন নির্ধারন করা হয়। এর আগে কাউকেই সেই জলাশয়ে মাছ ধরতে দেয়া হয় না । বাওয়া উৎসব উদ্ভোধনের পর থেকে যে কেউ এইসব জলাশয়ে অবাধে মাছ ধরতে পারে। বাওয়ার দিনক্ষণ নির্ধারনের পর তা বিভিন্ন হাট বাজারে মাইকিং করে কিংবা ঢোল পিঠিয়ে উৎসবের প্রচার করা হয়। বাওয়ার ঘোষনা শুনার পর আগ্রহী শিকারীরা বাঁশের তৈরী পলো ,ক্ষেতজাল, টাকজাল, ধর্মজাল, টায়াজাল, বেড়জাল ,কোচ,টেঁটাপ্রভৃতি নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করেন।দূর-দূরান্তের শিকারীরা নির্ধাারিত দিনের ১দিন আগে থেকেই নদী/হাওর পাড়ের বাসিন্দা/ আত্মীয়দের বাড়ীতে আশ্রয় নেন। এ উপলক্ষ্যে মেহমানদারীর জন্য বিশেষ রান্না-বান্নার ব্যাবস্থাও করা হয়। তৈরী করা হয় হরেক রকমের পিঠা ।অনেকেই আবার চিড়া-গুড়,মুড়ি, পিঠা-পুলিসহ নানা ধরনের শুকনো খাবার নিয়ে বাওয়ার সংশ্লিষ্ট নদী বিল জলাশয়ের নিকটবর্তী স্কুল ,মাদ্রাসা অথবা আশেপাশের বাড়ীতে এসে রাত কাটান।
পর্যায়ক্রমে একেক জলাশয়ে একেক দিন এই বাওয়া উৎসব অনুষ্টিত হয়। মাসব্যাপী এই উৎসবে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ট্রেন ,বাস, মোটর সাইকেল ,বাই সাইকেল ও ভ্যানে করে এসে মাছ শিকারে অংশ নেন।
গত ২৫শে অক্টোবর রবিবার মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় শুভসূচনা হয়েছে মাসব্যাপী এই উৎসবের। প্রথম দিনে উপজেলা সদরের ধলাই নদীতে সকাল ১০ টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলে এই বাওয়া উৎসব। মাসব্যাপী এই উৎসবের পর্যায়ক্রমে একেক জলাশয়ে একেক দিন এই বাওয়া অনুষ্টিত হবে।
এ ব্যাপারে আলাপকালে কমলগঞ্জের প্রবীন মাছ শিকারী মোঃ ইসহাক মিয়া জানান, দিন দিনই পরিবেশ ও আবহাওয়ার প্রতিকূলতার কারনে নদী-নালা , খাল-বিল ,হাওরের তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ার কারনে পানি হ্রাস এবং অধিকাংশ জলাশয় ইজারা দেওয়ায় বাওয়া উৎসব এখন অনেকটাই ভাটা পড়েছে। মাছ ধরা নিয়ে তখনকার দিনে মারামারি এমনকি খুন খারাবীর ঘটনাও ঘটতো । এখন আর তেমনটি শুনা যায়না । আভাব অনাটন ক্রমশ গ্রাস করে ফেলছে চিরাচরিত এই গ্রামীন উৎসবের অতীত ঐতিহ্যকে। তার মতে প্রাচীন এই উৎসবকে টিকিয়ে রাখতে সর্বমহলের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। বাঙালীর হাজার বছরের এই ঐতিহ্যটি টিকে থাকুক হাজার বছর ধরে এটাই আজকের দিনের প্রত্যাশা।