বিদেশিরা যেভাবে বাংলাদেশ থেকে টাকা নিয়ে যাচ্ছে
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ বাংলাদেশে কত বিদেশি বসবাস করছে তার কোনো সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান সরকারের কাছে নেই। সাম্প্রতিক সময় ইতালি ও জাপানের দু’জন নাগরিক নির্মমভাবে খুন হওয়ার পর এ বিষয়টি আবারো সামনে চলে এসেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে বসবাস করছে এমন বিদেশিদের সংখ্যা দুই লাখের কম হবে না। এসব বিদেশি প্রায় সবাই বৈধভাবে এ দেশে এসেছেন। তবে তারা যে এখনো বৈধভাবে এখানে থাকছেন তা কিন্তু বলা যাবে না।
বিদেশিদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে এখানে এসেছেন। এই পারমিট নেয়ার জন্য বিনিয়োগ বোর্ড ও বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। দুই বা তিন বছরের জন্য ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে বিদেশি নাগরিক এখানে এলেও অনেকে আবার মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও নানা ঝুটঝামেলার কারণে তা আর নবায়ন করেন না। অনেকটা অবৈধভাবে তারা এখানে থেকে যান।
জানা গেছে, বিদেশিদের মধ্যে অনেকে পর্যটন ভিসায় এখানে আসেন। পরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ নিয়ে অবৈধভাবে অবস্থান করেন। কোনো কোনো বিদেশি ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে এখানে এসে নির্দিষ্ট সময়ের পরও কাজ করে যান। তারা এই কাজটি অনেকটা কর্তৃপক্ষের নাকের ডগার ওপর দিয়ে করেন। এখানে টাকা-পয়সার লেনদেন চলে বলে মোটা দাগের অভিযোগ রয়েছে।
এত বিপুলসংখ্যক বিদেশি এখানে করেন কী? এই প্রশ্নটি মাথায় আসাই স্বাভাবিক। এসব বিদেশি এখানকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তাদের বেশির ভাগই রয়েছেন তৈরী পোশাক শিল্পে। মূলত কারিগরি পরামর্শক হিসেবে তারা কাজ করেন। একই সাথে বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন ফার্ম ও বিদু্যুৎকেন্দ্রেও বিদেশি রয়েছেন। বিভিন্ন সেতু ও অবকাঠামো খাতেও তারা কাজ করছেন। যেখানে বাংলাদেশের দক্ষ লোকের অভাব রয়েছে মূলত সেখানে বিদেশিদের দ্বারা তা পূরণ করা হচ্ছে। এতক্ষণ এ কথা বলার অর্থ হচ্ছে এসব বিদেশি কিন্তু বছর শেষে একটি মোটা অঙ্কের অর্থ তার নিজ দেশে নিয়ে যাচ্ছেন। এই অঙ্কটি কিন্তু বেশ বড় ধরনের। তাদের আয় বাবদ প্রতি বছর দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে ৩১ হাজার কোটি টাকার বেশি। হ্যাঁ, এই অঙ্কটি কিন্তু ৩১ হাজার কোটি টাকারও বেশি। আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) আকার যদি হয় ৮০ হাজার কোটি টাকা হয় তাহলে বিদেশি নিয়ে যাওয়া এই পরিমাণ অর্থ মোট এডিপির অর্ধেকের কিছুটা কম বলা যায়।
বিদেশিদের নিয়ে যাওয়া অর্থের এই অঙ্কটি কিন্তু সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী দিয়েছেন। তিনি হচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গত সেপ্টেম্বর মাসে ‘স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম’ শীর্ষক দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করে তিনি অনেকটা হতাশা নিয়ে এ তথ্যটি জানান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে বিভিন্ন কাজে বিদেশিরা সহায়তা করেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য তারা এ দেশে কাজ করেন। এসব বিদেশি বেতন ভাতা বাবদ প্রতি বছর ৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাঠান। অর্থাৎ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। তা পূরণ করছেন বিদেশিরা। এ জন্য আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানের দিকে চোখ বুলালে আমরা দেখতে পারি প্রতি বছর দেশ থেকে বিপুল অর্থ বাইরে চলে যাচ্ছে। ব্যালেন্স অব পেমেন্ট বা লেনদেনের ভারসাম্যের পরিসংখ্যানে বলছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরেই দেশের বাইরে চলে যাওয়া অর্থের পরিমাণ ৪ বিলিয়ন ডলার (৩১ হাজার ২০০ কোটি টাকা) ছাড়িয়ে গেছে। এ বছর দেশের বাইরে চলে যাওয়া অর্থের মোট পরিমাণ ছিল ৪১০ কোটি ৫০ লাখ ১৬ হাজার মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশের নিয়ম অনুযায়ী যেকোনো দেশের মানুষ এখানে এসে কাজ করতে পারেন। দেশভেদে নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে তাদের। বিনিয়োগ বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী মূল বেতনের সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ দেশের বাইরে নিয়ে যেতে পারেন বিদেশিরা। তবে সঞ্চয় ও অবসর ভাতার শতভাগই নিয়ে যেতে পারেন তারা।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলেছেন, জিডিপির তুলনায় বিদেশিদের নিয়ে যাওয়া এই অর্থের পরিমাণ খুব বেশি নয়। কিন্তু এ নিয়ে চিন্তা করার সময় এখন এসেছে। কারণ বিদেশিদের নিয়ে যাওয়া অর্থের পরিমাণ যদি প্রতি বছরই বাড়তে থাকে, তবে লেনদেনের ভারসাম্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ ডলারের মাধ্যমে বিদেশিদের অর্থ বাইরে চলে যাচ্ছে। আমাদের উচিত হবে এ বিষয়ে সতর্ক থাকা। সূত্র: নয়াদিগন্ত