মারামারি-ভাঙ্গাভাঙ্গি বাদ দিয়ে একসাথে কাজ করতে হবে : ড. মোমেন
মাঈনুল ইসলাম নাসিম : খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানী নিরাপত্তা, অভিবাসন ও উন্নয়ন, প্রযুক্তি, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, শিল্পায়ণ ও কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়ণ, স্বাস্থ্যসেবা, মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা এবং জলবায়ু পরিবর্তন জণিত প্রভাব সহ যেসব চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশ মোকাবেলা করছে, জাতিসংঘে কার্যকর ভূমিকা পালনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ তার এই সবগুলি চ্যালেঞ্জই গ্লোবাল চ্যালেঞ্জের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে এবং এতে করে বাংলাদেশের ইস্যুগুলো এখন গ্লোবাল ইস্যুতে পরিণত হয়েছে, এমনটাই জানিয়েছেন গত ৬ বছর জাতিসংঘে দায়িত্বপালনকারী বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত প্রফেসর ড. এ কে আবদুল মোমেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের অর্জন নিয়ে এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলছিলেন তিনি।
জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষমাত্রা (এমডিজি – মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল) বাংলাদেশ সাফল্যের সাথে পূরণ করতে পেরেছে এবং এবছর সদ্যসমাপ্ত ৭০তম অধিবেশনে ১৭টি গোল (অভীষ্ট) এবং ১৬৯টি টার্গেট (লক্ষ্য) সমৃদ্ধ যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি – সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) নির্ধারিত হয়েছে, সেটা অর্জনেও বাংলাদেশ বদ্ধপরিকর বলে জানান রাষ্ট্রদূত ড. মোমেন। একান্ত আলাপচারিতায় তিনি বলেন, “গত ২ বছর জাতিসংঘে আমরা অনেক কঠোর পরিশ্রম করেছি, যা বাইরের লোকজন জানে না। দেশে সম্পাদিত উন্নয়ন কর্মকান্ড এবং সেটাকে যথাযথভাবে জাতিসংঘে তুলে ধরা হয়েছে বলেই বাংলাদেশের বর্তমান লিডারশিপের প্রতি আন্তর্জাতিক সমাজের আস্থা রয়েছে”।
রাষ্ট্রদূত প্রফেসর ড. এ কে আবদুল মোমেন আরো বলেন, “বিশ্ব সম্প্রদায় এখন জানে, বাংলাদেশ যেটা হাতে নেয় সেটা যথাসময়ে যথাযথভাবে ডেলিভারও করতে পারে। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেটা সবাই অনুধাবন করছে তা হচ্ছে, বিশ্বের সবাইকে নিয়ে একসাথে একযোগে যে কোন কাজ করতে পারে বাংলাদেশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২টি বড় চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। একটা হচ্ছে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ, আরেকটা হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সফল হতে হলে মারামারি-ভাঙ্গাভাঙ্গি বাদ দিয়ে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে”।
বোস্টনের ফ্রেমিংহাম স্টেট ইউনিভার্সিটির বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন এন্ড ইকোনমিক্স ডিপার্টমেন্টের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোমেন আনন্দের সাথে জানান, “গ্লোবাল কমিউনিটি এখন আমাদেরকে রিকোগনাইজ করছে। গত ৬ বছরে ইন্টারন্যাশনাল বিভিন্ন বডিতে যে কয়টাতে আমরা দাড়িয়েছি, কোথাও হারিনি। আগামীতে যিনি স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এখানে দায়িত্বে আসবেন, তাঁকে বেশ প্রো-অ্যাকটিভ হবার পাশাপাশি কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। গ্লোবাল পলিটিক্স তাঁকে সঠিকভাবে বুঝতে হবে, দুনিয়ার যে পাওয়ার স্টাকচার সে সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান থাকতে হবে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ইন্ডিয়া, আশপাশের বড় দেশ চায়না, পুরনো বন্ধু রাশিয়া, সারা দুনিয়ার ‘মাতব্বর’ বন্ধু ইউএসএ, সেই সাথে ইউকে এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এমনকি আমাদের জন্য ইমপর্টেন্ট কান্ট্রি সৌদি আরবের সাথে ‘গিভ এন্ড টেক’ সম্পর্ক ধরে রাখতে হবে দক্ষতার সাথে”।
উল্লেখ্য, জাপানে বিগত কয়েক বছর রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বপালনকারী মেধাবী কূটনীতিক মাসুদ বিন মোমেনকে ইতিমধ্যে জাতিসংঘে স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। অন্যদিকে আরো বড় দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে নিউইয়র্ক থেকে চলতি অক্টোবরের শেষান্তে ঢাকায় ফিরছেন রাষ্ট্রদূত প্রফেসর ড. এ কে আবদুল মোমেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহ ও আন্তরিকতার ফসল হিসেবে তিনি তাঁর ৩৬ বছরের সুদীর্ঘ প্রবাস জীবনের অবসান ঘটাতে চলেছেন। বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীকে অন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে প্রফেসর ড. মোমেনের ‘ডায়নামিক’ ক্যাপাসিটিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজে লাগাতে চান স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী, নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো এমনটাই জানিয়েছে। নিউইয়র্কের ইউএন সেক্রেটারিয়েটও তাই বিষয়টিকে পজিটিভলি দেখছে।