গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিতেই ঢাকায় ফিরছেন সিলেটের মোমেন
মাঈনুল ইসলাম নাসিম : বোস্টনের ফ্রেমিংহাম স্টেট ইউনিভার্সিটির বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন এন্ড ইকোনমিক্স ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যানের প্রেস্টিজিয়াস চাকরি থেকে ছুটি নিয়ে ২০০৯ সালে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি (রাষ্ট্রদূত) হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন প্রফেসর ড. এ কে আবদুল মোমেন। প্রভাবশালী বহু মার্কিন কংগ্রেসম্যান এবং সিনেটরদের সাথে আগে থেকেই ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ থাকা স্বনামধন্য এই অর্থনীতিবিদ ৬ বছর আগে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগটি পেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত আগ্রহে। সফলভাবে দায়িত্বপালনের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাতেই আরো বড় দায়িত্ব নিতে এখন ঢাকায় ফিরছেন তিনি। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন ড. মোমেন, ঢাকা-লন্ডন-নিউইয়র্কের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো এমনটাই জানিয়েছে।
রাষ্ট্রদূত ড. এ কে আবদুল মোমেন এই প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় নিশ্চিত করেছেন চলতি অক্টোবরের শেষান্তে তাঁর ঢাকায় ফেরার বিষয়টি। উল্লেখ্য, গত ২৪ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সাথে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “তাঁকে বাংলাদেশে নিয়ে যাচ্ছি দেশের জন্যে আরো বেশি কাজ করার জন্যে”। প্রফেসর মোমেনকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে, নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে এমন সংবাদ প্রকাশিত হয় তার ক’দিন পরই। “ঠিক পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়েরই দায়িত্ব নিচ্ছেন কি-না”?- এই প্রতিবেদক জানতে চাইলে সরাসরি কোন জবাব দেননি জাতিসংঘে গত ৬ বছর দক্ষতার সাথে বাংলাদেশকে মেলে ধরা এই মেধাবী ব্যক্তিত্ব।
রাষ্ট্রদূত ড. এ কে আবদুল মোমেন তাঁর স্বভাবসুলভ স্টাইলে খোলামেলা কথা বলেন এই প্রতিবেদকের সাথে। বললেন, “দেখুন আমি কিন্তু কূটনীতিক বা ডিপ্লোম্যাট নই, আমি হলাম সাদামাটা সাধারণ লোক, প্লেইন ম্যান এন্ড সিম্পল লিভিং। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৬ বছর আগে আমাকে সুযোগ দিয়েছিলেন কাজ করার এবং চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় আমি সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক ছিলেন বলেই বিগত দিনে দেশেও প্রচুর কাজ হয়েছে, বিশেষ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যথাযথভাবে কাজ করেছে বলেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জাতিসংঘেও আমরা সফল হয়েছি। বাংলাদেশ এগিয়ে গিয়েছে, জাতিসংঘে গত কয়েক বছরে আমাদের সব অর্জন তারই প্রতিফলন”।
“প্রধানমন্ত্রী যেহেতু আপনাকে দেশে নিয়ে যাচ্ছেন তাই নতুন গুরুদায়িত্ব পেলে সেটাকে কিভাবে নেবেন”?-জানতে চাইলে প্রফেসর মোমেন আস্থার সাথে বলেন, “বহু বছর পর দেশে ফিরছি এবং ফেরার পর কোন বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হলে কতটা সফল হবো সেটা নির্ভর করছে উপরওয়ালার ওপর। আমার এফোর্ট থাকবে, দায়িত্ব পালনে যথাসাধ্য চেষ্টা করবো। আমি গনতন্ত্রে বিশ্বাস করি, আমি মনে করি অনেকের অভিমত একজনের ব্যক্তিগত মতামত ধেকে উত্তম। টিমওয়ার্কে সবচাইতে বেশি আস্থা আমার”। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ‘সমন্বয়হীনতা’ দূর করতে কিভাবে কাজ করবেন জানতে চাইলে দীর্ঘদিনের প্রবাসী বাংলাদেশী ড. মোমেন বলেন, “সমন্বয়হীনতা যদি থাকে তবে কেন এবং কোথায় আছে সেটা সঠিকভাবে আমার জানা নেই। তবে আমি মনে করি উভয় মন্ত্রণালয়ের উচিত নিবিড়ভাবে একযোগে কাজ করা”।
প্রসঙ্গতঃ ৩৬ বছর আগে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন বাংলাদেশের কৃতি সন্তান আবুলকালাম আবদুল মোমেন। পড়াশোনা শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রেরই বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরের পর বছর অধ্যাপনায় নিয়োজিত ছিলেন তিনি। কাজ করেছেন বিশ্বব্যাংকেও, প্রতিনিধিত্ব করেছেন বহু আন্তর্জাতিক সংস্থায়। ব্যক্তিগত জীবনে সৎ ও নিরহংকারী ‘সুপার হাই-প্রোফাইল’ এই মানুষটি বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে সৌদি সরকারের অর্থ মন্ত্রনালয়ের এডভাইজর হিসেবেও কর্মরত ছিলেন কয়েক বছর। ঐ সময় মধ্যপ্রাচ্যে নির্যাতিত বাংলাদেশীদের হয়ে কাজ করায় অশুভ শক্তি কর্তৃক প্রাণনাশেরও হুমকি দেয়া হয়েছিল প্রফেসর মোমেনকে। আজকের প্রেক্ষাপটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে জিএসপি সুবিধা ফেরত পাওয়া সহ সৌদি আরবের সাথে সত্যিকারের সুসম্পর্কে ফিরে যেতে ড. এ কে আবদুল মোমেনকেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ‘ডায়নামিক’ মনে করছেন বিশ্লেষকরা।